আগামী ২৮ ডিসেম্বর দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৩ পার্বত্য জেলা ছাড়া ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে পোস্টার, ডিজিটাল ব্যানার টাঙ্গিয়ে পরোক্ষ ভোটের ভোটারদের মন জয়ে ব্যস্ত। তবে সাধারণ ভোটারদের মাঝে তেমন কোন উৎসাহ নেই। হাট-বাজার ও চা দোকানে জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোন আলাপ-আলোচনা শোনা যাচ্ছে না। কারণ এ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ নেই। এ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছে তাদেরও ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে না।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। মডেলটি বহু পুরানো। এ ভোটের প্রবর্তক ছিলেন, পাকিস্তানের এককালের দুর্দান্ত প্রতাপশালী স্বৈরাশাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খাঁন। এ মডেলের নির্বাচনকে ভোটকে মৌলিক গণতন্ত্র হিসেবে অবহিত করা হয়। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৫ বছর পরও পুরানো মডেলের মৌলিক গণতন্ত্র (বিডি) আবার চালু করছেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের ডিজিটাল যুগে। মৌলিক গণতন্ত্র (পরোক্ষ ভোট) দেয়ার সৌভাগ্য দেশের সিংহভাগ জনগণের হয়নি। যারা দিয়েছে এ ধরণের স্বল্পসংখ্যক ভোটার হয়তো এখনও ভাগ্যের জোরে বেঁচে আছে। এ ধরণের নির্বাচন সংবিধানের সাথে সাংঘার্ষিক হিসেবে উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে আইনী লড়াইও শুরু হয়েছে। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের রায় কি হয় তা নিয়ে আগাম মন্তব্য করা যথাযথ হবে না। বিষয়টি বিচারিক আদালতের এখতিয়ার। দেশের সাধারণ ভোটারেরা পুরানো মডেলের ভোট নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। বিগত সংসদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন বহু প্রশ্নবিদ্ধ। এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমজনতা ভোটাধিকার থেকে একেবারেই বঞ্চিত। তা নিয়ে বিজ্ঞ জনেরা বাজারে হাজার রকমের কথা-বার্তা বলছে। কিন্তু কার কথা কে শোনে? বেরসিক অনেক ভোটার মন্তব্য করতে শোনা গেছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় আমজনতার ভোটাধিকার বলতে কিছুই থাকবে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। একাধিকবার কারা বরণও করেছে। অতঃপর ৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলার দামাল ছেলেরা দেশ স্বাধীন করেছে। আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সুফল ভোগ করছি। দুভাগ্য গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে দেশের আমজনতা। বিষয়টি দেশের মানুষ সহজভাবে গ্রহণ করছে না। প্রবীণ এক ব্যক্তি জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দুঃখ করে বলতে শোনা গেছে, এক সময়ের সামরিক জান্তা পাকিস্তানের আইয়ুব খাঁন এ প্রথার প্রবর্তক। তিনি নেই কিন্তু সে প্রথায় জেলা পরিষদের নির্বাচন করতে যাচ্ছে গণতন্ত্রের যুগে। এ জান্তাকে গদীচ্যুত করতে এক সময় অবিভক্ত পাকিস্তানের মানুষ রাজ পথে আন্দোলন করেছে। এখন স্বাধীন দেশের নাগরিকরা আবারও সে সময়ের অচল ও পুরানো মডেলের নির্বাচন নতুন ভাবে দেখতে যাচ্ছে। যা আমজনতার জন্য অতি দুর্ভাগ্যজনক। কথা প্রসঙ্গে ওই ভদ্র লোক রসিকতার সুরে উপস্থিত সকলের কাছে জানতে চাইলেন, ‘কুকুর কখন সাবালক হয়?’ অনেকে জবাব দিয়েছে আমরা জানিনা। অপর একজন জবাব দিলেন, ‘কুকুর যখন পা তুলে প্রস্রাব করে তখন কুকুর সাবালক হয়।’ কুকুরের সাবালকের তথ্য শোনে মনে হল দেশের আমজনতা এখন নাবালক। আর তাদের ভোটে নির্বাচিতরা এখন সাবালক। এ নির্বাচনের কারণে জনপ্রতিনিধিদের চরিত্র ধ্বংস অনায়সে। অনেক প্রার্থী অঢেল টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে পরোক্ষ ভোটের ভোটার জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করতে। এবারের ৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রায় ৬৩ হাজার জনপ্রতিনিধি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। আবার ওইসব জনপ্রতিনিধিরাও ঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। সদ্য বিদায়ী জেলা পরিষদ প্রশাসকেরা ছিলেন, সরকার কর্তৃক মনোনিত। তা নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করে না। এখন পরোক্ষ ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করতে গিয়ে ভোটাধিকার বঞ্চিত আমজনতা চরম হতাশায়। সাবেক রাষ্ট্রপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হোছাইন মোহাম্মদ এরশাদের জামানায় এ পদে এমপিদের নিয়োগ দিয়েছিল। এছাড়া তার সময়ে ৩ পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সরাসরি জনগণের ভোটে জেলা পরিষদের নির্বাচন করেছিলেন। পরে ওই ৩ জেলাতেও আর কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এখনও সরকার মনোনিত প্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। তবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের ভোটও সরাসরি সব নাগরিকের ভোটে অনুষ্ঠিত হলে, গণতন্ত্রের বিজয় হত বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।
পাঠকের মতামত: