ঢাকা,শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পুলিশের ছিনতাইকৃত অস্ত্র উদ্ধারে  সহায়তার প্রতিশোধ

চকরিয়া বরইতলীতে বসতঘরে হামলা ভাংচুর, গুলিবর্ষণ, নারীসহ আহত ৫

চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মছনিয়াকাটা এলাকায় একবছর আগে ডাকাতদের হামলায় পুলিশ সদস্য আহত পরবর্তী ছিনিয়ে নেওয়া পুলিশের অস্ত্র উদ্ধার এবং ওই মামলার আসামি গ্রেফতারে এলাকাবাসির সাথে সহযোগিতা করেছিলেন স্থানীয় মো. আবদুল্লাহর ছেলে মহিউদ্দিন। সেই থেকে ডাকাত দলের সদস্যরা সহায়তাদানকারী মহিউদ্দিনের উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।
এরই জেরধরে স্থানীয় হাফালিয়াকাটা লাল মিয়ার দোকান এলাকার নুরুল আলম নুরুর ছেলে আবুল বশর লালুর নেতৃত্বে বেলাল উদ্দিন, আহমদ হোসন, আবদুর রশিদ, হেলাল উদ্দিন, আবুল হোছন, ইসমাইল, আবদুস শুক্কুর, সায়মন,  পুলিশের উপর হামলা, অস্ত্র ছিনতাই মামলার প্রধান আসামি রাকিব ও বদাইয়ার নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী  একবছর পর পুলিশকে সহায়তাকারী মহিউদ্দিনের উপর প্রতিশোধ নিয়েছেন গত ৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) বেলা এগারোটার দিকে।
ওইদিন হামলাকারী সন্ত্রাসীরা কাটা বন্দুক, ধারালো কিরিচ, লাঠিসোটা নিয়ে হামলে পড়ে মহিউদ্দিনের পরিবারের উপর। এর আগে তাঁরা প্রকাশ্য গুলিবর্ষণ করত করতে মহিউদ্দিনের বসতবাড়িতে ঢুকে হামলা ভাংচুর করে ব্যাপক তান্ডব শুরু করে। এসময় স্থানীয় জনসাধারণ অস্ত্রধারীদের হামলা ও গুলিবর্ষণের মুখে ভয়ে আক্রান্ত পরিবারকে সহায়তা করতে আসার জন্য সাহস করেনি।
হামলার একপর্যায়ে অস্ত্রধারীরা মহিউদ্দিনের (৪২) মাথায় ধারালো কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে জখম করে।  এ ঘটনার পর গুরুতর অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। মাথায় ১২টি সেলাই দেওয়া হয়েছে আহত মহিউদ্দিনের। একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গতকাল রোববার (১২ আগস্ট) বিকালে বাড়িতে সাংবাদিকদের কাছে  তিনি ও তাঁর পরিবারের উপর সেইদিনের হামলা তান্ডবের লোমহর্ষক বর্ণণা তুলে ধরেছেন আহত মহিউদ্দিন। এসময় তাঁর মা বৃদ্ধা রিজিয়া বেগম (৬৬) ও স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৩৮), পরিবার সদস্যরা এবং এলাকার বয়স্ক মুরব্বিরা উপস্থিত ছিলেন।
হামলায় মহিউদ্দিন ছাড়াও আহত হয়েছেন তাঁর ভাই জমির উদ্দিনের স্ত্রী নিলুফা আকতার (৩৫), তাঁর  মেয়ে আলীম প্রথমবর্ষের ছাত্রী মহিয়া জান্নাত (১৫), প্রতিবেশি জিয়াবুল (৪০),  মোহাম্মদ আলী (৩৮)।  হামলার সময় মহিউদ্দিন ও তাঁর ভাই জমির উদ্দিনের বসতবাড়ির ভেতরে বাইরে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। মহিউদ্দিনের বাড়িতে হামলার  খবর শুনে দেখতে আসায় মছনিয়াকাটা সড়কের উত্তরাংশে প্রতিবেশি বেলাল উদ্দিন ও বদি আলমের বাড়িঘরে হামলা করেছে একই সন্ত্রাসী চক্র।
আহত মহিউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীর উপর দোষ তুলে দিতে ডাকাত সন্ত্রাসীরা কৌশলে এ হামলার ঘটনাটি সংগঠিত করেছে। কিন্তু আমার বাড়িতে, আমার উপর হামলার ঘটনায় বিএনপি জামায়াতের কোন নেতাকর্মী জড়িত নন। যাঁরা হামলা করেছে, মুলত তাঁরা এলাকায় চিহ্নিত ডাকাত ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। তাদের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানা ও আদালতে ১৪ থেকে ১৫টির বেশি  মামলা এবং জিডি রয়েছে। তিনি বলেন, আমি কৃষিকাজ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা বাণিজ্য করে সংসারের জীবিকা নির্বাহ করি। এলাকার বিপদগ্রস্ত ও গরীব মানুষের পাশে থেকে তাদের নানাবিধ সহযোগিতা করি। সবসময় আমি খারাপ মানুষ ও তাদের অন্যাযের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে চকরিয়া উপজেলার হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির টহল টিমের উপর হামলা ও পুলিশ সদস্যের ছিনতাইকৃত অস্ত্র উদ্ধার ও মামলার আসামি আটকে সহযোগিতা করি। এসব কারণে ডাকাত সন্ত্রাসীরা দলবদ্ধ হয়ে আমার বাড়িতে হামলা করেছে।
ভুক্তভোগী মহিউদ্দিন অভিযোগ, আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবে তাঁরা এ হামলা চালিয়েছে। মহান আল্লাহ সহায় ছিল বলে প্রাণে বেঁচে গেছি। এখনো তাঁরা আমাকে খুন করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। আমার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবে বলে শাসাচ্ছেন। বর্তমানে আমি এবং পরিবার সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এব্যাপারে আমি আইনের আশ্রয় নেব। পাশাপাশি আমি চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কমাণ্ডার, উপজেলা প্রশাসন ও চকরিয়া থানার ওসির কাছে  আমার পরিবার সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

পাঠকের মতামত: