ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

জেলার ১৭১ কমিউনিটি ক্লিনিক ২৫ দিন ধরে অচল

সোয়েব সাঈদ, রামু ::

রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের লামারপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক। যেখানে রোগী থাকার কথা সেখানে দেখা গেলো ক্লিনিকের ভেতরে সিমেন্ট আর রড এর স্তুপ। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে ২৫দিনেরও বেশী সময় ধরে চলছে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপি’দের আন্দোলন কর্মসূচি। একারনে এ কমিউনিটি ক্লিনেক সিএইচসিপির পরিবর্তে এফডব্লিউএ (পরিবার কল্যাণ সহকারি) দায়িত্ব পালন করলেও ক্লিনিকটির বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। সিএইচসিপির অনুপস্থিতিতে ক্লিনিক পরিনত হয়েছে নির্মাণ সামগ্রীর গুদামে।

টানা আন্দোলন-কর্মসূচির কারনে এভাবে অচল হয়ে পড়েছে কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলার ১৭১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক। সিএইচসিপির কর্মবিরতির ফাকে স্বাস্থ্য সহকারী/পরিবার কল্যান সহকারীকে এসব ক্লিনিকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু সেটা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। একারনে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে প্রতিদিন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে জেলার প্রান্তিক জনপদের হাজার হাজার মানুষ।

জানা গেছে, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে ২৫দিনেরও বেশী সময় ধরে চলছে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপি’দের আন্দোলন কর্মসূচি। কর্মসূচির আওতায় গত ২০-২২ জানুয়ারি উপজেলা পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচি, ২৩ জানুয়ারি জেলা পর্যায়ে, ২৪ জানুয়ারি স্ব-স্ব কমিউনিটি ক্লিনিকে এবং ২৫ জানুয়ারি থেকে ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে আমরন অনশন চলমান রয়েছে। মাঝখানে খালেদা জিয়ার রায় কে কেন্দ্র করে নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ৮-১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনশন স্থগিত ছিলো। ১০-১২ জানুয়ারির ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে আমরন অনশন কর্মসূচি চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ সিএইচসিপি কেন্দ্রীয় দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটি। বর্তমানে প্রেস ক্লাব চত্বরে বিভিন্ন সময় বিএনপির মিছিল মিটিং থাকায় পেশাজীবী সংগঠন এর নিরাপত্তার কথা চিন্তা কররে ১২ জানুয়ারি প্রেস ক্লাব ছেড়ে আমাদের প্রকল্প অফিস মহাখালীতে বিএমআরসি ভবনের সামনে আমরন অনশন চালিয়ে যাচ্ছে সিএইচসিপি’রা।

বাংলাদেশ সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশস কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি রফিকুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক এমকে মো. মিরাজ জানিয়েছেন, আন্দোলনরত সিএইচসিপি’রা তাদের চাকরি জাতীয়করণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার অপেক্ষায় রয়েছে। তারা আরো জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পক্ষে চাকুরী স্থায়ী ও কিছু সুযোগ সুবিধা প্রদানের কথা বলে অনশন ভাঙ্গার চেষ্টা করেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ ও প্রকল্প পরিচালক ডাঃ আবুল হাশেম খান। কিন্তু সাধারন সিএইচসিপির রাজস্ব করনের যে মূল দাবী আছে সেটি তাদের আশ্বাসে না থাকায় এখনও রাজপথে অনশন পালন করে যাচ্ছেন সিএইচসিপিরা।

আমরণ অনশনে থাকা সিএইচসিপি নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ গ্রামীন জনসাধারণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকল্পে প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠির জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করেছে। এসব ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদানের জন্য একজন করে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মী, সিএইচসিপি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এদেশে গ্রামীন স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের অবদান সর্বত্র প্রশংসনীয়। ২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকে দেশের ১৪ হাজার সিএইচসিপি নিয়োগ পায়। এরমধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ জন সিএইচসিপি মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান। ২০১৩ সালে চাকুরি রাজস্ব খাতে অর্ন্তভূক্ত করণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এখনো সে উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। সিএইচসিপিগণ শুরু থেকে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়ে আসছিলো। পরবর্তীতে দাবি পূরণ না হওয়ায় সিএইচসিপিরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রায় প্রদান করলেও এখনো সরকার বাস্তবায়ন করছে না। এ অবস্থায় সিএইচসিপিরা অবিলম্বে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। দাবি বাস্তবায়ন করা না হওয়ায় এ বৃহত্তর কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

আন্দোলনকারিদের এখন একটাই চাওয়া, প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন তারা তাই মেনে নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ^াস বা নির্দেশনা পেলে তারা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। উল্লেখ্য সিএইচসিপির অনুপস্থিতিতে দেশে গত ২৫ দিন বন্ধ ছিলো ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক।

পাঠকের মতামত: