এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে সেফ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের চট্টগ্রামের একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। চুক্তি মোতাবেক তিনবছরের মধ্যে ৫তলা বিশিষ্ঠ বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও গেল ১২ বছরে শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। এমনকি ভবন নির্মাণকাজ সমাপ্ত করতে জমি মালিকরা বারবার অনুরোধ করা হলেও তা উপেক্ষা করে চলছেন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য জসিম উদ্দিন।
জমি মালিকদের অভিযোগ, ২০১০ সালের চুক্তিপত্রের আলোকে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য তাঁরা বিভিন্নভাবে চেষ্ঠা তদবির করলেও তাতে বারবার অভিযুক্ত ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈনউদ্দিন হাসান চৌধুরীর নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাব দেখাচ্ছেন। এই অবস্থায় বাণিজ্যিক ভবন (মার্কেট) নির্মাণের জন্য বাড়িভিটার জমি ছেঁেড় দিয়ে এখন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন জমি মালিকরা। পাশাপাশি জমি হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন। সোমবার দুপুরে চকরিয়া পৌরশহরের পুরাতন এসআলম কাউন্টারের বিপরীতে মহাসড়কের পুর্বঅংশে নির্মিতব্য মার্কেটের অফিসে এসব অভিযোগ তুলেছেন জমি মালিকরা।
লিখিত বক্তব্য দেন জমি মালিক ছৈয়দ আলম। এসময় উপস্থিত ছিলেন জমি মালিকপক্ষের সুলতান আহমদের তিন মেয়ে আনোয়ারা বেগম, মনোয়ারা বেগম, সাহানা বেগম, আবদুল মোনাফ সওদাগর, রফিকুল ইসলাম, হাজি সিরাজুল ইসলামের মেয়ে মর্তুজা বেগম, দলিলুর রহমানের ছেলে আবদুর রশিদসহ ১২ জন অংশিদার।
জমি মালিক ছৈয়দ আলম বলেন, চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা মৌজার বিএস ২৯৭ খতিয়ানের ৬২৯ বিএস দাগের আমাদের পৈত্রিক ও াড়িভিটার জমিতে একটি বহুতল মার্কেট (বাণিজ্যিক ভবন) নির্মাণের জন্য ২০১০ সালের ৩ মে তারিখে চট্টগ্রামের জুবলী রোডস্থ ৬১ কামাল চেম্বারের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান সেফ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হই। চুক্তিপত্রে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য জসিম উদ্দিন, সহযোগি মনজুর আলম, আবদুল আউয়াল ও সেলিম উদ্দিন স্বাক্ষর করেন।
চুক্তির শর্তাবলীতে উল্লেখ্য করা হয়, আমাদের জমিতে তিনবছরের মধ্যে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান সাততলা ফাউন্ডেশনে ৫ তলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করবে। এরপর চুক্তি মোতাবেক জমি মালিকরা ৫০ ভাগ ও ডেভেলাপার প্রতিষ্ঠান ৫০ ভাগ দোকান বুঝে নিয়ে ভোগদখল করবে। এছাড়াও চুক্তিতে উল্লেখ্য করা হয়, তিনবছরের মধ্যে ৫ তলা ভবন নির্মাণ কাজ করতে কোনধরণের সমস্যা হলে আরও একবছর সময় বর্ধিত করা হবে।
জমি মালিক ছৈয়দ আলম দাবি করেন, ২০১০ সালে চুক্তিপত্র সম্পাদিত হলেও গত ১২বছরে ডেভেলাপার প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ করেছে মাত্র ২তলা পর্যন্ত। সেখানেও তাঁরা অনিয়ম করেছে। দুই তলা ভবনের ছাদ ঢালাই হলেও মার্কেটটি চালু করা হয়েছে শুধুমাত্র প্রথম তলায়। আর চালু করা দোকানগুলোও লাগিয়ত দিয়ে এবং বিক্রি করে সমুদয় টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ডেভেলাপার প্রতিষ্ঠান।
এরপরও আমরা ২০১০ সাল থেকে চলতি ২০২২ সাল পর্যন্ত অসংখ্যবার ডেভেলাপার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মার্কেটের পুরো কাজ সমাপ্ত করতে বারবার অনুরোধ করেছি। এমনকি মার্কেটের অসমাপ্ত নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখতে স্থানীয়ভাবে তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে চলছেন।
জমি মালিকরা অভিযোগ তুলেছেন, গেল বারবছর সময়ে তাঁরা মার্কেটের নির্মাণকাজ শেষ করতে বারবার প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে দারস্ত হয়েছেন। এসময় বিচারকরা ডেভেলাপার প্রতিষ্ঠানের মালিক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যখনই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন, কথা বলতে চান, তখন তিনি নানাভাবে চলচাতুরীর আশ্রয় নেন।
পাশাপাশি আমরা চুক্তিপত্রের আলোকে মার্কেট নির্মাণের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্ঠা তদবির করলে উল্টো অভিযুক্ত ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন আমাদেরকে হয়রাণি করার কু-উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈনউদ্দিন হাসান চৌধুরীর নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাবিত করছেন। মুলত তিনি (জসিম উদ্দিন) চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। সেই সুবাদে তিনি মার্কেট নির্মাণ সংক্রান্ত প্রতিটি বিচারালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক ওই নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
এই অবস্থায় মার্কেট নির্মাণের জন্য পৈত্রিক জমি ও বাড়িভিটার জায়গা ছেঁেড় দিয়ে গত ১২বছর ধরে জমি মালিকদের পরিবার সদস্যরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পাশাপাশি নির্মিত মার্কেটের দোকানঘরও বুঝিয়ে দিচ্ছেনা। আমরা চুক্তিভঙ্গের মাধ্যমে এইধরণের প্রতারণার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করছি। আমরা ডেভেলাপার প্রতিষ্ঠানের লাগামহীন হয়রাণি ও দুর্ভোগ থেকে পরিত্রান চাই।
জানতে চাইলে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান সেফ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, মার্কেটটির যথদুর কাজ হয়েছে, তাঁর অংশ মোতাবেক দোকান জমির মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে মালিকদের মধ্যে কয়েকজন মার্কেট নির্মাণ কাজে বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করছেন। একেক সময় একেকজন পাল্টাপাল্টি কথা বলেন। মুলত তাদের (জমি মালিক) ঐক্যমতের অভাবে চুক্তির আলোকে সঠিক সময়ে মার্কেট নির্মাণ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের যে অভিযোগ, হয়রাণি বা কাউকে দিয়ে প্রভাব দেখানোর বিষয়টি একেবারে অসত্য।
তিনি উল্টো অভিযোগ করেন, জমি মালিকপক্ষের অংশিদার ছৈয়দ আলম মার্কেট নির্মাণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কারণে কথা বলার সময় গালিগালাজ করেন। টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে কেন গালিগালিজ শুনতে হবে। তাদের কাছে ফেরতযোগ্য আমানত হিসেবে আমাদের জমা থাকা টাকাগুলোও দিচ্ছেনা। কেউ সেখানে কাজ করতে গেলে আবার তাদেরকে মারধর করা হয়। মুলত এসব কারণে বাধ্যহয়ে মার্কেট নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছি। ##
পাঠকের মতামত: