নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে সড়ক জনপথ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভবনের স্থাপনা নির্মাণে কতিপয় মালিকপক্ষের বৈধ কোনধরণের জমি না থাকলেও ইতোমধ্যে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধিগ্রহণকৃত বিপুল জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন বেশকিছু জায়গা ওই ভবনের একাংশে পড়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
অবশ্য অধিগ্রহনকৃত জায়গা দখলের খবর পেয়ে সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িতদের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বারণ করেন কক্সবাজার সড়ক বিভাগের চকরিয়া উপ-বিভাগের কর্মকর্তা সহকারি প্রকৌশলী দিদারুল ইসলাম ও অফিসের লোকজন।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া সড়ক উপবিভাগের সহকারি প্রকৌশলী (এসও) মো.দিদারুল ইসলাম। তিনি বলেন, লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ছিকলঘাট সেতু এলাকায় যে জমিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী স্কুল এন্ড কলেজ নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করছে সেটি সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জায়গা। তাঁর প্রমান হচ্ছে লক্ষ্যারচর মৌজার বিএস ৩ নং খতিয়ানের ৩১১২,৩১১৩ ও ৩১১৪ দাগের উল্লেখিত জায়গা সড়ক বিভাগের নামে খতিয়ানও সৃজিত রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের অধিগ্রহণকৃত জমিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধ ভবন নির্মাণের খবর পেয়ে আমরা জড়িতদের দুইদফা নোটিশ দিই, কাজ বন্ধ রাখতে বলি। তারপরও অভিযুক্তরা কাজ চালিয়ে যাওয়ায় সর্বশেষ ১৪ জুন কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িতদের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বারণ করি। এতে উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে জড়িতরা আমাকে এবং অফিসের স্টাফদেরকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে হামলার চেষ্ঠা করেন।
এ ঘটনায় অফিসের স্টাফ রেজাউল করিম বাদি হয়ে গত ২৫ জুন অবৈধ ভবন নির্মাণকারী রেজাউল করিম সেলিম ও তাঁর ভাই মিরাজের নামে চকরিয়া থানায় এজাহার জমা দিয়েছি। এরপরও তাঁরা ধরাকে সরাঞ্জান করে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
একই বিষয়ে বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলা শাখা কর্মকর্তা (এসও) মোহাম্মদ জাকারিয়া আলম বলেন, মাতামুহুরী নদীর চকরিয়ার উত্তরাংশের এরিয়া আমাদের এলাকা। ছিকলঘাট সেতু এলাকার ওই জায়গাটি যেহেতু নদীর সন্নিকটে, তাই আমাদের জায়গা হবে এটা নিশ্চিত। তিনি বলেন, তারপরও আমরা সরেজমিন ঘটনাস্থলে যাব, পাউবোর সার্ভে রির্পোট দেখে এব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সরকারি জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, লক্ষ্যারচর মৌজার বিএস ৩ নং খতিয়ানের ৩১১২,৩১১৩ ও ৩১১৪ দাগের উল্লেখিত জায়গা সড়ক বিভাগের নামে খতিয়ান হলেও মুলত এসব জায়গা আমাদের পুর্বপুরুষের সম্পত্তি। ওয়ারিশদের নামে এমআরআর ও আরএস খতিয়ান রয়েছে। তবে সড়ক বিভাগ অধিগ্রহণ করেছে বলা হলেও আমরা ক্ষতিপুরণের টাকা পাইনি। সেই হিসেবে জায়গার মালিকানা আমাদের। তিনি বলেন, আমাদের বৈধ জমিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করছি, খারাপ কিছু তো করছিনা।
অভিযোগ উঠেছে সরকারি দুইটি প্রতিষ্ঠানের জায়গা দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে জড়িতরা ইতোমধ্যে আশপাশের বেশ কিছু ব্যক্তির দখলীয় দোকানপাট এবং জায়গার অংশও হাতিয়ে নিয়েছে। এই অবস্থায় স্থানীয় লোকজনের মাঝেও জমি নিয়ে শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, সরকারি জমিতে বিনা অনুমতিতে কোন অবস্থাতে ব্যক্তিগত স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। সড়ক বিভাগ জানালে লক্ষ্যারচর ছিকলঘাট সেতু এলাকার বিষয়টি সরেজমিনে দেখা হবে। সেখানে যদি জমির মালিকানা নিয়ে কোনধরণের বিচ্যুতি থাকে তা হলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: