ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় পাহাড়ি ঢল থেকে মুক্তি মিলবে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বেড়িবাঁধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

প্রতিবছর বর্ষা এলেই চকরিয়ার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা চরণদ্বীপের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিভিন্ন ছড়া দিয়ে পাহাড়ের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে তাদের বসতবাড়ি তলিয়ে যায়। পানির তীব্রতায় ভেসে যায় হালের বলদ, মহিষ, ভেড়াসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণীও। এছাড়া মাসের পর মাস বানের পানিতে ভাসতে হয় তাদের। যুগ যুগ ধরে এই অবস্থা বিরাজমান থাকলেও এবার এসব মানুষের ভাগ্য বদলাবে একটি বেড়িবাঁধ। ইউনিয়নের চরণদ্বীপের ঠান্ডা মিয়ার বাড়ি থেকে সাতদরজা ুইস গেট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারের (৬৬ চেইন) একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ দ্রুতই এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে এই বেড়িবাঁধের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে বাকী কাজও শেষ হলে পুরোপুরি দুঃখ ঘুচবে এখানকার ১০ গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের। এতে যুগ যুগ ধরে ভোগান্তি পোহানো এসব মানুষের মাঝে এই বেড়িবাঁধ নিয়ে আশা–আকাঙক্ষার কমতি নেই।

বেড়িবাঁধের উপকারভোগী মানুষগুলো বলছেন, এ পর্যন্ত এই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ টেকসই ও যথাযথভাবেই চলেছে। অসম্পূর্ণ থাকা বাঁধের বাকি কাজও দ্রুত এগুচ্ছে। তবে এখান মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও আশা ভরসার এই বেড়িবাঁধ নির্মাণে যেন কোনো গাফেলতি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বহুল প্রতিক্ষিত এই বেড়িবাঁধটির নির্মাণকাজ চলছে। কাজটির বাস্তবায়ন করছে চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর। এজন্য চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আলী হোসেনকে প্রকল্প সভাপতি করে ইতোপূর্বে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা আকারে প্রেরণ করা হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। পরবর্তীতে অনেক দেন–দরবার করে প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন এবং বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয়ের প্রধান সহকারী বাবুল পাল জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপে দুই কিলোমিটার তথা ৬৬ চেইন বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এজন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় অর্থ হিসেবে ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়। দুর্গম চরণদ্বীপের ঠান্ডা মিয়ার বাড়ি থেকে সাতদরজা স্লুইস গেট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে গঠিত প্রকল্পের সভাপতি ও চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলী হোসেন বলেন, ‘পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলা হয়ে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ফাঁসিয়াখালী ছড়াখালসহ আশপাশের কয়েকটি ছড়াখাল দিয়ে প্রতিবছর বর্যামৌসুমে ভাটির দিকে নেমে আসে পাহাড়ি ঢলের পানি। এতে ইউনিয়নের চরণদ্বীপ এলাকার ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ বানের পানিতে ভাসতে থাকে মাসের পর মাস। একেবারে ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কোথাও চিলতে পরিমাণ জায়গা খালি পাওয়া যায় না মাথা গোঁজার জন্য। এমনকি বানের পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়া ছাড়াও হালের বলদ, মহিষ, ভেড়াসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণিও ভেসে যায়। এতে প্রতিবছর বর্ষামৌসুমে মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়।’সভাপতি আরো বলেন, ‘অনুন্নত এলাকার এসব মানুষের দুঃখ–দুর্দশার কথা মাথায় রেখে চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে মুক্তি দিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ জাফর আলমের কাছে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা চেয়ারম্যান সেই আবেদন নিয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রকল্পটি অনুমোদন করান। এতে বহুল প্রতিক্ষিত এই বেড়িবাঁধটির নির্মাণকাজ এখন চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়নের পথে।’

চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে আমার ইউনিয়ন যোগাযোগ, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে একেবারেই পিছিয়ে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষের কাছে আমার প্রতিশ্রুতিও ছিল এই বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করে প্রতিবছর বর্ষামৌসুমে তির সম্মুখীন হয়ে আসা মানুষকে মুক্তি দেওয়ার। অবশেষে সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বেড়িবাঁধটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে যাওয়ায়।’চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখন চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়নের পথে ২ কিলোমিটারের এই বেড়িবাঁধ। আর কয়েকদিন পরেই এটির নির্মাণ কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেই পাল্টে যাবে ইউনিয়নের দুর্গম চরণদ্বীপের দুটি ওয়ার্ডের অন্তত ১০ গ্রামের চিত্র। প্রতিবছর বর্ষা ও ভয়াবহ বন্যায় যেখানে মানুষ ব্যাপক তির সম্মুখীন হয়ে আসছিল, এবার সেই চিত্র আর থাকবে না।’

সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, চলতি বছরের বর্ষামৌসুম আসতে আর দেরি নেই। তাই দ্রুত এই বেড়িবাঁধের কাজ শেষ করতে তাদের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এজন্য বিপুল শ্রমিক নিয়োগের পাশাপাশি বড় বড় অংশে সহায়তা নেওয়া হচ্ছে এক্সাভেটরের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জুবায়ের হাসান বলেন, ‘চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপের এই বেড়িবাঁধটির কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। এজন্য প্রতিনিয়ত আমার দপ্তরের লোকজন কাজ তদারকি করছে। আমিও নিয়মিত পরিদর্শন করছি কাজের মান ঠিক রাখতে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ শুরশু হওয়ার আগেই এই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করতে প্রকল্প সভাপতিকে বার বার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যেই এই বেড়িবাঁধের অসম্পূর্ণ কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়ে যাবে। এতে সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে অবহেলিত থাকা এখানকার মানুষের।’ এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম বলেন, ‘আমি সবসময় মানুষের সুখ–দুঃখের সাথী হয়ে থেকে বেঁচে থাকতে চাই। কারণ জনগণই আমার একমাত্র ভরসাস্থল। কে কোন দল করে বা কোন এলাকার মানুষ কোন দলকে ভোট দেয় সেদিকে নজর না দিয়ে এলাকার উন্নয়নকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের দুর্গম এবং অবহেলিত চরণদ্বীপের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষকে ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ দিতে বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয় যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখিয়ে বেড়িবাঁধটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন।’

পাঠকের মতামত: