এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
চকরিয়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকালে বনকর্মী ও দখলবাজ চক্রের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে বনভুমি থেকে উচ্ছেদ করা হয় অবৈধ স্থাপনা। গতকাল রোববার দুপুরে চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী রেঞ্জের ডুলাহাজারা বনবিট ও রেঞ্জ কার্যালয়ের পাশে মালুমঘাট বাজারের পেছনে সংরক্ষিত আগর বাগানে উচ্ছেদ অভিযানে নামে প্রশাসন।
অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে স্থানীয় কয়েকজন দখলবাজ গতকাল দুপুর ১২টার দিকে উল্টো বনকর্মীদেরকে নানাভাবে বাঁধা সৃষ্টি করে। এ অবস্থার পর চকরিয়া থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বনবিভাগ সুত্র জানায়, গতকাল দুপুরে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ বেলায়েত হোসেন ও ফাসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মতিনের নেতৃত্বে বনকর্মীরা অভিযানে নামে। ওইসময় তাঁদেরকে স্থানীয় প্রভাবশালী দখলবাজরা নানাভাবে বাঁধা দেয়। পরে অবশ্য উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার খন্দকার ইখতেয়ার উদ্দিন আরাফাতের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে আগর বাগানের ভেতরে গড়ে তোলা তিনটি নতুন অবৈধ স্থাপনা ও কয়েকটি পুরাতন স্থাপনার ঘেরা বেড়া উচ্ছেদ করে।
অভিযানের সময় উপস্থিত কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ডিএফও হক মাহবুব মোরশেদ, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মো.নুরুল আমিন, চকরিয়া থানার এসআই অপু বড়–য়া, ডুলাহাজারা বনবিট কর্মকর্তা আতিকুল হক চৌধুরী, ফাঁসিয়াখালী বনবিট কর্মকর্তা এনামুল হক ও ডুলাহাজারা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান শওকত আালীসহ বনকর্মী ও একদল পুলিশ।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, গতকাল অভিযানে টিনের তৈরী কয়েকটি স্থাপনা ও ভাসমান ইট বিক্রির দোকান উচ্ছেদ করা হলেও বহাল রয়েছে বনাঞ্চলের জায়গায় নির্মিত বহুতল ভবনসহ সিংহভাগ অবৈধ বাড়িঘর। জানাযায় বনবিভাগের জায়গার উপর বিগত চল্লিশ বছর পূর্বে স্থাপিত হয় মালুমঘাট বাজারটি। পরে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে দোকান ঘরের পাশাপাশি জবর দখলকারীরা অবৈধভাবে বসতঘর নির্মাণ করে।
অভিযোগ রয়েছে বনকর্মীদের যোগসাজশে বনভূমি ক্রয়-বিক্রয় করে রীতিমত কোটিপতি বনে গেছেন স্থানীয় ডুমখালী গ্রামের হাজী জামাল উদ্দিনের পুত্র বাহাদুর হক। সাবেক বিএনপি’র কর্মী এ বাহাদুর বর্তমানে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পাটির সথে যোগসুত্র রেখে তার বনভূমি দখল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রভাবশালী বাহাদুর বর্তমানে মালুমঘাট বাজার সংলগ্ন দুই একরের অধিক বনভূমিজুড়ে নির্মাণ করেছে টিনসেট একাধিক অবৈধ পাকাবাড়ি।
অপরদিকে তার বড়ভাই ফরিদুল হক বাজারের উত্তর পাশে বনবিভাগের শতবর্ষী মাদার ট্রি কেটে বনভূমিতে নির্মাণ করছে বহুতল ভবন। কিন্তু রহস্যজনক কারনে বনবিভাগের কোন অভিযানই নজর দেয়নি তাদের দিকে।
ডুলাহাজারা বনবিট কর্মকর্তা আতিকুল হক চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যে মালুমঘাট বাজারের পেছনে বনবিভাগের সংরক্ষিত আগর বাগানে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী মিলে ভূমি দখলে নিতে নতুন ঝুড়িঘর নির্মাণ করছেন। বিষয়টি আমাদেরকে নজরে আসলে তা উচ্ছেদে গতকাল অভিযান চালাতে যাই। ওইসময় অভিযুক্তরা আমাকে বাধা দেন।
তিনি বলেন, এরপর দুপুরে উপজেলা সহকারি কমিশনার খন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত ও সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ বেলায়ত হোসেনের নেতৃত্বে প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ ওই স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
জানতে চাইলে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) হক মাহাবুব মোর্শেদ বলেন, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের বনভূমিতে ইতোমধ্যে দখলবাজ চক্রের গড়ে তোলা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আগামীতে পর্যায়ক্রমে সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। #
পাঠকের মতামত: