ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা পুলিশের চার সদস্য সাময়িক বরখাস্ত, হামলার নেপথ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির বসতঘরে হামলায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ অপসারণ এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছারকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। শনিবার দুপুর ১২টায় লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ছিকলঘাটস্থ নিজ বাসভবন মুক্তিযোদ্ধা কুঠিরে সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার এসব দাবি তুলে ধরেছেন।

অপরদিকে, হামলার ঘটনায় ইতোপুর্বে প্রত্যাহার করা পুলিশের ১০ সদস্যের মধ্যে ৪ সদস্য চকরিয়া থানার এসআই তুষ্ট লাল বিশ্বাস, এএসআই জেডাউর রহমার, কনস্টেবল মো. হারুনুর রশিদ ও মো. নুর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার বিষয়ে পুলিশের এডিশনাল এসপিকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সহধর্মিণী ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নেচারা বেগমের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বড় ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম।

লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি চকরিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৩০ বছর কমান্ডার ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডার ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির উদ্যোগ নিলে আনোয়ার হোসেন বাঙালি বাদি হয়ে কক্সবাজারের ২০ জন মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। মামলাটি বর্তমানে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও দাবি করা হয়, যুদ্ধাপরাধ মামলার জেরে ক্ষিপ্ত হয়ে চক্র জামায়াত নেতা লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা কাইছারের ইন্ধনে অভিযানের নামে পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা কুঠিরে হামলা-ভাংচুর, লুটপাট ছাড়াও মারধরে পরিবারের ৭ সদস্যকে আহত করেছে। হামলার সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিও ভাংচুর করা হয়েছে।

পুলিশের এ হামলার ঘটনায় পুলিশ দিয়ে নয়, বিচার বিভাগীয় কমিটি করে তদন্ত করার দাবি জানান। যেসব পুলিশ এ হামলায় জড়িত তাদের পাশাপাশি ইন্ধনদাতাসহ সবাইকে আইনের আনতে হবে। একইসঙ্গে জামায়াত নেতা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছারকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হামলার নেপথ্য রহস্য উদঘাটিত হবে বলেও দাবি করা হয়।

এদিকে, গত ৫ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলার ঘটনায় ওইদিন রাতেই পুলিশের ১০ সদস্যকে চকরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার ব্যাপারে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মো. মতিউল ইসলাম ও ডিএসবি’র এএসপি শহিদুল।

তদন্ত কমিটির প্রধান কক্সবাজারের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার রাতেই প্রাথমিকভাবে হামলায় জড়িত সন্দেহ হওয়ায় পুলিশের চার সদস্যকে সাময়িক ববরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন চকরিয়া থানার এসআই তুষ্ট লাল বিশ্বাস, এএসআই জেডাউর রহমার, কনস্টেবল মো. হারুনুর রশিদ (কং-৩৬৩) ও মো. নুর আলম (কং-৪২৬)।’

তিনি বলেন, ঘটনার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু হয়েছে। হামলায় যারা বা যতজনই জড়িত থাকুক না কেন সবাইকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। পার পাবে না কেউই।

পাঠকের মতামত: