জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া ::
চকরিয়া পৌরশহর এখন যানজটের শহরে পরিনত হওযায় জন দূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ফুটপাত দখল করে বানিজ্য। প্রতিদিন চলছে লাখ লাখ টাকার চাদাঁবাজি। বেপরোয়া চাদাঁবাজির সাথে জড়িত চকরিয়া পৌরসভা, মার্কেট মালিক, দোকান মালিক, ট্রাফিক পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ফল ব্যবসায়ী সমিতি নেতাসহ অনেকেই।
চকরিয়ার সচেতন মহল জানিয়েছেন, পৌরসদরের চিরিঙ্গা পুরাতন বাসষ্টেশন থেকে শুরু করে থানা রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রকাশ্যে চলছে নিরব চাদঁবাজির মহোৎসব। প্রতিনিয়ত মহাসড়কের দু‘পাশে ফুটপাত দখল করে নিত্যনতুন দোকান বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাদাঁবাজির পরিমানও। সড়কের দু‘পাশের ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠা ছোট বড় প্রায় সহস্রাধিক ঝুপড়ি দোকানের কারণে ছোট হয়ে গেছে মহাসড়ক সহ ওয়ান ওয়ে সড়ক।
ফলে পথচারীসহ ও যানবাহন চলাচলের মারাত্বক ব্যাঘাত সৃষ্টির পাশাপাশি লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে থাকা যানজটের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগের। চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসনের কোন প্রকারের মাথা ব্যথা নেই বরলেও চলে।
মহাসড়কের দু‘পাশে গাড়ি পার্কিং ও মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীসহ প্রায় সহস্রাাধিক হকারের ভাসমান দোকান বসানো হয়েছে। সড়কের দু পাশে যত্রেতত্রে ট্রাক, মিনিট্রাক, পিকআপ, চাদেঁর গাড়ি, ম্যাজিক, সিএনজি, মাহিন্দ্রা, অটো-রিক্সা ও টমটম গাড়ির অঘোষিত পার্কিং করায় তীব্র যানজট লেগে যায়।
চকরিয়া সদরের যানজট মুক্ত করতে পুলিশ, পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক বার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে উচ্ছেদ অভিযান চালালে তা ১২ঘন্টাও স্থায়ী হয়না। উচ্ছেদ অভিযান শেষে পূনরায় গাড়ি পার্কিং ও ভাসমান দোকান বসিয়ে ইচ্ছা মতো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, পৌরসভার গুটিকয়েক কর্মকর্তা, ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদেরকে ম্যানেজ করে ফুটপাতে দোকান বসানোর কারনেই যানজটের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, চকরিয়া পৌর সদর থেকে প্রতিদিন ছোট-বড় হাজার হাজার যানবাহন অভ্যন্তরিণ সড়ক গুলোতে যাত্র্ ীও মালামাল পরিবহন করে থাকে। বিশেষ করে এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন গুলোর মধ্যে বাস, ট্্রাক, জীপ, মাইত্রেƒাবাস, টমটম, সিএনজি, মাহিন্দ্রা ও ম্যাজিক গাড়ি গুলো মালামাল ও যাত্রী পরিবহনের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তার উপর রাজার হালে পার্কিং করে দাড়িয়ে থাকে। এতে করে যানজট আরোও প্রকট আকার ধারণ করে।
সদরের যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক সার্জেন্টসহ ৪/৫ জন ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তারা অধিকাংশ সময় ছুটিতে বা ট্রেনিংয়ে থাকে এবং মাঝে মধ্যে ট্রাফিকের দেখা মিললেও তারা মূলত সড়কে বিভিন্ন গাড়ি থেকে মাসিক ও দৈনিক চাঁদা তুলার কাছে ব্যস্থ থাকায় যানজট লেগে গেলেও তাদের সেদিকে নজর দেয়ার সময় থাকেনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিরিংগা সড়ক ও জনপদ বিভাগের অফিস এবং ভাই ভাই হোটেল, সিটি মার্কেট ও ফুলকলির সামনে পার্কিং করে বাস ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন দিনের পর সড়কের উপর পাকিং করে রাখায় যানজট ্আরো প্রখট আকার ধারন করে থাকে। এসব এলাকায় যানজটের পাশাপাশি যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কায় শংকিত থাকে মানুষ। ভাই ভাই হোটেল ও জনতা শপিং সেন্টারের সামনে রাস্তার দু‘পাশে অসংখ্য ট্রাক, মিনিট্রাক, পিকআপ, চাদের গাড়ি জীপ ও সিএনজিসহ শতাধিক গাড়ি পার্কিং করে দিনের পর দিন দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে করে দূর পাল্লার পর্যটকবাহী গাড়ি গুলো জ্যামে পড়ে যানজটের সৃষ্টি হলে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হয়।
চকরিয়ায় শহীদ আবদুল হামিদ পৌর বাসটার্মিনাল নির্মিত হওয়ার পর পৌরবাসী মনে করেছিল অন্তত যানজট কমে আসবে। কিন্তু প্রতিনিয়ত তা পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে। বর্তমান পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের অবহেলার কারণে পথচারী, স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকে আবার দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুরকুলে ঢ়লে পড়ছে। অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং ও ভাসমান দোকান গুলো উচ্ছেদে একাধিক বার অভিযান চালানোর পরও একটি মহল টাকার বিনিময়ে ফের দোকান বসিয়ে যানজট সৃষ্টি করছে।। অনেক সময় দীর্ঘ যানজট লেগে থাকায় রোগী নিয়ে চকরিয়া সরকারী হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিতে স্বজনদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
এলাকাবাসীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চিরিংগা বাসষ্টেশন থেকে থানা রাস্তা মাথা পর্যন্ত প্রধান সড়কে কয়েক শতাধিক মৌসুমী ফল, ভাসমান খাবার, জুতা, পোশাক, গার্মেনস কাপড়সহ বিভিন্ন গাড়ির ১৯/২০টির মতো অবৈধ কাউন্টার বসানো হয়েছে। এসব কাউন্টারের সামনে প্রতিদিন শতশত যাত্রী ও মালামাল উঠানামা করায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও কাউন্টার গুলোতে বাস, ট্রাক, মিনি ট্রাক, হাইয়েস, সিএনজি, টমটম ও মাহিন্দ্রাসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক গাড়ি সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আসা-যাওয়া করে থাকে। সড়কের ফুটপাতের উপর হকার বসার কারণে যানজটের সৃষ্টি হলে দূরপাল্লার গাড়ি ও রোগীবহনকারী এ্যামবোলেন্সসহ বিভিন্ন যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোঁহাতে হয়।
এছাড়া প্রত্যেক ভাসমান দোকান গুলো থেকে পৌরসভার ইজারাদার, মার্কেট-দোকান মালিক ও ফল ব্যবসায়ী সমিতির নামে প্রতিদিন হকারদের কাছ থেকে দোকান প্রতি ১৫০/-টাকা থেকে ২০০/- টাকা পর্যন্ত আদায করে থাকে। এভাবে প্রতিদিনে চাদাঁর পরিমান প্রায় লাখ টাকার উপরে হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ফুটপাতের দোকান থেকে উঠানো টাকা ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক মিলে ভাগভাটোরা করার অভিযোগ রয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের আস্কারা পেয়ে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়েছে ফল ব্যবসায়ীরা।। এদিকে চিরিংগা শহরের বক্স রোডকে যানজট মুক্ত রাখতে পুলিশের সার্জেন্ট ও ৪ জন কনেষ্টবল দেয়া হয়েছে। তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করে গাড়ি থেকে টাকা উঠানোতে ব্যস্থ থাকেন বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।। উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও চিরিংগা সড়ক ও জনপদ বিভাগের ত্রিমূখী জটিলতার কারণে সুযোগ নিচ্ছে যানজট সৃষ্টিকারী ভাসমান দোকান ও রাস্তার ওপর দাড়ানো গাড়ি গুলো।
সম্প্রতি চকরিয়া উপজেলা পরিষদের এক মতবিনিময় সভায় উপস্থিতিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা পৌরশহরকে যানজট মুক্ত করার দাবী জানালেও পৌরশহরকে যানজট ম্ক্তু করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে কোন মুহুর্তে অভিযান চালানোর প্রস্তুতির কথা জানান এক কর্মকর্তা। তবে ঈদকে সামনে রেখে যানজট নিরসনে কেউ এগিয়ে আসবেনা বলেও অভিমত প্রকাশ করেছে চকরিয়া পৌরবাসী।
পাঠকের মতামত: