নিজস্ব প্রতিবেদক ::
মহেশখালীর ধলঘাট বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প ও মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সংযোগ সড়ক নির্মাণের রুট পরিবর্তন করে নতুন রুটে সড়ক নির্মাণের জন্য সমীক্ষা শুরু করেছে। মহেশখালী থেকে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী হাসেরদিঘী পর্যন্ত বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন ২৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য তাড়জোড় শুরু হয়েছে। সড়কটি বদরখালী ঈদমনি লালব্রীজ পেকুয়া বাঁশখালী আনোয়ারা পথে বাস্তবায়িত হলে মহেশখালী বন্দরের সাথে চট্টগ্রামের দূরত্ব অন্তত ৫০ কিলোমিটার কমে যাবে।
ইতিমধ্যে সংযোগ সড়কটি নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সড়কটি মহেশখালীর ধলঘাট থেকে শুরু হয়ে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর হাঁসেরদিঘী এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে মিলিত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়; এ রুটে সড়কটি নির্মিত হলে প্রায় ১৪টি খাল-নালা, মাতামুহুরী নদীর চকরিয়ার পালাকাটা অংশের শাখা ও কুহেলিয়া নদী ভরাট হয়ে যাবে। চকরিয়া সুন্দর বনের উপর দিয়ে সড়কটি সম্পূর্ণ নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এতে জমির অধিগ্রহন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। আবাদী জমি, চিংড়ি ও লবণের জমি নষ্ট হবে। নানা প্রজাতির উদ্ভিদ, জলজ ও সামুদ্রিক প্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হয়ে হুমকির মুখে পড়বে পরিবেশ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। এতে কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনাও মুখ থুবড়ে পড়বে। মহেশখালী বন্দর থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেড়ে যাবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটি মহেশখালীর ধলঘাট থেকে শুরু হয়ে কালারমারছড়া, শাপলাপুরের উত্তর প্রান্ত এবং চকরিয়া উপজেলার বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলার দক্ষিণ প্রান্ত, সাহারবিল, চিরিংগা ও ফাঁসিয়াখালীর হাঁসেরদিঘী এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংযোগ সড়কটি বাস্তবায়ন করছে। ২০২০ সালের জুন মাস নাগাদ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, এ রুটে সড়কটি বাস্তবায়িত হলে মহেশখালী ও চকরিয়ায় ১৪টি খাল-নালা, কোহেলিয়া নদী ভরাট হয়ে যাবে। চকরিয়া সুন্দরবন এলাকা দিয়ে পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। বর্ষার সময় মাতামুহুরী নদী দিয়ে পানি বেরোতে না পেরে চকরিয়া ও পেকুয়ায় বন্যার প্রভাব বেড়ে যাবে। এতে চিংড়ি ও লবণ দু-ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সড়ক এলাকায় বিপন্ন পাখি চামচ ঠুটো বাটান, বুনো রাজ হাঁস, হটটিটি, ইউরেশিয়ান কারলিউসহ ৪৫ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল নষ্ট হবে। আট প্রজাতির কাঁকড়া, ২৪০ প্রজাতির মাছ, ৩০ প্রজাতির জুপ্লাংটন ও ফাইটোপ্লাংটন, ১ প্রজাতির ডলফিন, তিন প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম ও ৫৬ প্রজাতির সামুদ্রিক ঝিনুকের আবাসস্থল নষ্ট হবে। এব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সাবাজারের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক সাইফুল আশরাব জানান; ওই এলাকা দিয়ে সড়ক নির্মিত হলে পরিবেশের ক্ষতি হবে এমন অনেক স্পর্শ কাতার বিষয় আছে। তিনি বলেন এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেয়া হয়নি। এ সড়ক নির্মিত করতে হলে অবশ্যই পরিবেশের ছাড়পত্র লাগবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই সংযোগ সড়কটি মাতারবাড়ি-বদরখালী-চকরিয়ার লালব্রীজ হয়ে পেকুয়া চৌমুহনী অতিক্রম করে চকরিয়ার বরইতলী একতাবাজার এলাকায় গিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। প্রায় ৬০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালে ৪৩ কিলোমিটারের সংযোগ সড়কটি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সার্ভে ও ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন করেছিল। অজ্ঞাত কারণে ২০১৮ সালের শুরুতে নতুন করে মহেশখালীর ধলাঘাট-চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর হাঁসেরদিঘী পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়।
মাতারবাড়ি কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ (সংযোগ সড়ক) প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মঈনুল ইসলাম পরিবেশের কিছু ক্ষতি হবে স্বীকার করে বলেছেন, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে পরিবেশের কিছু ক্ষতি তো হবেই। অর্থ প্রদানকারী সংস্থা জাইকা তাঁদের নিজস্ব জরিপকারী দল দিয়ে পরিবেশ ক্ষতির বিষয়টি জরিপ করবে। চকরিয়ার লালব্রীজ পেকুয়া হয়ে বরইতলী পর্যন্ত যে সড়কটির জরিপ করা হয়েছিল, ওই পুরাতন সড়কে একটু আঁকাবাঁকা আছে। ঘর-বাড়িও বেশি উচ্ছেদ করতে হবে। সে জন্য সড়কটি পরিবর্তন করে এখন বদরখালী থেকে ফাঁসিয়াখালী পর্যন্ত রুটে জরিপ চালানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়; চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী হাসেরদিঘি পর্যন্ত দুরত্ব ১০৫ কিলোমিটার, অপরদিকে চকরিয়া লালব্রীজ থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৭৬ কিলোমিটার। সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আফতাব হোছাইন খান চকরিয়া নিউজকে জানান, চট্টগ্রামের আনোয়ারা বাঁশখালী পেকুয়া চকরিয়া সড়কটি চকরিয়ার লালব্রীজ পয়েন্ট থেকে খুরুসকুল হয়ে কক্সবাজারের নেয়ার কাজ চলছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি সুত্র জানায়; মহেশখালী ধলঘাটের নির্মাণাধীন বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প ও মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংযোগ সড়কটি চকরিয়ার বদরখালী, লালব্রীজ, পেকুয়া হয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হলে বন্দর থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার কমে যাবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ড. আশরাফুল ইসলাম সজিব চকরিয়া নিউজকে বলেন, ওই সংযোগ সড়কটি চকরিয়ার লালব্রীজ পেকুয়া হয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সংযোগ করে দেয়া হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ কমে যাবে। পরিবেশের কোন ক্ষতির আশংকা থাকবে না। ওই সড়কটি পুরাতন সড়ক হওয়ায় একটু সম্প্রসারণ করে নিলেই হবে। এতে জমির অধিগ্রহন ব্যয়ও কমে যাবে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সম্ভাবনা আরও উজ্জল হবে।
পাঠকের মতামত: