চকরিয়ায় নিজের বসতভিটা থেকে একটি পরিবারকে উচ্ছেদে বাড়িতে ঢুকে দফায় দফায় হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছে নিকট স্বজন ও তাদের ভাড়াটে দুর্বৃত্তরা। এতে ওই পরিবারের প্রায় তিনলাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। বাড়ি যাওয়ার চলাচল পথ বন্ধ করে ও প্রাত্যহিক কাজে ব্যবহৃত টিউবওয়েল এবং লাট্রিন ভাংচুর করে গত একমাস ধরে কার্যত পরিবারটির নারী পুরুষ সদস্যদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এখানে শেষ নয়, ভুক্তভোগী পরিবারটি পুরুষ সদস্যরা যাতে বাড়িতে আসতে না পারে সেই জন্য তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে সাজানো অভিযোগে আলাদা দুটি মামলা। এ অবস্থার কারনে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা মামলার ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। চকরিয়া পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা জালিয়াপাড়া গ্রামে ঘটেছে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর এ ঘটনা।
ভুক্তভোগী পরিবারটি গৃহকর্তা আবদুর রহিম (৫২) জানিয়েছেন, পৌরসভার জালিয়াপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। পরিবারের তাঁরা পাঁচ ভাই। কিন্তু বাবা হাজী আবদুস ছোবহান পৈত্রিক বসতভিটার পুরো জায়গা তাকে ছাড়া অন্য ৪ ভাইকে বন্টন করে দিয়েছেন। এ অবস্থার কারনে তিনি প্রায় আট কড়া জায়গা ক্রয় করে সেখানে বসতি নির্মাণ করে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোনমতে সংসার জীবন অতিবাহিত করে আসছেন।
আবদুর রহিমের অভিযোগ, পারিবারিক মনোমালিন্যের কারনে তার ভাই নুরুল আবছারের ইন্ধনে পরিবারের অন্য ভাইয়ের মিলে কিছুদিন ধরে তার পরিবারকে ক্রয়কৃত বসতভিটা থেকে জোরপুর্বক উচ্ছেদের জন্য নানাভাবে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর তার শাশুড় পাশের গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ সোলেমান অসুস্থ হলে তাকে স্থানীয় ইউনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে স্ত্রী ও ছেলে মেয়েসহ তিনি পরিবার সদস্যদের নিয়ে তাকে হাসপাতালে দেখতে যান। ওই সুযোগে ভাই নুরুল আবছার, আবদুল করিম ও নুরুল কবিরের নেতৃত্বে তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা মিলে তার (আবদুর রহিম) বাড়িতে ঢুকে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেন। এতে তার পরিবারের প্রায় তিনলাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। এ ঘটনার আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর একই কায়দায় বাড়িতে ঢুকে হামলা করে ভাইদের নেতৃত্বে ভাড়াটে দুর্বৃত্তরা। ওইসময় তাঁরা বাড়ির প্রাত্যহিক কাজে ব্যবহৃত টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী গৃহকর্তা আবদুর রহিমের অভিযোগ, তার বাড়িতে হামলার ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে হামলাকারী ভাই নুরুল আবছার, আবদুল করিম ও নুরুল কবিরকে আসামি করে উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মুলত এরপর থেকে অভিযুক্ত ভাইয়েরা বসতভিটা থেকে তার পরিবারকে উচ্ছেদের জন্য দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছে। ঘটনার পর থানা পুলিশের এসআই মাহাবুর রহমানসহ পুলিশের একটিদল স্ত্রী সাজেদা বেগম (৪০), মেয়ে মেরি আক্তার (১৯), ছেলে সোহেল (১৬) সহ পরিবার সদস্যদেরকে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিলেও বর্তমানে অভিযুক্তরা তাদেরকে অনেকটা জিন্মি করে রেখেছে। বাড়ি থেকে কোথাও বের হতে দিচ্ছেনা। আবার আমাকে (আবদুর রহিম) ও আমার বড় ছেলে রেজাউল করিমকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছেনা। অপরদিকে আমার বাড়ি থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়া বিপুল পরিমাণ মালামালও তাঁরা ফেরত দিচ্ছেনা।
গৃহকর্তা আবদুর রহিম বলেন, ঘটনার ব্যাপারে আমি স্থানীয়ভাবে সমাধাণের চেষ্টা করেছিলাম। এলাকার কাউন্সিলর, রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সমাজপতিদের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তাঁরা স্থানীয়ভাবে বিচারের তোয়াক্কা করেনা। এ অবস্থায় তাঁরা আমার পরিবারকে হয়রানী করার জন্য উল্টো নিজেরা পরিকল্পিতভাবে ঘটনা সাজিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে দুটি সাজানো মামলা দায়ের করেছে। বিষয়টি চকরিয়া থানার ওসিকে জানানো হলে তার নির্দেশে বুধবার সকালে চকরিয়া থানার এসআই কামাল হোসেন ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। তিনি ওইসময় আমার পরিবারের জিন্মিদশা দেখে অভিযুক্তদের থানায় হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ওইসময় তার সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ২নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিম।
জানতে চাইলে স্থানীয় ২নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিম বলেন, পরিবারটির অবরুদ্ধ থাকার কথা শুনে আমি পুলিশের সাথে গিয়ে দেখি বাড়িটি চারিদিকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ল্যাট্রিন ভেঙ্গে ফেলার কারনে পরিবার সদস্যরা বাড়ির ভেতর গর্ত করে প্রাত্যহিক কাজ সারছেন। এ ঘটনাটি বড় ধরণের মানবাধিকার লঙ্গনের সামিল। তিনি বলেন, থানার এসআই কামাল হোসেন সরেজমিন ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবাল হওয়ার পর বিষয়টি সমাধাণের জন্য অভিযুক্তদেরকে থানায় হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন। #
পাঠকের মতামত: