ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া-পেকুয়ার সাব রেজিস্ট্রার সনদ জালিয়াতির অভিযোগে দুদুকের হাতে গ্রেফতার

pic-pekua-sub-regনিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
এমএসসি’র সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকুরী নিয়ে গত ৯ বছরে ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৬ টাকা অবৈধ ভাবে গ্রহণ করার অভিযোগে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-রেজিষ্ট্রার পরিতোষ কান্তি দাসকে গ্রেফতার করেছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার বেলা ১ টার দিকে , দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যলয় চট্্রগ্রাম-১ এর উপসহকারী পরিচালক আহামদ ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের টিম তাকে পেকুয়া অফিস থেকে গ্রেফতার করে চকরিয়া জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
পেকুয়া থানার ওসি আরো জানান, এইচএসসি পাস করা সাব-রেজিস্ট্রার পরিতোষ এসএস,সির সনদ জালিয়াতি করার অভিযোগ উঠলে দূর্নীতি দমন কমিশন তা তদন্ত শুরু করে। তদন্তে সনদ জালিয়াতির সত্যতা পাওয়ায় ঢাকার শাহবাগ থানায় দুদুকের পক্ষ থেকে মামলা (নং-১৯) দায়ের করা হয়।
chakaria-picture-21-09-20161দুদকের উপসহকারী পরিচালক আহামদ ফরহাদ হোসেন জানান, পরিতোষ কান্তি দাস ১৯৮৫ সালে সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে চাকুরী জাতীয়করণ হওয়ার পর থেকে সরকারী কোষাগার থেকে বেতন ও ভাতাদি বাবদ ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৬ টাকা অবৈধ ভাবে গ্রহণ করে দন্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ এবং ১৯৪৭ সনের দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রমাণিত হওয়ায় থাকে গ্রেফতার করা হয়ে।
দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারি পরিচালক আহমেদ ফরহাদ হোসেন আরো বলেন, অভিযুক্ত পরিতোষ কুমার দাস ১৯৮৫ সালের ২৭ মে মুজিব নগরী কর্মচারী হিসেবে সাব রেজিস্টার পদে মনোনীত হন। তিনি এইচএসসি পাস হলেও সার্টিফিকেট দাখিল করেছেন এমএসসি পাসের। ভুয়া তথ্য ও জাল সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারি চাকুরী করার অভিযোগে গতকাল তার বিরুদ্ধে ঢাকার শাহবাগ থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পরিতোষ চাকরিতে যোগদান করেছেন ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। তখন থেকে ২০১৫ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত বেতন ও ভাতাদি বাবদ ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৬ টাকা অবৈধভাবে গ্রহণ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
পেকুয়ার একাধিক সচেতন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, দুদুকের মামলায় গ্রেফতারকৃত সাব রেজিষ্টার পেকুয়া সাব রেজিষ্টার অফিসে যোগদান করেই অফিসের অফিস সহকারী ধন রঞ্জন ও নকলবিশ মো. আরিফের নেতেৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গঠন করে বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্যে মেতে উঠে। পরিতোষ কুমার দাশ পেকুয়া অফিসে যোগদান করার পর থেকে সাব রেজিষ্টার অফিসে নানান অনিয়ম ও দূর্নীতি মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। ধন রঞ্জন ও আরিফের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট প্রতিনিয়তই জমি রেজিষ্ট্র করতে আসা লোকজনকে নানা উপায়ে জিম্মি করে ঘুষ আদায় করতো। ধন রঞ্জন ও আরিফ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল পেকুয়ার জমি ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
এদিকে দূর্নীতিবাজ সাব-রেজিষ্ট্রার পরিতোষ কুমার দাস গ্রেফতার হওয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে চকরিয়া ও পেকুয়া সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। তাদের বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্যেও কারণে অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল জমির-ক্রেতা বিক্রেতারা। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অফিসে লাগামহীন ঘূষ বাণিজ্য চলে আসলেও তা বন্ধে কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারী কোন নিয়ম-নীতির বালাই ছিল না। দূর্নীতিবাজ সাব-রেজিষ্ট্রারের নেতৃত্বে কয়েকজন অসাধু অফিস সহকারী ও নকলবিসদের ইচ্ছে মতোই চলতো এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।
অভিযোগ রয়েছে, সাব-রেজিষ্টারের নাম ভাঙ্গিয়ে পেকুয়া অফিস সহকারী ধন রঞ্জন ও চকরিয়া অফিসের বিশু জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে মোটা অংকের ঘুষ আদায় করতো। অফিস সহকারি বিশু’র কাছে উপজেলার সাধারণ মানুষ একেবাওে অসহায় ছিলো। সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্য বেড়ে চললেও এনিয়ে কোন ধরনের মাথা ব্যাথা ছিল না কর্তৃপক্ষের। চকরিয়া ও পেকুয়া সাব-রেজিষ্ট্রার নিয়ম অনুযায়ী অফিস করতেন না। সপ্তাহে দুই দিন চকরিয়া ও দুইদিন পেকুয়া অফিসে আসতেন সাব রেজিষ্টার। তাই তার অনুপস্থিতকালীন জায়গা-জমির রেজিষ্ট্রি দলিল দস্তাবেশসহ যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদন করেন অফিস সহকারী ধন রঞ্জন ও বিশু। এজন্য তারা অফিস সময়ে দিনের বেলায় কাজ সম্পদন না করে তারা বেশির ভাগ কার্যক্রম পরিচালনা করেন রাতে। তারা জমি রেজিষ্ট্রি সম্পাদনে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে হাতিয়ে নিতেন কয়েকগুন বেশি টাকা। অফিসের ঘুষকোর ও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের কারণে বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাতে হচ্ছে সরকারকে। জমির ক্রেতা ও বিক্রেতারা এসব ঘুষ বানিজ্যের প্রতিবাদ করার সাহস পেতো না। চকরিয়া ও পেকুয়ার দলিল লিখক সমিতির কয়েকজন লোক এসব ঘুষ বানিজ্যের নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করতেন। গ্রেফতার হওয়া সাব-রেজিষ্টার পরিতোষ কান্তি দাশের বিরুদ্বে আরও অভিযোগ রয়েছে সে জমি বেচাকেনায় রেজিষ্ট্রিতে অতিরিক্ত ঘুষ আদায় করতেন।তিনি সবসময় টুঙ্গিপাড়ার লোক পরিচয় দিয়ে মানুষজন ও দলিল লিখকদের ধমক দিতেন। এদিকে তার গ্রেফতারের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে কক্সবাজার জেলার সব-রেজিষ্টার অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে চাপা আতংক বিরাজ করছে অপরদিকে সাধারন মানুষের মধ্যে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া মোহাম্মদ মোস্তাফিজ ভুইয় বলেন, দুদকের কর্মকর্তারা থানা পুলিশের সহযোগিতায় পেকুয়া সাব রেজিস্টার কার্যালয় থেকে চকরিয়া উপজেলা সাব রেজিস্টার পরিতোষ কুমার দাসকে গ্রেপ্তার করেন। এদিন বিকালে তাকে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোর্পদ করেছে দুদক। আর আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পাঠকের মতামত: