শাহেদ মিজান, কক্সবাজার :
রাতের আঁধারে শিক্ষকের নেতৃত্বে ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে ৭০বছরের ভোগদখলীয় জমি জবর-দখল করেছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলা। বিদ্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে ওই জমি দখল করেছে বলেছে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। জমি দখল করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয় ধারালো অবৈধ অস্ত্র। ছাত্র-শিক্ষকদের সাথে চেয়ারম্যান বাবলার ব্যক্তিগত লাঠিয়াল বাহিনীও জবর-দখলে অংশ নিয়েছিলো বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৬ মে ভোররাতে এই ঘটনা ঘটে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধারালো অস্ত্র হাতে’র ছবি ছড়িয়ে পড়লে পুরো উপজেলা জুড়ে তোলপাড় চলছে।
ভুক্তভোগী স্থানীয় জমিদার বাড়ির বংশধর ওয়ালিদ ইবনে মোস্তাক বাদল মিয়া জানান, রাতের আঁধারে ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম নাম ভাঙিয়ে বিদ্যালয় সংলগ্ন ওয়ালিদ ইবনে মোস্তাক বাদল মিয়ার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ১.৭০ একর জমি দখল করেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা। বাবলার নির্দেশে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এমডি গিয়াস উদ্দীনের নেতৃত্বে হোস্টেলের ২৫/৩০ জন ছাত্র ধারালো দা নিয়ে জমি করে। সময় তাদের সাথে যোগ দেয় বাবলা চেয়ারম্যনের ভাই সজারুল ইসলাম, আবু তালেব মেম্বার, মনোয়ারুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন। তারা জমিটি দখল করে কাঁটাতারের বেড়া ও সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে সকাল হওয়ার আগেই স্থান ত্যাগ করে।
বিভিন্ন কাগজপত্র সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের ইলিশিয়া জমিদার বাড়ী এলাকার হাজী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর ওয়ারিশদের সাথে পৈত্রিক সূত্রেপ্রাপ্ত জায়গা জমি নিয়ে একই জমিদার পরিবারের মোক্তার আহমদ চৌধুরী ওয়ারিশদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। পশ্চিম বড় ভেওলা মৌজার আর এস ১৪৯খতিয়ানের জায়গা-জমি নিয়ে চট্টগ্রাম ২য় সাব জজ আদালত মোকামে ২২/৪৪ ও ৪২/৫২ নিয়ে দীর্ঘ সময় মামলা ছিল এবং পরবর্তীতে আদালতে ওই মামলাগুলো নিস্পত্তিও হয়। সে অনুসাওে আর.এস ২০৮দাগের ৫.৭শতক জায়গা জমি ইলিশিয়া জমিদার পরিবারের বিভিন্ন ওয়ারিশ বসতি ও নানা স্থাপনা নির্মাণ করে ভোগ দখলে রয়েছে। তার মধ্যে হাজী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর ওয়ারিশ আর.এস ২০৮ দাগে রয়েছে ১.৬২একর, একই আর এস দাগে মোক্তার আহমদ চৌধুরী নামে রয়েছে ১১শতক, ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে ২.৩৩শতক, ফয়েজ আহমদ চৌধুরীর নামে রয়েছে ৭৯ শতক ও ইলিশিয়া জামে মসজিদের নামে আর এস ২০৮ দাগে ২০শতক জমি।
তিনি বলেন, বর্তমানে ২৭৭নম্বর খতিয়ানের ৭১৫দাগের বিদ্যালয়ের জমিটি বিএস রেকর্ডমূলে আমাদের যা বিদ্যালয়ে দখলে। সে কারণে বিদ্যালয়ের নামে বিএস ৭১২দাগের ১.৭০একর জমিটি আমরা দীর্ঘ ৭০বছর ধরে ভোগ করে আসছি। বিএস সংশোধনের জন্য মামলা চলমান রয়েছে। মামলা রায় হলেও বিদ্যালয়ের জমি বিদ্যালয় পাবে আর আমাদের জমিটি আমাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু রায়ের আগেই আমাদের দখলীয় জমিটি দখল করে ফেলা হয়েছে।
ইলিশিয়া জমিদার পরিবারের সন্তান ওয়ালিদ ইবনে মোস্তাক (বাদল মিয়া) স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ৭০বছরের ভোগদখলীয় আমার পৈত্রিক জমি রাতের আঁধারে ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এমডি গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে অস্ত্রধারী ছাত্ররা দখল করে। এতে বাধা দিতে গেলে শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন ছাত্রদের আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়ে ধারালো দা, লোহার রডসহ তৈরিকৃত নানা সরঞ্জামাদি দিয়ে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেন। বর্তমানে ওই ভোগদখলীয় জায়গায় দুটি পরিবার পনের বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। জমিটি দখল ঘেরাও দিয়ে ফেলায় চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশ্রিত পরিবারগুলো এখন বন্দি অবস্থায় রয়েছে। এক সাথে ওই জমিটি আশ্রিত দু’টি পরিবারের লোকজনকেও হুমকি দেয়া হয়েছে। আশ্রিত পরিবারের মেয়েদের নির্যাতনের হুমকি দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যে জায়গাটি বিদ্যালয়ের ছাত্রদের দিয়ে দখলে নেয় তা সম্পূর্ণ পূর্বরিকল্পিতভাবে করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা। তিনি যদি শিক্ষক ও ছাত্রদের ইন্ধন না দেন একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে জমিদার বাড়ীর ৭০বছরের দখলীয় জায়গা কি করে জবর দখলে নিতে পারে? মূলত চেয়ারম্যান হিংসাপরায়ণ হয়ে বিদ্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে জায়গাটি দখল করেছে। এই নিয়ে জায়গার মালিক শিক্ষার্থী দিয়ে জায়গা জবর-দখলে ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান।
এদিকে বাবলা চেয়ারম্যান সভাপতি হওয়ার সুবাদে তার ব্যক্তিগত ফায়দার জন্য বিভিন্ন ভাবে ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রদের ব্যবহার করছে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এভাবে এক সময় চেয়ারম্যান ছাত্রদের দিয়ে স্থানীয় মকছুদ আহামদের বাড়ি ও গাড়িসহ গ্যারেজে ব্যাপক ভাংচুর করিয়েছিলেন। এখন তিনি কথায় কথায় প্রতিপক্ষকে ছাত্রদের লেলিয়ে দেয়ার হুমকি দেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে পশ্চিম বড়ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাবলা বলেন, জমি দখলের বিষয়টি সঠিক নয়। জমিটি দানের মাধ্যমে প্রাপ্ত হিসেবে বিদ্যালয়ে নামে বিএস খতিয়ান হয়েছে। কিন্তু নিজের জমি দাবি করে বাদল মিয়া আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। দীর্ঘদিন ঘেরাও ছাড়াও থাকলেও আদালতের রেফারেন্সের কারণে জমিটি ঘেরাও দেয়া হয়েছে। ছাত্রদের ব্যবহার ও তাদের হাতে ধারালো দা তুলে দেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।
শিক্ষার্থীদের জমি দখলে ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, এ বিষয়ে কেউ আমাকে বলেনি। কেউ যদি লিখিত ভাবে জানায় তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মতামত: