ঢাকা,শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মানছে না কলেজ গুলোতে ভর্তিতে নির্ধারিত টাকার ৪ গুণ বেশি আদায়!

চকরিয়ায় ডুলাহাজারা কলেজে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪০০০ টাকা আদায়ের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র। ছবি : চকরিয়া নিউজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

মফস্বল ও উপজেলা পর্যায়ে একাদশ শ্রেণিতে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে সেশন ফিসহ সর্বসাকূল্যে এক হাজার টাকা নিতে নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। কিন্তু এই নিয়ম মানছে না কিছু কলেজ কর্তৃপক্ষ। সর্বোচ্চ ৪০০০ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ২২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলায় কলেজ রয়েছে ৫টি। সেগুলো হল চকরিয়া সরকারি কলেজ, চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজ, বদরখালী কলেজ, ডুলাহাজারা কলেজ ও চকরিয়া সিটি কলেজ। এসব কলেজের কোনোটি শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. জাহেদুল হক স্বাক্ষরিত পরিপত্রের নির্দেশনা মানছে না। একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সেশন ফিসহ সর্বসাকূল্যে ১০০০ টাকার বেশি আদায় করা যাবে না মর্মে নির্দেশনা থাকলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। একই অবস্থা পুরো জেলার কলেজ গুলোতেও।

শিক্ষাবোর্ড কলেজ পরিদর্শক ১০০০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও চকরিয়ার ডুলাহাজারা কলেজ ভর্তির ক্ষেত্রে নিচ্ছে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪০০০ টাকা। যার বিপরীতে কলেজের সিল ও স্বাক্ষরসহ একটি স্লিপও দেওয়া হচ্ছে।

চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে শারেক ইসলাম অনলাইনে আবেদন করে ভর্তির জন্য মনোনীত হন ডুলাহাজারা কলেজে। শারেক ইসলামের বাবা একজন দিনমজুর। এর পরও কষ্টেসৃষ্টে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়িয়েছেন। কিন্তু ব্যয়বহুল ভেবে ছেলেকে আর পড়াবেন না বলে মনস্থির করেন দিনমজুর দেলোয়ার। এই অবস্থায় দিনমজুর দেলোয়ার এক শুভাকাঙ্ক্ষীর পরামর্শে ও আর্থিক সহায়তায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ডুলাহাজারা কলেজে নিয়ে যান ছেলেকে। কিন্তু কলেজে গিয়ে জানতে পারেন ভর্তির জন্য ৪০০০ টাকা দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত শুভাকাঙ্ক্ষীর আর্থিক সহায়তায় দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করে ছেলেকে ভর্তি করেন। বিপরীতে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি স্লিপও ধরিয়ে দেয়। সেই স্লিপে কম্পিউটার প্রিন্টেড ৪০০০ টাকা লেখা থাকলেও কোন খাতে কত টাকা নেওয়া হয়েছে তা উল্লেখ নেই।

চকরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আ ক ম গিয়াস উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমার কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে না। তবে কক্সবাজার সরকারি কলেজে যে পরিমাণ টাকা নেওয়া হচ্ছে, এর অনুকরণে চকরিয়া সরকারি কলেজেও একই পরিমাণ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সেই হিসাবে টাকার অঙ্কে ২২০০ টাকার মতো হবে।’

ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদুল আলম সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন, কলেজ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ভর্তি ফি ছাড়া অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। তবে কোন খাতে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে তা জানাতে পারেননি তিনি।

চকরিয়ার পাশের উপজেলা পেকুয়ায় রয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজ ও শহীদ জিয়া বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট ইনস্টিটিউট। এই দুই কলেজ একমাত্র সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া ১০০০ টাকা ফি নিয়েই শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এমন তথ্য জানালেন শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছফওয়ানুল করিম।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘মৌখিকভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি, বিভিন্ন কলেজে বোর্ড নির্ধারিত ফির বাইরে একাদশে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার বিষয়টি। এর পর সবকটি কলেজ কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

চকরিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার কলেজগুলোতে একাদশে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কতটাকা আদায় করা হচ্ছে এর তথ্য জানতে মাঠে কাজ করছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ইয়েস গ্রুপের সদস্যরা। বিভিন্ন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর তা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। এ কথা জানিয়ে টিআইবি চকরিয়ার এরিয়া ম্যানেজার এ জি এম জাহাঙ্গীর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ১০০০ টাকার বেশি আদায় করা যাবে না মর্মে পরিপত্র জারি করলেও মাঠপর্যায়ে তা তদারকি নেই। এ কারণে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কলেজগুলোতে নৈরাজ্য চলছে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক তদারকি।’

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. জাহেদুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীন কলেজগুলোর জন্য এই নির্দেশনা জারি করেছি। যদি কোনো কলেজ নির্ধারিত ১০০০ টাকার অতিরিক্ত অর্থ কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করে থাকেন এবং লিখিত অভিযোগ পাই তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পাঠকের মতামত: