ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৮০ বস্তা চাল নিয়ে চালবাজি, খাদ্য গুদামের ওসিকে বদলী

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে ১৮০ বস্তা চাল নিয়ে চালবাজির ঘটনায় অবশেষে খাদ্য গুদামের ওসিকে বদলী করা হয়েছে। সোমবার ৪ এপ্রিল খাদ্য বিভাগের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো.জহিরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান খানকে চলাচল ও সংরক্ষন নিয়ন্ত্রকের দপ্তর চট্টগ্রামে পরিদর্শক পদে শাস্তিমুলক বদলী করা হয়েছে। একইসঙ্গে অপর একটি আদেশে চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের পুরানো দুই কর্মচারী আলাউদ্দিন ও টিকলূ চৌধুরীকেও বদলী করা হয়েছে। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিক।

তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়ন ও বদলী একটি বাধ্যতামুলক পদ্ধতি। মুলত উর্ধ্বতন প্রশাসন চাকুরী বিধিমালার আলাকে চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের ওসি এবং তাঁর অফিসের দুই কর্মচারীকে বদলী করেছেন। পাশাপাশি ওসি পদে খাগড়াছড়ি জেলার ছোটমেরুং খাদ্য গুদামের ওসি বিধান বড়ুয়াকে চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামে ন্যাস্ত করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব ডিলার জুবাইরুল ইসলামের মাধ্যমে বিএমচর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় কার্ডধারী ৬৫২ জন উপকারভোগী ১০ টাকা মূল্যের ৩০ কেজি করে চাল পেয়ে থাকেন। গত ১৭ মার্চ মোট ৬৫২ জন উপকারভোগীর জন্য বরাদ্দকৃত ৩৯১ বস্তা চাল ডিলার জুবাইরুল ইসলাম চিরিঙ্গা খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহ করেন।

খাদ্যবান্ধব ডিলার জুবাইরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে ছাড়পত্র পেয়ে গত ১৭ মার্চ তিনি চিরিঙ্গা গুদাম থেকে ৬৫২ জন উপকারভোগীর জন্য ৩৯১ বস্তা চাল সংগ্রহপুর্বক তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘চাউল বিতান’ বিএমচর এর গুদামে সংরক্ষণ করেন। উল্লেখিত চাল ২১ মার্চ থেকে উপকারভোগীর মাঝে বিতরণের কথা থাকলেও এদিন তিনি দেখতে পান এসব চালের বস্তায় ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা মোড়ক থাকলেও ভেতরে রয়েছে দেশীয় জাতের চাল।

তিনি বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে সংগ্রহ করা ৩৯১ বস্তা চালের মধ্যে ১১ বস্তা ভিয়েতনামের চাল হলেও বাকি ৩৮০ বস্তা নিম্মমানের স্থানীয় চাল। তিনি বিষয়টি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিককে অবহিত করে চালের কিছু নমুনা নিয়ে ১৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে তাঁর (উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিক) সঙ্গে সাক্ষাত করেন। পরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাকে বলেন, আপাদত বিতরণ বন্ধ রাখুন, রোববার ২১ মার্চ এসব চাল পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।

জুবাইরুল ইসলাম বলেন, পরবর্তীতে বিষয়টি খাদ্য গুদামের ওসি আবদুর রহমান খানের সাথে কথা বলে তাঁর নির্দেশে ২০ মার্চ রাতে চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের কর্মচারীসহ দু’টি ট্রাকে করে আরো ৩৮০ বস্তা ভিয়েতনামের চাল আমার গুদামে সংগ্রহ করা হয়। এসময় চালগুলো আনলোড করার পর একটি ট্রাকে করে আগে পাঠানো নিন্মমানের ২০০ বস্তা চাল ফেরত পাঠানো হয়। রাত বেশি হওয়ার অজুহাতে ওইদিন আর অবশিষ্ট ১৮০ বস্তা চাল আমার গুদামে ফেলে যায়। তবে পরের দিন সকালে ওই ১৮০ বস্তা চাল ফেরত নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন খাদ্য গুদামের ওসি।

ডিলার দাবি করেন, ২২ মার্চ সকাল থেকে উপকারভোগীরা দোকানে চাল নিতে এসে ভিড় করায় ওইদিনও চাল গুলো ফেরত নিয়ে যায়নি। পরবর্তীতে এসব চাল আমার গুদামে পড়ে থাকে। ডিলার জুবায়ের আরও বলেন, চাল বিতরণের দিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আমার বিতরণ পয়েন্টে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান খাঁন। তিনি বিতরণকৃত মাস্টাররোলে স্বাক্ষরও করেছেন। এ সময় তিনি পরদিন ২৩ মার্চ জমারাখা ১৮০ বস্তা নিন্মমানের চাল ফেরত নিয়ে যাবেন বলে কথা দিয়ে চলে যান।

খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির ডিলার জুবাইরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মুলত খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তার যোগসাজসের মাধ্যমে ডিলারদের কাছে ভিয়েতনামের বদলে স্থানীয় জাতের চাল সরবরাহ দিয়ে বাণিজ্য করেছে। একইভাবে তাঁরা ৩৮০ বস্তা নিন্মমানের চাল আমাকে সরবরাহ দিয়ে বিতরণ করাতে না পেরে জমারাখা ওই চাল উল্টো আমার ঘাঁেড় চাপানোর চেষ্ঠা করছে। এরই অংশহিসেবে তাঁরা ইতোমধ্যে আমার নামে মামলা দিয়ে নিজেদের দায় থেকে নিস্তার পেতে কাজ করেছেন।

চকরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিক বলেন, উদ্ভুদ্ধ প্রেক্ষাপটের আলোকে চিরিঙ্গা খাদ্যগুদাম ভিজিটকালে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রূপান্তর চাকমা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান ডিলার জুবাইরুল ইসলামের গুদাম থেকে ২৯১ বস্তা চাল জব্দ করেন। তদমধ্যে ১১১ বস্তা চাল বিতরণের প্রক্রিয়াধীন থাকলেও অবশিষ্ট ১৮০ বস্তা চাল ডিলারের গুদামে মজুদ থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে।

তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওই ডিলারের গুদামটি সীলগালা করা হয়। তিনি বলেন, যেহেতু ডিলারের গুদাম থেকে ১৮০ বস্তা চাল বৈধ কাগজপত্র বিহীন পাওয়া গেছে, তাই বিষয়টির আলোকে চকরিয়া থানায় মামলা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারের গুদাম থেকে নিন্মমানের ১৮০ বস্তা চাল জব্দের ঘটনায় খাদ্য বিভাগের উর্ধ্বতন প্রশাসন বিষয়টির রহস্য উৎঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ইতোমধ্যে উল্লেখিত তদন্ত কমিটি দুইদফায় চিরিঙ্গা খাদ্য গুদাম ও চকরিয়ার বিএমচর ইউনিয়নে ডিলারের গুদাম পরিদর্শন করেন। তদন্তকালে খাদ্যগুদামে মজুদ চালের স্টক, হিসাবের কাগজপত্র এবং ডিলারের বিতরণকৃত চালের মাস্টাররোল যাছাই বাছাই করেন এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহন করেন।

ডিলার জুবাইরুল ইসলাম দাবি করেন, তদন্তকালে আমার গুদাম থেকে জব্দ করা ১৮০ বস্তা চাল ভিয়েতনাম থেকে আমদানিকৃত চালের পরিবর্তে নিন্মমানের চাল সরবরাহ করার বিষয়টি প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কমিটি। সেই ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি খাদ্য গুদামের ওসি এবং দুই কর্মচারীকে দায়ী করেছেন।

এরই প্রেক্ষিতে সোমবার ৪ এপ্রিল খাদ্য বিভাগের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো.জহিরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান খানকে চলাচল ও সংরক্ষন নিয়ন্ত্রকের দপ্তর চট্টগ্রামে পরিদর্শক পদে বদলী করা হয়েছে। একইসঙ্গে অপর একটি আদেশে চিরিঙ্গা খাদ্য গুদামের পুরানো দুই কর্মচারী আলাউদ্দিন ও টিকলূ চৌধুরীকেও বদলী করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: