মুখরোচক খাবারগুলোর মধ্যে মিষ্টি হচ্ছে অন্যতম। ছোট শিশু থেকে শুরু করে বুড়ো পর্যন্ত খাদ্যের তালিকায় মিষ্টির স্থান সবার ওপরে থাকে। উৎসব-পার্বণে আতিথেয়তায় মিষ্টির জুড়ি মেলা ভার। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি উৎপাদিত হয়। আর দেশে বর্তমানে হরেক রকমের নামিদামি ব্রান্ডের মিষ্টির দোকান চালু হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহাসিক মিষ্টির দোকানগুলো। তারপরও এলাকায় মিষ্টি প্রেমিদের চাহিদা পূরণ করে চলেছে পাল বাবুর মিষ্টি।
তেমনি স্বাদ নিয়ে গড়ে উঠেছিল ‘পাল মিষ্টি ভান্ডার’। সবাই পালের মিষ্টির দোকান নামে চিনে। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং বাজারে এই মিষ্টির দোকান। শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের হিন্দুর হাট এলাকার রেভতী রঞ্জন দাশ চকরিয়ার হারবাং এসে মিষ্টির দোকান দেন। তখন সেখানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন উষা রঞ্জন পাল। রেভতী রঞ্জনের কাছ থেকে মিষ্টি বানানোর সব ধরনের প্রক্রিয়া শিখে নেন। পরে ১৯৭১ সালে রেভতী রঞ্জন দাশ দোকানটি উষা রঞ্জন পালকে বিক্রি করে নিজ এলাকায় চলে যান। ব্যবসায়িক সততা, নিষ্ঠা, গুণগত মান বজায় রেখে মিষ্টি তৈরি করায় অল্প সময়ে পাল বাবুর মিষ্টি ভা-ারের নাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
উষা রঞ্জন পাল জানান, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত তিনি। বাড়িতে দুই ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে তার। দুই ছেলেই বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরি করে। কোন অভাব নেই সংসারে। তারপরও শখের বসে এই মিষ্টির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রথমে রেভতী বাবুর দোকানে কর্মচারী হিসেবে চাকুরি শুরু করি। পরে রেভতী বাবুর কাছ থেকে মিষ্টি বানানোর কৌশল রপ্ত করি। বর্তমানে দুইজন কারিগর আর দুইজন কর্মচারী নিয়েই এ মিষ্টির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ কেজি মিষ্টি বিক্রি হয় এখানে। দৈনিক ১০ থেকে ১১ হাজার টাকার মিষ্টি বিক্রি হয়। কর্মচারীর খরচ, দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচশেষে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লাভ হয় তার। প্রচুর চাহিদা থাকলেও গুণগত মান অক্ষুন্ন রাখতে নির্দিষ্ট পরিমাণ মিষ্টি তৈরি করি। এতে অনেক ক্রেতাকেই খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। তাই মিষ্টি বাসী হওয়ার সুযোগ থাকে না।
পাল বাবুর মিষ্টির উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘গরুর খাঁটি দুধ থেকে ছানা কেটে তৈরি করা হয় এই মিষ্টি। প্রতিদিন সকালে স্থানীয় গোয়ালাদের কাছ থেকে কাঁচা দুধ ক্রয় করেন। সেই দুধ জাল দিয়ে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় ছানা। বিশুদ্ধ ছানার সাথে পরিমাণ মতো চিনিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের সমন্বয়ে মিষ্টির বিশেষ মিশ্রণ প্রস্তুত করা হয়। ছানার মিশ্রণকে নির্দিষ্ট সাইজ অনুযায়ী গোলাকার আকৃতি করা হয়। এরপর গোলাকার ছানার টুকরোগুলো চিনির তৈরি সিরায় জ্বাল দেয়া হয়। এভাবেই তৈরি করা হয় ছানার তৈরি মিষ্টি। মাত্র ২০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যায় সুস্বাদু এই মিষ্টি। অর্জিত সুনাম ধরে রাখতে মিষ্টির উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও এখনো সুলভ মূল্যে নির্ভেজাল মিষ্টি বিক্রি করছে উষা রঞ্জন পাল। দামে কম আর মানে ভালো হওয়ায় এই অঞ্চলের মিষ্টিপ্রেমীদের খাবারের তালিকায় শীর্ষে থাকে পাল বাবুর মিষ্টি।
পাঠকের মতামত: