কক্সবাজার ও চকরিয়াসদর ছাড়িয়ে গ্রামে সহজেই মিলছে ইয়াবা। মাদকসেবীরা ছাড়া সামাজিকভাবে এটি অপরিচিত হওয়ায় অনেকেই ইয়াবা ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। যার ফলে ইয়াবার আগ্রাসন রোধ কঠিন হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ১/২টি চালান আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও অসংখ্য চালান পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সমুদ্র পথে ইয়াবা পাচার বেড়ে যাওয়ায় গন্তব্য স্থলে নির্বিঘেœ পৌছে যাচ্ছে ইয়াবা।
ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন রোধে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। মাঝে মধ্যে ছোট-বড় কিছু চালান ধরা পড়লেও পাচারকারী সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক অক্ষতই রয়েছে এমন প্রচার রয়েছে। রঙিন এই নেশার ট্যাবলেটের নীল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ। ইয়াবা সেবনের মধ্যদিয়ে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতাও। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তেরা ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে ইয়াবা পাচারকারীরা। সাগর পথে মাছ ধরা ট্রলারে সরাসরি মিয়ানমার থেকে বড় বড় ইয়াবার চালান দেশে ঢুকে পড়ছে। চালান আসছে সড়ক পথেও। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া এসব চালান ধরতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভয়াল ইয়াবা আগ্রাসনের কাছে প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়েছেন। সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারি, সাগর পথে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সতর্ক টহল, সড়ক ও পাহাড়ি পথে র্যাব-পুলিশের তল্লাশির মধ্যেও আসছে ইয়াবার চালান।
গত এক সপ্তাহে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা জব্দ করেছে আইন শৃংখলা বাহিনী। গতকাল রাতে বিজিবি জব্দ করেছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা।
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে সম্প্রতি ইয়াবা পাচারের গতি আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। সম্প্রতি আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়িরা। যে পরিমাণ ইয়াবা ধরা পড়ছে তার অন্তত দশগুণ নিরাপদে পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় ইয়াবা সেবনকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ইয়াবার চাহিদাও বেড়েছে। এখন শুধুমাত্র শহরে নয় গ্রামেও সহজে মিলছে ইয়াবা। অসংখ্য লোকজন এখন ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।
চকরিয়ার বদরখালী বাজারের ব্যবসায়ি মোস্তাক আহমদ জানিয়েছেএ এলাকায় ইতোমধ্যে মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়েছে। যার মধ্যে ইয়াবা সেবীর সংখ্যা বেশী। এই এলাকায় সহজেই মাদক ব্যবসায়িরা ইয়াবা আনতে পারায় এটিকে ইয়াবার জংশন হিসাবে ব্যবহার করছে। ৩০/৪০ জন লোক চকরিয়া পৌরসদরের কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়ে এসে প্রকাশ্যে বদরখালী বাজারে ইয়াবা ব্যবসা করছে। তাদের মাধ্যমে পাশ্ববর্তী কালারমারছড়া, শাপলাপুর, হোয়ানক ও মাতারবাড়িতে যাচ্ছে ইয়াবা। এখানে কোন তল্লাসী না থাকায় সহজেই চলছে ইয়াবা ব্যবসা।
কালারমারছড়ার ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার ইকবাল বাহার চৌধুরী জানিয়েছেন, ইয়াবা সেবনকারী ছাড়া অন্যদের ইয়াবা সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় সেবনকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সামাজিকভাবে সচেতনতা তৈরী না হলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ফজলুল করিম জানান, এখন যুব সমাজের হাতে হাতে ইয়াবা। ব্যাপক ভাবে বিস্তার ঘটায় তা বন্ধ করা এখন দুরহ হয়ে উঠেছে। তাই যুব সমাজকে বাঁচাতে ইয়াবা প্রতিরোধের বিকল্প নেই।
পূর্ব বড় ভেওলার বাসিন্দা ও চকরিয়া ডিগ্রী কলেজের প্রফেসর হারুণ সরওয়ার বাদল বলেন, বেতুয়াবাজর এলাকার ৩/৪জন যুবক চকরিয়া পৌরসদরের ২নং ওয়ার্ডের একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী মটর সাইকেল নিয়ে নিয়মিত ইয়াবা এনে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, অত্র এলাকার প্রায় শতাধিক ১৫ থেকে ৩০বছর বয়সের যুবক ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়েছে। ইয়াবা সেবনকারী এসব যুবকেরা নেশার টাকা যোগাড় করতে গিয়ে চুরি, ডাকাতি, খুন, চাদাঁবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সমাজে এসব ইয়াবা কারা সেবন ও বিক্রির সাথে জড়িত তা সবাই জানে। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেনা। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন সবাই জানার পরও রহস্যজনক নিরব ভুমিকা পালন করে থাকে।
চকরিয়া নিউজের সম্পাদক ও প্রকাশক সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম বলেন, চকরিয়া পৌরসদর ও তার আশপাশের এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবার হাট বসে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইয়াবা বিকিকিনি হয়। পৌরসদরের ২নং ওয়ার্ডের চিরিঙ্গা বাসষ্টেশন, ৮নং ওয়ার্ডের তেলীপাড়া ও বাসটার্মিনাল এলাকা, ৯নং ওয়ার্ডের ভাঙ্গারমুখ ও মৌলভীরকুম এলাকায় বাংলা মদ ও ইয়াবার হাট বসে। পুলিশ প্রশাসন সবই জানে! কিন্তু রহস্যজনক নিরবভুমিকা পালন করে থাকে। পুলিশ প্রশাসন মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে নামমাত্র ইয়াবার চালান উদ্ধার করা হলেও ইয়াবা বিক্রির গড়ফাদাররা থাকে ধরাছোয়াঁর বাইরে।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ বাবুল কান্তি বণিক জানান, ইয়াবা রোধে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। মাদক সংক্রান্ত তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ এ ব্যাপারে পরে কথা বলবেন বলে জানান।
পাঠকের মতামত: