নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: বহুল প্রতীক্ষিত মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গায় ছয় লেনের সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। তবে পশ্চিমাংশে সেতুর সংযোগ সড়কের কাজে তেমন গতি নেই।
সেতুটির পশ্চিমাংশের সংযোগ সড়ক যে জায়গা দিয়ে নির্মাণের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে সেই অংশে বড় বাধা হয়ে দঁাড়িয়েছে নির্মিতব্য উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপে্লক্স ভবন। ভবনটি ভেঙে নতুন স্থানে মুক্তিযোদ্ধা কমপে্লক্স ভবন নির্মাণে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নীতিগতভাবে চূড়ান্ত সদ্ধিান্ত নেয়। তবে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভবন ভেঙে ফেলার জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতুর পশ্চিমাংশের সংযোগ সড়ক নির্মাণে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সংশি্লষ্টদের।
অবশ্য চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান চকরিয়া নিউজকে নিশ্চিত করেছেন, ‘মাতামুহুরী সেতুর পশ্চিমাংশের সংযোগ তথা বর্ধিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় পড়েছে নির্মিতব্য উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপে্লক্স ভবন। তাই ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ে মহাসড়ক নির্মাণের সুবিধার্থে বিকল্প জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হবে মুক্তিযোদ্ধা কমপে্লক্স। এজন্য ইতোমধ্যে চকরিয়া ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের আশেপাশে জায়গাও চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় হয়ে ঊর্ধ্বতন কতর্ৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।’
ইউএনও নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান চকরিয়া নিউজকে জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সংশি্লষ্ট দপ্তরগুলো নীতিগতভাবে সদ্ধিান্ত নিয়েছে নির্মিতব্য মুক্তিযোদ্ধা কমপে্লক্স ভবনটি যেখানে দঁাড়িয়ে আছে সেখানে থাকবে না। তাই ভবন ভেঙে ফেলার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ একটি চূড়ান্ত পত্রের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন সেতু নির্মাণে নিয়োজিত ‘ক্রস বর্ডার রুট নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের সংশি্লষ্টরা। আশা করছি, অচিরেই পত্র প্রাপ্তির পর ভবনটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হবে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুতে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা পয়েন্টের শতবছরের পুরনো মাতামুহুরী সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘ক্রস বর্ডার রুট নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্প। নির্মাণ কাজের শুরুতে ইতোমধ্যে নতুন মাতামুহুরী সেতুর দুই সংযোগ অংশে শতাধিক ব্যক্তি মালিকানাধীন দোকানপাট ও বসতঘরসহ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখনো উচ্ছেদ অভিযানের আওতায় রয়েছে ছোট-বড় একাধিক স্থাপনা। তন্মধ্যে অন্যতম স্থাপনা হচ্ছে নির্মাণাধীন চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপে্লক্স ভবন।
এলজিইডি জানায়, মাতামুহুরী সেতুর একেবারে কাছে খাসজমিতে ভবনটি নির্মাণ কাজ তদারক করে এলজিইডি। আর ভবনটি নির্মাণে অর্থায়ন করছে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দি ইঞ্জিনিয়ার্স’ নির্মাণ কাজ শুরু করে ভবনটির। চারতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর মাতামুহুরী সেতুর সংযোগ অংশে ভবনটির অবস্থান হওয়ায় উচ্ছেদের আওতায় পড়ে যায়। এতে ভবনটি সেখান থেকে অপসারণ করা হবে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, ‘ক্রস বর্ডার রুট নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ এর আওতায় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা পয়েন্টে মাতামুহুরী সেতু ছাড়াও একই সড়কে চারটি সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। এই চারটি সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩৫ কোটি টাকা।
নতুন মাতামুহুরী সেতুটি হবে ছয় লেনের। সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে অনেক আগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য ইতোমধ্যে জমি ও স্থাপনার মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ‘ক্রস বর্ডার রুট নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. জাহিদ হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী সেতু নির্মাণে অধিগ্রহণের আওতায় পড়া জায়গার মালিকদের জন্য ক্ষতিপূরণের সব টাকা জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘মাতামুহুরী সেতু নির্মাণে অধিগ্রহণের আওতায় যাদের সরকারি স্থাপনা, ব্যক্তিগত জমি বা স্থাপনা পড়েছে, সবাইকে তা ছেড়ে দিতে হবে। বিনিময়ে ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের কোষাগার থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা পাবে। ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলার বেশির ভাগ জমি ও স্থাপনা মালিকের হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি জানান, যেহেতু চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপে্লক্স ভবনটি মাতামুহুরী সেতুর অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে, তাই সেটি ভেঙে ফেলতে হবে।
‘মুক্তিযোদ্ধা কমপে্লক্স ভবনটি জেলা প্রশাসনের খাসজমিতে নির্মিত হলে ওই জায়গার মালিক জেলা প্রশাসন। সেখানে ভবনটি নির্মাণে যেহেতু এলজিইডি বা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় অর্থায়ন করছে, সেহেতু সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানসমূহ আবেদন করলে স্থাপনার ক্ষতিপূরণ দেব।’-যোগ করেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা।
পাঠকের মতামত: