ফারজানা পারভিন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ::
চট্টগ্রাম শহর থেকে চকরিয়া হয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫২ কিলোমিটার। যানবাহনে এ দূরত্ব পাড়ি দিতে আগে সময় লাগত তিন ঘন্টা। আর এখন প্রতিদিন মহাসড়কের ১০ স্থানে যানজট লেগে থাকার কারণে যাত্রীদের যাতায়াতে সময় লাগছে ৫-৬ ঘন্টা। যা মানুষের দুর্ভোগ চরমে। এ সড়কে প্রতিদিন যানজট তীব্র আকার ধারণ করায় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা কমে আসার আশঙ্কা করছেন কক্সবাজারের হোটেল ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার হোটেল ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, দেশের অন্য প্রান্ত থেকে অফিস বা কর্মস্থল থেকে কম সময় নিয়ে মানুষ আনন্দ ভ্রমনের জন্য কক্সবাজারে আসতে গিয়ে মহাসড়কের একাধিক স্থানে যানজটে পড়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে। যা পর্যটকদের আনন্দ উপভোগটা কমে আসায় পর্যটকরা নিরাশ হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে এই মহাসড়কে তীব্র যানজট লেগে থাকার কারণে অনেকে দেশের অন্য পর্যটন স্পটগুলোতে ভ্রমণ বেচে নিচ্ছে বলে আমি মনে করি।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ব্যস্ততম মইজ্জার টেক থেকে ক্রসিন পর্যন্ত চার লাইনের কাজ চলায় ঘন্টার পর ঘন্টা তীব্র যানজট লেগে আছে। শান্তিরহাট, পটিয়া থানা মোড়, দোহাজারী, কেরানীহাট, পদুয়া বাজার, আমিরাবাদ, চিরিঙ্গা, ঈদগাহ ও কক্সবাজারের লিংক রোডের দুপাশের ফুটপাত দখল করে অবৈধ স্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ সড়কে যাতায়াতে গাড়িস্ট্যান্ড গড়ে উঠার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়কের মাঝপথে যত্রতত্র যানবাহন দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা ও ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে মালপত্র নামানোই এই যানজটের মূল কারণ হিসেবে মনে করছে স্থানীয়রা। এসব ব্যস্ততম বাজারগুলোতে সরকারি উদ্যোগে হাইওয়ে, ট্রাফিক ও থানা পুলিশের লোকজন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও যানজট নিরসন করা যাচ্ছে না। উপজেলা শহরের ব্যস্ততম এলাকাগুলো যানজট মুক্ত করে যানবাহন চলাচলে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা বলে মনে করেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। কেরানীহাট নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি শহর মূল্লুক রাশেদ বলেন, কিছুদিন পর পর উপজেলা প্রশাসন ও সওজের পক্ষ থেকে মহাসড়কে গড়ে উঠা ফুটপাত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানের পরের দিনই পুনরায় ফুটপাত বেদখল হয়ে যায় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায়। এতে সুফল আসেনা অভিযান কার্যক্রমের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মহাসড়কের সড়কের ব্যস্ততম শহরগুলোতে ফুটপাত দখল করে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভাসমান হকার বসিয়ে তাদের থেকে টাকা আদায় করে। একাধিক হকার বলেন, ফুটপাতে দোকান করি। এসব দোকানের নির্দিষ্ট ভাড়া দিতে হয়। যারা এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তাদের দোকান ভাড়া দিয়ে থাকি। কিছুদিন পর পর প্রশাসন অভিযান চালিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করলেও কয়েক দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিরা আমাদের বসিয়ে দেন। কেরানীহাটের ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বলেন, এই মহাসড়কে প্রতিদিন তীব্র যানজটের কারণে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগের পাশা-পাশি এ অঞ্চলের ব্যস্ততম শহরের ব্যবসায়ীদের তুলনামূলক ব্যবসাও কমে গেছে। এছাড়া গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিতে চাইলে যানজটে আটকা পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কেরানীহাট মুন স্টারের স্বত্বাধীকারী মো. নোমান তালুকদার বলেন, আগে কখনো কেরানীহাটে সকালে যানজট দেখেনি। বেশ কিছুদিন ধরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ বাজারে দীর্ঘ যানজট লেগে যাচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করলেও নিরসন করা যাচ্ছে না।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের চালক নাসির উদ্দিন বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছতে যে সময় লাগছে, দিনের বেলায় অল্প দূরত্ব চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে ৫/৬ ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। একাধিক স্থানে প্রতিদিন তীব্র যানজটে যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। অপরদিকে গাড়ির ও অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে একাধিক স্থানে যে যানজটে পড়েছি, তাতে মনে হয়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা নাজুক। সড়কে ইচ্ছা মতো চালকরা এলোপাতাড়ি গাড়ি ঢুকিয়ে যানজট সৃষ্টি করছে। সাতকানিয়া লোহাগাড়ায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) মোখলেছুর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে ব্যস্ততম এলাকা হিসাবে ট্রাফিক পুলিশ প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে। শিগগিরই ট্রাফিক সংখ্যা বাড়ানো হবে। এখন পর্যটন মৌসুম হওয়ায় মহাসড়কে অতিরিক্ত পর্যটকবাহী গাড়ি চলাচল, সড়কে যাত্রীবাহী পিকআপগুলো যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা করায় যানজট লেগে যাচ্ছে। অপরদিকে কেরানীহাটের মাঝ পথে বান্দরবানের প্রবেশ পথ হওয়ায় সেদিকে গাড়ি ক্রস করতে গিয়ে যানজট লেগে যাচ্ছে। দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, যানজট নিরসন করতে প্রতিনিয়ত ট্রাফিক পুলিশের পাশা-পাশি হাইওয়ে পুলিশও কাজ করে যাচ্ছে। মহাসড়কে যানজট ও দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে নিয়মিত চালকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভাও করা হচ্ছে। এটি চালকদের জন্য প্রশিক্ষণও বলা যাবে।
পাঠকের মতামত: