চকরিয়া নিউজ ডেস্ক :::
কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরীর নদীর চিরিঙ্গা ব্রিজ পয়েন্টে গতকাল মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে নদীর তীরে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল। মুষলধারে বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে একের পর এক ম-প থেকে আসতে শুরু করে প্রতিমাসহ শত শত নারী-পুরুষ। একপর্যায়ে বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আশপাশের খোলা জায়গা, ব্রিজের উপরে এবং নিচে, নদীর দুই তীরে হাজার হাজার মানুষের ঢল। এ যেন সত্যিই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনমেলা। তবে মুষলধারে বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে অতীতের চেয়ে বেশিসংখ্যক নারী-পুরুষ ভিড় করলেও প্রকৃতির বৈরী আচরণের কারণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে এসব মানুষ। ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার পরও শেষপর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে আলোচনা সভা শুরু করতে হয়েছে চকরিয়া প্রতিমা বিসর্জন উদযাপন পরিষদকে।
চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়া যুবকল্যাণ সমিতির সভাপতি ও বিশিষ্ট দানবীর ধনরঞ্জন দাশের উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। চকরিয়া প্রতিমা বিসর্জন উদযাপন পরিষদের আহবায়ক প্রদীপ কান্তি দাশের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সুনীল বিহারী নাথের সঞ্চালনায় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের এমপি মোহাম্মদ ইলিয়াছ। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন চকরিয়া পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আলমগীর চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সম্বর্ধিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রতন কুমার সুশীল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগ নেতা ও পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিম, তিন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বশিরুল আইয়ুব। বক্তব্য রাখেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যুব পরিষদের সভাপতি সুধাংশু কুমার সুশীল, প্রতিমা বিসর্জন কমিটির অর্থসচিব নিখিল বসাক, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সুজিত দাশ, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতা উত্তম কুমার দাশ, ডা. সুমন দাশ। আরো উপস্থিত ছিলেন চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়ার বিশিষ্ট সমাজসেবক হারাধন দাশ, সমীর দাশ, মাষ্টার মিলন দাশ, মিলন কান্তি দাশ, নিত্যানন্দ গীতা সংঘের সভাপতি শ্রীদুল রঞ্জন দাশ, কুমার দত্ত, চকরিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছোটন কান্তি নাথ, পংকজ দাশ, সুধীর চন্দ্র দাশ, সমীর কান্তি দাশ প্রমূখ।
এদিকে মাতামুহুরী নদীর তীরে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান নির্বিঘেœ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে সম্পন্ন হয় সেজন্য এমপি ইলিয়াছ, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিমের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হয়। অপরদিকে চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল আজমের তত্ত্বাবধানে থানার বিপুল সংখ্যক পুলিশ ব্রিজ পয়েন্ট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। সূর্যাস্তের আগে পুরোহিত রাজীব চক্রবর্তীর মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে নদীতে সারিবদ্ধভাবে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি ইলিয়াছ বলেন, ‘বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী এবং এই দেশে সকল ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ ও অধিকার ভোগ করে এদেশে বসবাস করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবস্থান একেবারে দৃঢ়।
এমপি ইলিয়াছ আরো বলেন, এবারের প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে এসে মানুষের অনেক ভোগান্তি দেখতে পেয়েছি। প্রকৃতির বৈরী আচরণ হলেও যাতে ভবিষ্যতে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে আগত মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সেজন্য মাতামুহুরীর তীরে একটি স্থায়ী মঞ্চ এবং যাতায়াতের সড়কটিও পাকা করে দেওয়া হবে।
একই মত দিয়ে পৌরমেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে মাতামুহুরী তীরে বসা এই অনুষ্ঠান যাতে প্রতিবছরই হয় সেজন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে যা যা করার দরকার পড়বে তা করা হবে। চকরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনমেলার মতো এতসুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ায় প্রতিমা বিসর্জন উদযাপন কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।
প্রতিমা বিসর্জন উদযাপন কমিটির নেতারা জানান, এবারের প্রতিমা বিজর্সন অনুষ্ঠানে উপজেলার ১৪টি ম-প থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে প্রতিমা নিয়ে আসা হয় মাতামুহুরী নদীর তীরে।
পাঠকের মতামত: