নিজস্ব প্রতিবেদক :: চালের বাজারেও ভর করেছে করোনাভাইরাস আতঙ্ক। সপ্তাহজুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে চালের বাজারে। আজ বৃহস্পতিবার বস্তাপ্রতি দুই শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এনিয়ে ৫ দিনের ব্যবধানে দুই ধাপে চালের দাম ৫শ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে, করোনোর চাপ পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারেও। ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন বাজারে। সেই সঙ্গে হু হু করে বাড়ছে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম। পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, চালের বাজারে সংকটের অজুহাতে দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। একই সঙ্গে তেল, ডাল, মরিচ, চিড়াসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে চালের দাম বেড়েছিল। সেই সময়ে বস্তাপ্রতি ২শ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছিল। চলতি সপ্তাহের শুরুতে হঠাৎ করে চালের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। বস্তাপ্রতি চারশ টাকা বেড়েছে। মিলার ও বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রামের চালের বড় পাইকারি মোকাম চাক্তাই ও পাহাড়তলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা আতপ চাল একদিনে একশ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬শ টাকা দরে। ৫দিনের ব্যবধানে গরিবের চাল বলে খ্যাত আতপ চাল বস্তাপ্রতি ৪ শ টাকারও বেশি বেড়েছে। অথচ গত নভেম্বরে তা ৯শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বেতি আতপ (আশুগঞ্জ আতপ) বিক্রি হচ্ছে ১৯শ থেকে দুই হাজার টাকা। একদিনে বেড়ে বস্তাপ্রতি দেড়শ টাকা। নভেম্বরে তা ১৭শ টাকা ছিল। মিনিকেট সিদ্ধ ১৮শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯শ থেকে দুই হাজার টাকা। এর আগে ছিল ১৫-১৬শ টাকা। মিনিকেট আতপ ১৯৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২১৫০ টাকা। কাটারি আতপ ২৪শ টাকা থেকে বেড়ে ২৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিদ্ধ (মোটা) ১৪শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬শ টাকায়। গত সপ্তাহে তা ১১শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। নভেম্বর-ডিসেম্বরে তা ৯শ টাকা। স্বর্ণা সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ১৮শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছিল ১৬শ টাকায়। আর নভেম্বর-ডিসেম্বরে ছিল ১৪শ টাকা। গুটি সিদ্ধ ১৬শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮শ টাকা। জিরাশাইল ২৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫শ টাকায়। গত সপ্তাহে তা ছিল ২১শ টাকা। নভেম্বরে ছিল ১৯৮০ টাকা। পাইজাম সিদ্ধ ১৬শ-১৬৫ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। নভেম্বরের ছিল ১৪শ টাকা।
একাধিক সূত্র জানায়, চাক্তাইয়ে ৮ জন এবং পাহাড়তলী বাজারে ৫ জন বড় ব্যবসায়ী ও মিল মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে চালের বাজার। ১৩ ব্যবসায়ী ও মিল মালিকের মজুত রয়েছে প্রচুর চাল। নগরীর পোর্ট মার্কেট, ঈশান মিস্ত্রির হাট, স্টিল মিল বাজার, এ কে খান গেট, সিটি গেট ও চাক্তাই-রাজাখালী এলাকায় অনেকের রয়েছে একাধিক বড় গুদাম। এসব গুদামে কয়েক হাজার বস্তা চাল মজুত রয়েছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। প্রচুর চাল মজুদ রেখে এখন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
চকরিয়া সদরের অর্ধশতাধিক মোদির দোকানদারের গুদামে হাজার হাজার চাল জমা থাকলেও করোনা আতংককে পুজি করে হঠাৎ বাড়িয়ে দিয়েছে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। চকরিয়া পৌরসদরের আশেপাশে অঘোষিতভাবে গজিয়ে উঠা অর্ধশতাধিক চাউলের গুদাম রয়েছে। এছাড়াও অটোরাইচমিল ঘিরেও রয়েছে অসংখ্য মজুদ চালের গুদাম। এসব গুদামে কম মুল্যে ক্রয় হাজার হাজার মেটন চাল মজুদ থাকলেও করোনা আতংককে পুজি করে চকরিয়া অসাধু চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রস্তা প্রতি ৫শত টাকা থেকে ৭শত টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে বলে একাধিক সুত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন বলেন, মিল মালিক ও মজুতদার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অহেতুক দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানায়, কুষ্টিয়া, নাটোর, নওগাঁ, নীলফামারী, বগুড়া, মহাদেবপুর, দিনাপজুরসহ উত্তরবঙ্গের বড় মিল মালিকেরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য চক্রান্ত করছে এই সিন্ডিকেট। অথচ প্রতিটি মিলে ও বড় ব্যবসায়ীদের গুদামে প্রচুর চাল মজুদ রয়েছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি আলহাজ জাফর আলম বলেন, এই মুহূর্তে সরকারের নজরদারি বাড়ানো এবং চালের গুদাম ও মিলে অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যবান্ধব ওএমএস কর্মসূচি চালু করার দাবি জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
নগরীর বড় পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, করোনোভাইরাস আতঙ্কের প্রভাব পড়েছে চাল ছাড়াও ভোগ্যপণ্যের বাজারে। মাসের ভোগ্যপণ্য যেন একসঙ্গে কেনায় ভোক্তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। সবকটি বাজার ও মুদি দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগে ছিল। ক্রেতাদের চাপে হু হু করে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দামও। পাইকারি ও খুচরা বাজারে সমানতালে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।
পাঠকের মতামত: