মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার ::
# চাহিদা ১ লাখ ৩৬ হাজার, মজুদ আছে ১ লাখ ৪৮ হাজার
# দেশীয় গরু কেনার আহবান প্রাণী সম্পদ দপ্তরের
কক্সবাজারে চলতি বছর কোরবানীর পশুর চাহিদা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৭। আর জেলার বিভিন্ন খামার এবং ব্যক্তি পর্যায়ে গরু মজুদ আছে ১ লাখ ৪৮ হাজার। সে হিসাবে জেলায় ১১ হাজারের বেশি গরু উদ্বৃত্ত আছে। তাই জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের দাবী কোরবানীর জন্য জেলায় পশুর সংকট হবেনা। এমনকি সারা দেশে ১ কোটি পশু উদ্বৃত্ত আছে তাই বিদেশ থেকে গরু না আসলেও কোন অসুবিধা হবে না। বরং দেশিয় খামারীরা লাভবান হবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১০ জুলাই কোরবানীর ঈদ। আর কোরবানীর ঈদের প্রধান উপকরণ হচ্ছে গরু। ইতোমধ্যে গরু নিয়ে জেলার বিভিন্ন মহলে নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। কারো মতে দেশিয় গরু নিয়ে কোরাবানীর চাহিদা পূরণ হবেনা। আর হলেও অনেক বেশি দাম দিয়ে গরু কিনতে হবে। আবার কারো মতে দেশিয় খামারীরা সারা বছর বসে থাকে কোরবানীর সময়ের জন্য। একটি গরুকে সারা বছর যত্ন করে বড় করে কোরবানীর সময় কিছু লাভের আশায়। তাই বিদেশ থেকে গরু না এনে দেশিয় খামারীদের উৎসাহিত করা দরকার। তবে অনেক সময় গরু সংকটের আশংকায় কয়েক গুন বেশি দাম দিয়ে গরু কিনতে হয় কোরবানী দাতাদের।
কিন্তু এবার সেই আশংকাকে উড়িয়ে দিয়ে কক্সবাজারে গরুর কোন সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন জেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: জ্যের্তিময় ভৌমিক।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে এ বছর পশুর চাহিদা আছে প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার। কিন্তু তার বিপরীতে আমাদের পশু মজুদ আছে ১ লাখ ৪৮ হাজার। সে হিসাবে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পশু উদ্বৃত্ত আছে। এছাড়া এবার জেলায় ৫৫ টি গরু বাজার বসবে বলে জানা গেছে তার মধ্যে ২৭ টি মেডিকেল টিম কাজ করবে।
সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: অসীম বরণ সেন বলেন, খামারীরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে কোরাবানীর সময় আসলে কিছু লাভবান হওয়ার আশায়। কিন্তু অতীতে বিদেশ থেকে বেশি পরিমানে গরু আসায় বার বার দেশিয় খামারীরা লোকসানে পড়েছে। কিন্তু এবার সরকার উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিদেশ থেকে গরু আমদানী বন্ধ করেছে তাই আমি মনে করি দেশিয় খামারীরা কিছুটা লাভবান হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এড. আবু হায়দার ওসমানী বলেন, আমি মনে করি কোরাবানী হয় বছরে একবার তাই এখানে এত সস্তা খোঁজতে গিয়ে দেশিয় খামারীদের ক্ষতি করা ঠিক হবে না। আর বর্তমানে দেশে সব কিছুর দাম বাড়তি আমার পরিচিত অনেক গ্রামের মানুষ আছে তাদের কাছে শুনেছি গ্রামেও একটি গরু বড় করতে অনেক টাকা খরচ হয়।
তবে ভিন্ন মতও দেন ঘোনারপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি মনজুর আলম। তিনি বলেন, অনেক গরীব বা মধ্যবিত্ত মানুষ এক ভাগ বা ২ ভাগ কোরবানী করতে চায়। এখন একটি গরু লাখ টাকা দিয়ে কিনলে কিভাবে ভাগ দেবে। বর্তমানে বাজারে গেলেই লাখ টাকার নীচে ভাল গরু নাই। দেশিয় গরু ব্যবসায়িরা দাম ধরে বসে থাকে। যখন বিদেশ থেকে গরু আসতো তখন দেশিয় গরুর দামও কিছুটা কম থাকতো। আমি চাই দেশিয় খামারীরা লাভবান হউক কিন্তু অতিরিক্ত হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়ে যায় সেটাও তাদের মাথায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের তেমন কোন ভুমিকা আমরা দেখিনা। যেমন বাজারে তরিতরকারীর দাম বাড়লে প্রশাসন বাজার মনিটরিং করে কিন্তু কখনো গরুর দাম নির্ধারণ বা বাজার মনিটরিং করার কথা শুনিনি।
আলাপকালে পিএমখালী ইউনিয়নের ঘাটকুলিয়াপাড়ার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার ঘরে ৬ টি গরু আছে, তার মধ্যে ২ টি গরু বিক্রি করার জন্য কয়েক মাস ধরে অপেক্ষা করে আছি। সে জন্য গরুটাকে অনেক বাড়তি যত্ন বাড়তি খাবার সহ নানান ভাবে বিপুল টাকা খরচ হয়েছে। ৬ মাস আগেও গরুর খাদ্যের যে দাম ছিল বর্তমানে তার ৩ গুণ দাম দিয়ে খাদ্য কিনতে হচ্ছে। আসলে মানুষ যা মনে করে স্থানীয় কৃষক বা খামারীরা অনেক বেশি দাম নেয় এটা সত্য না। আমার জানা মতে যারা গরু ব্যবসায়ি আছে তারা এগুলো করে। যেমন আমার গরুটি বর্তমানে কয়েকজন ব্যবসায়ি দেখে গেছে তারা সর্বোচ্চ ৬৫ হাজার টাকা কিনতে চেয়েছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত তারা এই গরু কম পক্ষে ৭৫ বা ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করবে। তাই বাজারে তুলে প্রকৃত কোরাবানীকারীকে কম দামেই দেব কিন্তু কোন ব্যবসায়িকে দেব না।
এদিকে বেশ কয়েকজন খামারীর সাথেও কথা বলে জানা গেছে যদি সরকার বিদেশ থেকে গরু আনার অনুমতি দেয় তাহলে আমরা পথে বসবো।
পাঠকের মতামত: