ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় নদীর চর দখলে নিতে ২৬টি বসতঘরে আগুন: মহিলা নিহত, তাণ্ডবে দুই কোটি টাকার সম্পদ লুট, ৫ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন

চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর জেগেউঠা চর দখলে ২৬টি বসতঘরে আগুন দিয়েছে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তচক্র

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে জেগে উঠা চরের খাস জমি নিতে রাতের আঁধারে একটি গ্রামের ২৬টি বসতঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। একশ থেকে দেড় শতাধিক অস্ত্রধারী একটি দুর্বৃত্তদল বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র নিয়ে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে বৃহস্পতিবার ভোররাত চারটার দিকে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলছাদক ডাঙ্গারচর এলাকার ওই গ্রামে প্রবেশ করে। পরে চার ঘন্টা ধরে ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে দেড় হাজার মণ ধান, কয়েক’শ মণ মরিচ, আলু ও শিমের বিচি, ৫০ মণ মতো চাল, ৩৫/৪০টির মতো গবাদিপশু, তিনটি মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, টেলিভিশন এবং বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ অন্তত দুই কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়।

লুটপাটের পর দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার মুর্হুতে ওই গ্রামের ২৬টি বাড়ি একের পর এক আগুন ধরিয়ে দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় আগুনে পুড়ে মারা যায় মনোয়ারা বেগম (৫০) নামে এক নারী। তিনি ওই এলাকার মোজাহের আহামদের স্ত্রী। এছাড়া দূবৃত্তদের এলাপাতাড়ি গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নারী-পুরুষসহ অন্তত ১৫ ব্যক্তি আহত হয়। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোররাত ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্তটানা চারঘন্টা ধরে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলছাদক ডাঙ্গারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নে নারকীয় তাণ্ডবের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার ১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ জাফর আলম, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান,ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাছান, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. আমিনুল ইসলাম, কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন ও বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার প্রমুখ। এ সময় সাংসদ জাফর আলম ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে চাউল ও বাড়ি নির্মানের জন্য টিন সহায়তার আশ্বাস দেন।

আক্রান্ত পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসি জানায়, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলছাদক ডাঙ্গারচর এলাকায় মাতামুহুরী নদী থেকে প্রবাহমান একটি খালের জেগে উঠা চর (খাস জমি) দখলে নিতে বৃহস্পতিবার ভোররাত চারটা থেকে ব্যাপক তান্ডব চালায় দূবৃত্তরা।

অভিযোগ উঠেছে, পাশের বরইতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা দিদার মেম্বারের নেতৃত্বে একশ থেকে দেড় শতাধিক দূবৃত্ত অন্তত ৫০টি বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র নিয়ে কয়েকশত ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে প্রথমে ওই গ্রামে প্রবেশ করার পর এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পরে চার ঘন্টা ধরে ব্যাপক লোটপাট চালিয়ে দেড় হাজার মণ ধান, কয়েক’শ মণ মরিচ, আলু ও শিমের বিচি, ৫০ মণ মতো চাল, ৩৫/৪০টির মতো গবাদিপশু, তিনটি মোটরসাইকেল, ২৪টি টিউবওয়েল, ফ্রিজ, টেলিভিশন এবং বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্র ও নগদ টাকাসহ অন্তত দুই কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। লুটপাটের পর ২৬টি বাড়ি একের পর এক আগুন ধরিয়ে দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় দূবৃত্তরা।

হামলার তাণ্ডব ও আগুনে সর্বস্ব খোয়ানো বাড়ির মালিকরা হলেন, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলছাদক ডাঙ্গারচর এলাকার নুরুল হোসাইনের ছেলে কৃষক মোহাম্মদ ইসমাইল, মোক্তার আহামদের ছেলে নুরুল হোসাইন, মোজাহের আহামদের ছেলে আনোয়ার হোসাইন ও মোহাম্মদ ফোরকান, আহামদ হোসেনের ছেলে মোজাহের আহমদ, মোজাহের আহামদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, মৃহ আহামদ হোসেনের ছেলে মোজাম্মেল হক ও মো. জাহেদ, আবুল হোসেনের ছেলে নাসির উদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও জমির উদ্দিন, মকবুল আলীর পুত্র আবু তাহের, আবু তৈয়বের ছেলে শাহ আলম, সাহাব উদ্দিন,সালাহ উদ্দিন ও নেজাম উদ্দিন, আবু তাহেরের ছেলে আবু ছালেক ও বশির আহমদ, মৌলভী আব্দুল্লাহর ছেলে মো. মোস্তফা, আবুল হোসেনের ছেলে জয়নাল আবেদীন, এজাহার আহামদের ছেলে নবী হোসাইন, আবুল কাশেমের ছেলে আবু হানিফ ও আলী আকবর প্রমুখ। ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন জানায়, লুট করে নেয়া সহায় সম্পদসহ অগ্নিকান্ডে তাদের অন্তত ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান জানান, কৈয়ারবিলের খিলছাদক অংশে মাতামুহুরী নদী তীরে জেগে ওঠা চরের জায়গার দখল নিতে এই তান্ডব চালিয়েছে পার্শ্ববর্তী ইউপির একদল গ্রামবাসী। যারা এই তাণ্ডব চালিয়েছে তাদেরকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

ঘটনার সময় এক নারী আগুনে পুড়ে মারা যাওয়াসহ অসংখ্য নারী-পুরুষ আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ওসি বলেন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। যারাই এই অমানবিক ঘটনায় জড়িত তাদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।##

পাঠকের মতামত: