ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তরের কাজ দৃশ্যমান হবে জুনের পর

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::

চলতি বছরের জুন মাসের পর শুরু হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেনে রূপান্তরের কাজ। এর আগেই হাতে থাকা সময়ের মধ্যে যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ চূড়ান্ত করে ফেলা হবে। এজন্য বেশ তোড়জোড় চলছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর বর্তমান সরকার বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে দুই লেন থেকে চার লেনে রূপান্তরের কাজেও হাত দেবে সরকার। এজন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা, মহাসড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ নানা কার্যক্রম অচিরেই দৃশ্যমান হবে। এতে করে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় প্রাণহানি, যানজটসহ নানা সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবে যাত্রী-সাধারণ।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অতিসম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চলতি বছরের জুনের পর অর্থাৎ আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুতেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে দুই লেন থেকে চার লেনে রূপান্তরের কাজ শুরু হবে। এজন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে মন্ত্রণালয়গুলোতে শেষমুহূর্তের তোড়জোড় চলছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৫ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধন করতে গিয়ে উখিয়ায় আয়োজিত জনসভায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন এই সড়ককে চার লেনে রূপান্তরের বিষয়ে কাজ শুরু করতে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি অবশ্যই চার লেনে রূপান্তর হবে। সড়কটির কাজ চার লেনে চূড়ান্তভাবে রূপান্তর হয়ে গেলে অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে কক্সবাজারের। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পর্যটনসহ সর্বক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। এজন্য আশায় বুক বেঁধে আছে এই অঞ্চলের মানুষ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সড়ককে চার লেনে রূপান্তরিত করার জন্য যথেষ্ট আন্তরিক। এজন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টরা কয়েক দফা সমীক্ষার কাজও সম্পন্ন করেছেন।

সওজের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটির চার লেনে রূপান্তর করার ফাইলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় হয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেন রূপান্তরের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. রুহুল আমিন জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তরের কাজ শুরু করতে জাপানের মারুবেনি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়ে যাবে খুব শিগগিরই। এজন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি শেষ করার কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। ইতোমধ্যে সংস্থাটির প্রতিনিধিদল সড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছেন।

প্রকল্প কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর ভিত্তিতে এই মহাসড়কটি চার লেনে রূপান্তর করা হবে। সড়কটিকে থাকবে ডেডিকেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। তাই এই মুহূর্তে একেবারে নিশ্চিত করে বলা যাবে না নির্দিষ্ট সময়ে সড়কটির কাজ শুরু হবে। তবে কাজ শুরু করতে ৬ থেকে ৯ মাস লাগলেও এটি বলতে পারি, চলতি বছরই সড়কটি চার লেনে রূপান্তরের কাজ দৃশ্যমান হবে।’

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সাজার মহাসড়কটি চার লেনে রূপান্তর করার জন্য ৯০০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা কমিয়ে ১২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে প্রকল্প প্রোফাইল পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।

২০১৭ সালের ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধন করতে গিয়ে এই সড়ককে চার লেনে রূপান্তরের ঘোষণা দেন। এরপরই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এই মহাসড়কের ১৩৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকায় প্রকল্প প্রোফাইল তৈরি করে।

জানা গেছে, এডিবির অর্থায়নে ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সুইডিশ কনসালট্যান্ট (এইচআইএফএবি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজের জরিপ

সমাপ্ত করে। এরপর চার বছরে তিনবার প্রকল্পব্যয় নির্ধারণ শেষে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প প্রোফাইল পাঠায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।

প্রকল্প সূত্র জানায়, জরিপের পর প্রথম দফায় ২২৫ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য প্রকল্প প্রোফাইল তৈরি করা হয়। এতে শুধু নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল (প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য, বিদ্যুৎ, সাবমেরিন ক্যাবল, অপটিক্যাল ফাইবার সরানো বা স্থাপন করা এবং

প্রকল্প বাস্তবায়নের পর নিয়মানুযায়ী চার বছরের মেরামত সংরক্ষণ ব্যয় ছাড়া) ১০ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী এই মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তরের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রকল্পের দৈর্ঘ্য কমিয়ে ১৩৬ কিলোমিটার করা হয় এবং সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কটি চার লেনে রূপান্তর করার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে ৩১৫.৮৯ হেক্টর। এই প্রকল্পে রয়েছে পিসি গার্ডার সেতু ৩৩টি, কালভার্ট ১৩৯টি, ফুট ওভার ব্রিজ ১৩টি এবং ফ্লাইওভার রয়েছে ২টি (একটি সাতকানিয়ার কেরানীহাটে ও অপরটি হবে চকরিয়ার চিরিঙ্গায়)।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) আবু আহসান মো. আজিজুল মোস্তফা বলেন, ‘সওজের অধিগ্রহণকৃত জায়গা যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অবৈধ দখলে নিয়ে স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে ফেলেছেন সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে উন্মুক্ত করা হবে। এজন্য আমাদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে দখলদারদের।’

এ ব্যাপারে কক্সবাজার-১ আসনের নবনির্বাচিত এমপি জাফর আলম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী চলতি বছরই দৃশ্যমান হতে শুরু করবে বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেনে রূপান্তরের কাজ। ২০২০ সালের মধ্যে সড়কটি চূড়ান্তভাবে চার লেনে রূপান্তর হয়ে গেলে সব সংশয় এবং প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাসহ নানাবিধ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মিলবে যাত্রী-সাধারণের। এতে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে এতদাঞ্চলের মানুষের।’

পাঠকের মতামত: