ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

জেলা প্রশাসক আলী হোসেনকে মনে রাখবে কক্সবাজারবাসী

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার :
কক্সবাজারের ২২তম জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. কামাল হোসেন। গতকাল রোবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক আদেশে কক্সবাজার তাঁকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তার নিয়োগের সাথে কক্সবাজার থেকে বিদায় নিচ্ছেন ২১ তম জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। তাঁর পদোন্নতিজনিত কারণে নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজারের সাধারণ লোকজনের ভাষ্য, কক্সবাজারের ইতিহাসে যে ২১জন জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেছেন তার মধ্যে দুই অথবা তিনজন ছিলেন ব্যতিক্রম। তারা নিজেদের কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও জনসাধারণের সমস্যা লাঘব করেই এই ব্যতিক্রমী কাতারে সামিল হয়েছিলেন। ওই দুই অথবা তিনজনের একজন হলেন বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। তিনি তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও জনসাধারণের সমস্যা লাঘব করেই কক্সবাজারের মানুষের হৃদয়ে এক শক্ত স্থান করে নিয়েছেন। তিনি যোগ্যতা বলে কক্সবাজারের চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা ও দেশের শীর্ষ মেগা প্রকল্প মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজে এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। তাই গত বছরের ২১ ডিসেম্বর তাঁর বদলী খবরে পুরো জেলাজুড়ে মানুষের মাঝে এক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁর বদলীতে আফসোস করেছে কক্সবাজারের মানুষ। এবার শেষ বিদায়ে কক্সবাজারের মানুষ আরেকবার একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান জেলা প্রশাসকের জন্য শূন্যতায় পর্যবসিত হলো।

জানা গেছে, এক সংকটময় সময়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক হিসেবে ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন মো. আলী হোসেন। তিনি কক্সবাজারের ২১তম জেলা প্রশাসক। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এক হাজার ৪১৪ একর জমির অধিগ্রহণ নিয়ে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছিল। ২৩ কোটি টাকার সেই কেলেঙ্কারিতে সরাসরি জড়িত ছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমসহ আরো বেশ কজন সরকারি কর্মচারী। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দ্রুত তদন্তে নামে। বর্তমানে এসব সরকারি কর্মকর্তা দুদুকের মামলার আসামি।

জাপানি উন্নয়ন সংস্থা-জাইকার ৪০ হাজার কোটি টাকার অর্থ সহযোগিতায় দেশের সবচেয়ে বড় একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে এ রকম বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও নাড়া দেয়। সরকারের নীতি নির্ধারক মহলও চিন্তিত হয়ে পড়ে পদ্মাসেতুর মতো ব্যাপক সমালোচনার ভয়ে।

এ সময় কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম স্থাপন, রেললাইন, রামু সেনানিবাস, মহেশখালী দ্বীপে একে একে ৫টি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জমি অধিগ্রহণ, খুরুশকুলের বিশেষ আশ্রায়ণ প্রকল্প, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজসহ প্রায় দুই ডজন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল। প্রকল্পগুলোর সবই প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকাভুক্ত।

কক্সবাজারে জনশ্রুতি রয়েছে, মাতারবাড়ীর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর সরকারের শীর্ষ মহলে একজন ‘সৎ’ সরকারি কর্মকর্তার বড় প্রয়োজন দেখা দেয়। এ সময় সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হয়ে পড়ে কক্সবাজারের বাস্তবায়নাধীন প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সৎ এবং একজন দক্ষতা সম্পন্ন জেলা প্রশাসকের।

সেই সময় খোদ প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বেশ কয়েকজন সচিবকে ডেকে নিয়ে কক্সবাজার জেলার জন্য একজন জেলা প্রশাসক বাছাই করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আলী হোসেনকে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দায়িত্ব পালনকালে কক্সবাজার জেলার একে একে সব মেগাপ্রকল্পের উন্নয়নকাজ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি পরিচালনা করেন। সাগর পাড়ের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পসহ বেশ কিছু মেগাপ্রকল্পের কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি আলোচিত মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকার চেক জেলা প্রশাসক নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে বিতরণ করার নজির স্থাপন করেন। সেই সাথে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা দুর্নীতি ও দালালমুক্ত করেন। এক সময় জমির একটি খতিয়ান সৃজনে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হত। সেই দুর্নীতির ঘটনাও বর্তমান জেলা প্রশাসক আসার পর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুও মতো আন্তর্জাতিক সমস্যাকে অত্যন্ত দক্ষ হাতে সামাল দিয়ে এসেছেন।

জেলার সচেন মহল বলছেন, সৎ, কর্মপাগল ও দক্ষ জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন কক্সবাজারকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তিনি দেশে আমলাতন্ত্রের যে কুপ্রভাব তা থেকে অনেকটা কক্সবাজারের সাধারণ জনগণ মুক্তি দিয়েছিলেন। তার সময়ে অনেক অতি সাধারণ ভুক্তভোগী তাদের সমস্যার সমাধান পেয়েছেন- যা অতীতে সহজে পাওয়া যায়নি। এসব আন্তরিক কর্মস্পৃহার কারণে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন কক্সবাজারবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন নিশ্চিত!

Share

Tweet

+1

পাঠকের মতামত: