ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় ১৪৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসে পাঠদান চালু

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারাদেশের মতো কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় সাড়ে চারমাস যাবত বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমুহ। ফলে শিক্ষার্থীরা কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অভিভাবক মহল। অবশ্য শিক্ষাখাতের এমন দৈন্যদশা থেকে উত্তোরণে নতুন পথ অবলম্বন করতে শুরু করেছেন চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তারের পরিকল্পনা ও নির্দেশনার আলোকে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা এলাকার ১৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিশ্চিতে চালু করা হয়েছে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম। আর এই কার্যক্রমটি সুচারুভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গঠন করেছেন একটি কমিটি। উল্লেখিত কমিটি প্রতিদিন ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ক্লাস্টার ভিত্তিক শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করে প্রতিটি বিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাস সচল রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন।

চকরিয়া উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আনোয়ারুল কাদের বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তারের নির্দেশনায় শিক্ষকদের সমন্বয়ে ইতোমধ্যে উপজেলার ১৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এখন বাড়িতে বসে বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। দিনদিন এই অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ বাড়ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নেওয়া এই সব অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হয় না।

চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার বলেন, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১৪৪টি। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ১৪৪টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছে ৬২১৬৮ জন। এসব প্রতিষ্ঠানে ৬২১৬৮ শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঠদান করেন ৯৯০ জন শিক্ষক। ১৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯৯০জন শিক্ষকের মধ্যে অন্তত ৪২৮জন শিক্ষক শিক্ষিকা ইতোমধ্যে আইসিটি বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষন নিয়েছেন। আমরা উল্লেখিত আইসিটি বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ৪২৮জন শিক্ষককে প্রতিটি বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রমে যুক্ত করেছি।

তিনি বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস নিশ্চিত করতে উপজেলার সকল আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একটি গ্রুপে যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস্টারের আইসিটি প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে একজন হোস্ট হয়ে প্রতিসপ্তাহে ক্লাস্টারের আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে জুম মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তাদের গ্রুপে এবং উপজেলা শিক্ষা অফিস, চকরিয়া ফেইসবুক পেইজে বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য নতুন নতুন তৈরিকৃত কনটেন্ট ও ভিডিও আপলোড করবেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, আপলোডকৃত শ্রেণীপাঠ যাতে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেখে এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষার্থীও ইচ্ছেমতো সময়ে অনুশীলনের সুযোগ পান তার ব্যবস্থা নিচ্ছেন আইসিটি শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক। এভাবে আমরা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিশ্চিতে অব্যাহত চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।

বড়ভেওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলসাদ আঞ্জুমান রুমা বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বের জায়গা থেকেই অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম চালু করেছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। ইতিমধ্যে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক নিয়ে অনলাইনে মতবিনিময় সভাও করেছি।

তবে গ্রামীণ এলাকায় হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সমস্যার কারণে সমস্যা হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্ঠা করে যাচ্ছি, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইলে ভিডিও কল তথা লাইভের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে। আমার বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক অনলাইন ক্লাসে সময় দিচ্ছেন।

চকরিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা উম্মে মোখলেছা খানম রেশমা বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারের নির্দেশনার আলোকে আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ইতোমধ্যে অনলাইন (ভার্চুয়াল) ক্লাস শুরু করা হয়েছে। ‘করোনাভাইরাসের ঝুঁকির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পড়ালেখায় ব্যাঘাত হচ্ছে। আমরা মূলত শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারের অনুপ্রেরণাতেই শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছি বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করতে।

তিনি বলেন, আমরা প্রথমে সপ্তাহে একবার ক্লাস নিতাম। এখন বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষকও অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হয়েছেন। সেই সুযোগে আমরা এখন প্রতিদিনই অনলাইন ক্লাস নিচ্ছি। এতে প্রতিদিন বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। মোবাইলে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এভাবে ক্লাস চালু করার কারণে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাদের অভিভাবকরাও খুশি।

করোনা দুর্যোগে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস চালুর এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন চকরিয়া পৌরসভার কাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) সভাপতি সাংবাদিক এম.জিয়াবুল হক। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে উপজেলার ১৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ আছে সাড়ে চারমাস ধরে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অভিভাবক মহল। শিক্ষাখাতের এমন দৈন্যদশা থেকে উত্তোরণে চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার মহোদয়ের উদ্যোগটি সত্যিই অভিভাবক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি যতদিন স্বাভাবিক না হবে, ততদিন প্রত্যেক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে নিয়মিত এই অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম চালানো উচিত। দায়িত্ববোধ থেকে সম্মাণিত শিক্ষকমন্ডলী তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে এই দুর্দিনে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেমন শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে, তেমনি উদ্যোগটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সর্বমহলে প্রশংসিত হবেন। ##

পাঠকের মতামত: