ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া-লামায় ইটভাটা গিলে খাচ্ছে বনাঞ্চল, বিলুপ্ত হচ্ছে বন্য প্রাণী!

মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া ::

চকরিয়া ও লামা উপজেলার বনাঞ্চলের ভেতর যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপনের কারণে নিধন হচ্ছে বনের কাঠ। বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় বিলুপ্ত হচ্ছে বন্য প্রাণী। খাদ্য সংকটে পড়ে বন্য হাতির পাল লোকালয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় রোগাক্রান্ত হয়ে বন্য প্রাণীগুলো মারা যাচ্ছে একের পর এক।

সূত্র মতে, কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগ ও লামা বন বিভাগের গভীর বনাঞ্চলে শত শত হাতির পাল অবাধ বিচরণ করতে দেখা গেলেও এখন গুটিকয়েক হাতির পাল বিচরণ করতে দেখা যায়। তারাও খাদ্য সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। বিশেষ করে আমন ও বোরো মৌসুমে হাতির পাল খাদ্যের সন্ধানে ধানক্ষেতে ছুটে যায়। এ সময় অসহায় কৃষকরা আগুনের গোলা ও দেশি অস্ত্র ব্যবহার করে হাতির পাল তাড়ানোর চেষ্টা করেন।

সম্প্রতি চকরিয়া ও লামার বনাঞ্চলে পাঁচটি হাতি মারা যাওয়ার খবরও রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি বন্য হাতির পাল খাবার সন্ধানে ঢুকে পড়ছে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। তবে পর্যটকদের যাতে কোন ক্ষয়ক্ষতি করতে না পারে হাতির পালটির প্রতি সেভাবে গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারী তত্বাবধায়ক মাজাহারুল ইসলাম বলেছেন, কক্সবাজার উত্তর বিভাগের আওতাধীন ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের বিভিন্ন বনভূমিতে বৃক্ষ নিধন, পাহাড় নিধনে হাতির খাবারযোগ্য গাছপালা, বাঁশঝাড় ধ্বংস করে ফেলায় সেখানে খাবার সংকটে পড়েছে। এছাড়া আমন ধান কাটাও শেষপর্যায়ে তাই ক্ষুধার্ত বন্যহাতিগুলো খাবার সন্ধানে সাফারি পার্কের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে।

অপরদিকে চকরিয়া ও লামা উপজেলার প্রায় অর্ধশত ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো শুরু হয়েছে বা প্রস্তুতি চলছে। এতে বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় বনের হাতিগুলো লোকালয়ে ছুটে চলছে। আইনে নিষিদ্ধ হলেও এসব ইটভাটায় বনের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। বিষাক্ত ধুঁয়ায় রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে বন্য প্রাণীগুলো।

পরিবেশবাদীদের মতে, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, সুরাজপুর-মানিকপুর ও লামা উপজেলার ফাইতং, ইয়াংছা, কুমারী, হিমছড়ি, আজিজনগরের গভীর বনাঞ্চল ছিল হাতির অভয়ারণ্য। বর্তমানে এসব এলাকায় হাতি বিচরণের তেমন কোনো স্থান অবশিষ্ট নেই। এসব বনাঞ্চলে গত তিন দশকে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার বসতবাড়ি ও অর্ধশতাধিক ইটভাটা। ফলে বনে হাতির বিচরণ, খাওয়ার কোনো লতাপাতা, বাঁশঝাড় ও গাছপালা অবশিষ্ট নেই। এ ছাড়া ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় হাতি, হরিণ, বনমোরগ, অতিথি পাখিসহ সব ধরনের বন্যপ্রাণী অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। এক সময় শীতের রাতে শিয়াল ও হরিণের ডাক শোনা গেলেও এখন তেমন শোনা যায় না। এভাবে বন নিধন, জনবসতি ও ইটভাটার কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে স্বল্পসংখ্যক হাতিও আর বনে দেখা যাবে না।

প্রতিবছর ইট পোড়ানোর মৌসুমে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও মামলা করলেও পরিস্থিতির কোনো প্রকার উন্নতির দেখা মিলছে না।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ রেঞ্জের পাঁচটি বনবিটেই হাতির অভয়ারণ্য ছিল। বর্তমানে বন উজাড় ও বনভূমি জবরদখলের কারণে বন্যপ্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্র ছোট হয়ে গেছে।

পাঠকের মতামত: