ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগের কমিটি নেই এক বছর পর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগের দীর্ঘ এক বছর ধরে কোন কমিটি নেই । কমিটি না থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগের কর্মকান্ড। কমিটিতে পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের অন্তত পাঁচজন নেতাসহ প্রায় শতাধিক ছাত্রলীগের নেতাকর্মী গত ৮মাসে মধ্যপ্রাচ্য বিভিন্ন দেশে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমাচ্ছেন। এতে পদপ্রত্যাশী নেতারা নিরাশ হয়ে পড়েছে। ফলে, সংগঠনটির দুই ইউনিটের সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে।

২০২১সালের ৮জুলাই সাংগঠনিক স্থবিরতা, গঠনতন্ত্র ও দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ড এবং মেয়াদোর্ত্তীণ হওয়ায় উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ওইদিন ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্তসহ জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। একবছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের দুই ইউনিটের কমিটি গঠিত হয়নি।

নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির পথও থমকে পড়েছে। অনেকে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ করেও দলীয় পরিচয় পাচ্ছেন না। সাবেক কমিটির নেতারাও নিরাশ হয়ে রাজনীতির হাল ছেড়ে দিয়েছে। অনেকের ছাত্রলীগের রাজনীতির বয়স সীমা পার হয়েছে। এত সংখ্যক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিদেশ পাড়ি দেওয়াকে সংগঠনটির সাবেক নেতারা আগামীতে নেতৃত্ব শূন্য হবে ধারণা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ছিলেন সৌরভ মাহাবি। দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজপথে সরব ছিলেন। ২০২২সালের ১৬মার্চ নিরাশ হয়ে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আবরে। চকরিয়া পৌরসভা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক ও ৬নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরফাত মুন্না চলতি বছরের ১ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই) পাড়ি জমান।

পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল সিহাব চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি দুবাই চলে যান। চলতি মাসের ৪ জুলাই সংযুক্ত চিরিংগা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ কর্মী জিসান খান জয় ও ৭ ফেব্রæয়ারি পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক ওবাদুল ইসলাম আলিফও ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে দুবাই পাড়ি জমান।

ভেওলা মানিকচর (বিএমচর) ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আকিল আফতাহি রাইয়্যান পদে থাকার পরও জীবনের ভাগ্য বদলের আশায় দুবাই চলে যান। সাহারবিল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল সালমান ২৬ মে পারিবারের সঙ্গে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছেন।

এরআগে পৌরসভা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি তানিম মুহাম্মদ জিকু, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ মাহমুদ তানবীর, চিরিংগা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন মিশুসহ চকরিয়া উপজেলা, পৌরসভা ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা ছাত্রলীগের আনুমানিক দুই শ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নিরাশ হয়ে বিদেশ চলে গেছেন।

উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক ১১বছর ধরে চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগের তিনটি কমিটি গঠিত হয়। পৌরসভা ছাত্রলীগের একটি কমিটি ছাড়া কোনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। ২০১৮সালের শেষের দিকে শুধু মিজানুর রহমান ও সোহেল রানা পারভেজের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন জেলা ছাত্রলীগ। ২০০৬সাল থেকে ২০১৩সাল পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন হায়দার আলী ও সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির। সর্বশেষ ২০১০সালে ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়।

উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতে কমিটি নেই। যে ৭টি ইউনিয়নে কমিটি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কোনো ইউনিয়ন এক বছর বা তারও আগে মেয়াদোর্ত্তীণ হয়েছে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে একটি কমিটিরও মেয়াদ নেই।

সর্বশেষ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন মোহাম্মদ মারুফ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকিত হোসেন সজীব। অন্যদিকে পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা পারভেজ।

বিদেশ পাড়ি দেয়া চারজন ছাত্রলীগের সাবেক নেতার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, ‘দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। কমিটি গঠিত হলে একটি পদে আশা করতাম। কমিটি আসে আর যাই, কোনো কমিটিই পূর্ণাঙ্গ হয় না। এমনকি গত একবছর ছাত্রলীগের কমিটিই নেই। এখন পরিবারের চাপের মুখেই জীবনের ভাগ্য বদলে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে রাজপথে আছি। প্রায় ১বছর ধরে কমিটি জন্য কক্সবাজার যাচ্ছি আর ঘুরছি। জেলার নেতার কাছে হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। তবুও জেলা ছাত্রলীগ কমিটি দেওয়ার কোনো হুঁশ নেই। সংগঠন গতিশীল করতে নতুন কমিটি হওয়া প্রয়োজন। তবে প্রকৃত ছাত্রলীগ করে এমন নেতাদের দিয়ে কমিটি হোক এটা প্রত্যাশা করছি।’

চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির বলেন, ‘যথাসময়ে কমিটি গঠিত হলে নতুন নেতৃত্বে পথ সুগম হয়। নবীন ছাত্রলীগের কর্মীরা কাজ করার সুযোগ পায়। আমাদের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ছিল। ২০১৩সালের পর থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের কোনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য দল সাংগঠনিকভাবে কমিটি গঠনের জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ছাত্রলীগের মতো একটি প্রাচীণ দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে যাওয়া পড়া খুবই খারাপ লক্ষণ। অচিরেই উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি করা জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসাইন বলেন, মুলত ঝাছাই-বাচাই করেই কমিটি দেয়া হবে, সেজন্য একটু বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে উপজেলা এবং পৌরসভা কমিটি ঘোষনা করা হবে।

পাঠকের মতামত: