ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া :: চাকরি দেওয়ার নামে ‘সেইফ্ হেলথ প্রকল্প’র প্রতারণা: দুইদিন ধরে অফিসে ঝুলছে তালা
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ‘সেইফ্ হেলথ প্রকল্পে’ চাকরি দেওয়ার নামে কক্সবাজারের চকরিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে গতকাল শনিবার চকরিয়া নিউজ এ “চাকরি দেওয়ার নামে কক্সবাজারে টাকা হাতানোর ফাঁদ পেতেছে ‘সেইফ্ হেলথ প্রকল্প’” প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে চকরিয়া-পেকুয়াসহ পুরো জেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
প্রশাসনের চোখে ধুলে দিয়ে বড় ধরণের প্রতারকচক্র কর্তৃক মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপ নিয়োগ পরীক্ষাও কিভাবে সম্পন্ন করলো তা নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে সচেতন মহল। পাশাপাশি সংবাদটি ‘চকরিয়া নিউজ’ এ প্রকাশ হওয়ার পর শত শত মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটি শেয়ার করে সবাইকে সতর্কও করে চলেছেন প্রতারক চক্রের পাঁতা ফাঁদে না পড়তে।
কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমও ভুয়া প্রতিষ্ঠানের কথিত নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়টি আমার কক্সবাজারে ফলাও করে প্রকাশ করায় ধন্যবাদ জানান। এমপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এই বিষয়ে চকরিয়া-পেকুয়াসহ কক্সবাজার জেলার বেকার চাকরিপ্রার্থীদের সতর্ক করেছেন।
এমপি লিখেছেন, ‘সেইফ্ হেলথ প্রকল্পের নামে একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান এইচএএমএ ট্রেনিং ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) অনুমোদন ও স্বীকৃতি রয়েছে দাবি করে চকরিয়ায় স্বাস্থ্যকর্মী পদে নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির এই ধরণের কোন প্রকল্পের অনুমোদন নেই বলে জানতে পেরেছি। এসব প্রতারক থেকে সতর্ক থাকবেন। চাকরির জন্য আবেদনের আগে ভালো ভাবে প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে যাচাই করে নিবেন। সন্দেহ হলে প্রশাসনকে জানাবেন।’
টিআইবি চকরিয়ার সদস্য জিয়া উদ্দিন জিয়া বলেন, ‘বেসরকারী যে কোন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার পর তা যাচাই করে চাকরির আবেদন করা উচিত। কারণ এই ভুয়া প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে আবেদনের সাথে কয়েক হাজার প্রার্থীর কাছ থেকে ৩৫০ টাকা করে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘একইসাথে স্থানীয় প্রশাসনেরও উচিত, কোথায় এবং কিভাবে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারক চক্র মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের সহায়তায় প্রতারক চক্রটি নিয়োগ পরীক্ষার নামে প্রতারণার প্রথম ধাপ পার করেছেন। তবে এনিয়ে আমার কক্সবাজারের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়াতে বড় ধরণের প্রতারণার শিকার থেকে বেঁচে গেছেন কক্সবাজারের ৮ উপজেলার অন্তত পাঁচ হাজার বেকার চাকরিপ্রার্থী নারী-পুরুষ। অনেকেই ভুয়া প্রতিষ্ঠানটিকে আসল প্রতিষ্ঠান মনে করে চাকরির আশায় ব্যক্তিগতভাবে মোটা অংকের টাকা লেনলেন করে ফেলেছেন। এখন তাদের মাথায় হাত উঠেছে, কপাল চাপড়াচ্ছেন তারা।’
এদিকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানটির চকরিয়া থানা সেন্টার এলাকায় বহুতল ভবনের নিচতলায় নেওয়া কার্যালয়ে ্আজও তালা ঝুলতে দেখা গেছে। নাম ও সাইনবোর্ড ছাড়া এই কার্যালয়ের মূল দরজা গত দুইদিন ধরে খোলা হয়নি বলে জানিয়েছেন ভবনের অন্য ফ্লাটের সদস্যরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ভুয়া প্রতিষ্ঠানটির কক্সবাজার জেলা ব্যবস্থাপক ও কথিত ডাক্তার দেলোয়ার হোসেন রুবেল দাবি করেন, তাকে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডা. মনিরুল আলম মাসিক ৩০ হাজার টাকা বেতনে মৌখিক চুক্তিতে এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছেন। আমাকে দিয়ে একটি অফিসও নিয়েছেন। কিন্তু অফিস নেওয়ার জন্য কোন টাকা দেননি। দুইমাস পার হলেও বেতন পেয়েছেন মাত্র একমাসের। আরেক মাসের বেতন ১০ তারিখে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো পাননি।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান যে ভুয়া তা আমি জানতাম-ই না। আমি এখনো কারো সাথে আর্থিক লেনদেনে জড়াইনি। তবে চেয়ারম্যান মনিরুল আলমের সাথে এখানকার প্রাইভেট হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারের যোগাযোগ রয়েছে। তাদের মাধ্যমে কারো কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে আমিও শুনেছি। এ ব্যাপারে আমি নিজে আইনগত প্রতিকার চাইবো।’
জেলা ব্যবস্থাপক দেলোয়ার প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র গণমাধ্যমকে দিয়েছেন। তবে সেসব কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সীল এবং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরও জাল করে কিছু ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করা হয়েছে। যাতে সাধারণ চাকরি প্রার্থীর মাঝে বিশ্বাস জন্মানো যায়। আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জয়েন্ট স্টক কম্পানীর নামেও ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করা হয়। সেগুলোও সংরক্ষিত আছে।
বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হোসেন। তিনি গতকাল চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমি দুইদিনের প্রশিক্ষণে ঢাকায় অবস্থান করছি। প্রশিক্ষণ শেষে স্টেশনে গিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য-চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ গত ১০ ফেব্রুয়ারী থেকে ১০ দিনের ছুটিতে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
পাঠকের মতামত: