ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

জেলা বিএনপির নতুন কমিটি অনুমোদন,ঠাঁই পাননি সাবেক সাংসদ আলমগীর, ইঞ্জিনিয়ার শহীদুজ্জামান

মনতোষ বেদজ্ঞ :
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কক্সবাজার জেলা শাখার ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল দলটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কমিটি অনুমোদন দেন। এতে পুনরায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন যথাক্রমে বর্তমান সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না। কমিটিতে ঠাঁই হয়নি মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক সাংসদ আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ ও কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার শহীদুজ্জামানের। জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রমতে, ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটিতে ৮ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ রাখা হয়েছে। এতে সম্মানিত সদস্য হিসেবে রয়েছেন, ভারতের শিলংয়ে অবস্থানরত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দীন আহমেদ, বিএনপির কেন্দ্রিয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাবেক সাংসদ লুৎফুর রহমান কাজল ও চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমদ। পুনরায় সাংগঠিক সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী। এছাড়াও দপ্তর সম্পাদক পদে ইউসুফ বদরী এবং প্রচার সম্পাদক পদে প্রফেসর আকতার চৌধুরীকে বহাল রাখা হয়েছে। নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে ১২১ জনকে।
জেলা বিএনপির কমিটি নতুন কমিটি অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘দলের সক্রিয় ও ত্যাগী নেতাকর্মীরাই নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। নিস্ক্রিয় কাউকে এ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাবেক সাংসদ আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ বিএনপি থেকে বহিস্কৃত হওয়ায় তাকে নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারনে ঠাঁই পাননি ইঞ্জিনিয়ার শহীদুজ্জামান।’
নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শহীদুজ্জামান একজন সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত। তাই তাকে কমিটিতে রাখা হয়নি। তাছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে নিস্ক্রিয় রয়েছেন।
শীর্ষ কয়েকজন নেতা দাবী করেছেন, কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ শীর্ষ কয়েকটি পদে পুরনোরাই বহাল থাকলেও বাকি পদগুলোতে দলের যোগ্য ও প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পুরনোদের পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন মুখও কমিটিতে স্থান পেয়েছে। কমিটি পুনর্গঠনে আগামী নির্বাচনে আসনভিত্তিক সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী ও তৃণমূল নেতাদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তবে ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটিতে কারা স্থান পেয়েছে তাদের সকলের নাম তাৎক্ষনিকভাবে প্রকাশ করতে রাজি হননি শীর্ষ নেতাদের কেউ। আজই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে সম্ভাব্য আন্দোলনকে বিবেচনায় রেখে চলমান পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজার জেলা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হলো।
নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দলের সাংগঠনিক ভিত মজবুত, তৃণমূলের ঐক্য অটুট, গতিশীল নেতৃত্ব বাছাই ও কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা রাখতে বিগত ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানকে। কিন্তু নানা কারণে বারবার পিছিয়েছে সময়সীমা। গত ১২ এপ্রিল কক্সবাজারের একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সম্মেলনে দ্রুত জেলা বিনএপির নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে নির্দেশনা দেন কেন্দ্রিয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার জন্য সারাদেশে গঠিত ৫১টি সাংগঠিনক টিমের মধ্যে কক্সবাজার জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক টিমের প্রধান মীর নাসির। এর প্রেক্ষিতে গত রমজানের আগে জেলা থেকে নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরী করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কক্সবাজারে কর্মী সভা করেন। ওই সভায় নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণে উখিয়া সফরে যাওয়া-আসার পথে ফেনীতে দুই দফা হামলার শিকার হয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এ ঘটনার পর দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় জোর দেয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তাগিদ দেন খালেদা জিয়া।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ গত ২০০৯ সালের ২০ নভেম্বর কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রিয় নেত্রী সেলিমা রহমান সভাপতি পদে শাহজাহান চৌধুরী ও ও সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্নার নাম ঘোষনা করেন। দৈনিক কক্সবাজার।

পাঠকের মতামত: