ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় একটি বসতবাড়ি নিয়ে সংখ্যালঘু দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ

chakaria-pictuer-07-12-16এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়খালী ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের দিগরপানখালী এলাকায় একটি বসতবাড়ি ও ভিটার জায়গা নিয়ে দুটি সংখ্যালঘু পরিবার একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি হামলা ভাংচুর, লুটপাটের অভিযোগ করেছেন। এক পক্ষের পারবতি বালা দাশ অভিযোগ করেছেন, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ২০-২৫জনের দুবর্ৃৃত্তদল রাতের আঁধারে জায়গা জবরদখলের জন্য তার বসতবাড়িতে হামলা করেছে । ওইসময় বাড়িটি ভেঙ্গে ও কেটে তছনছ করে দেয়া হয়েছে। এসময় স্বর্ণালঙ্কারসহ বাড়ির প্রায় সাড়ে ৩লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। ঘটনার সময় বাধাঁ দিতে গেলে তাকেও ছেলে সমুন দাশকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তাদেরকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরপক্ষের সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য গোপাল দাশ অভিযোগ তুলেছেন, একইদিন দিবাগত রাত দুইটার দিকে দৃর্বৃত্তরা তাদের বসতঘরে হামলা করে ভাঙচুর, নগদ টাকা ও মালামাল লুট করেছে স্বশস্ত্র লোকজন। এসময় বিবেকানন্দ দাশ নামের এক ব্যক্তিকে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়েছে। ঘটনার খবর শুনে লোকজন এগিয়ে গেলে স্বশস্ত্র লোকজন পালিয়ে যায়। এঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য গোপাল কান্তি দাশ বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় এজাহার দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় বুধবার দুপুরে আক্রান্ত অপর পরিবারের গৃহকর্ত্রী পারবতি বালা দাশ বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় চারজনের নাম উল্লেখ্য করে আরো ২০-২৫জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। এজাহারনামীয় চারজন হলেন চকরিয়া পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দুপাড়া গ্রামের মৃত অন্নদা চরণ দাশের ছেলে লক্ষন দাশ, তার ভাই গোপাল দাশ, ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের দিগরপানখালী গ্রামের মৃত মহেন্দ্র দাশের ছেলে কৃষ্ণ দাশ ও মৃত সচিন্দ্র দাশের ছেলে উত্তম দাশ।
চকরিয়া থানায় দায়ের অভিযোগে ভুক্তভোগী পরিবারের গৃহকর্ত্রী উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের দিগরপানখালী হিন্দুপাড়া গ্রামের বিন্দু চন্দ্র দাশের স্ত্রী পারবতি বালা দাশ (৫০) ২০১২ সালের ১০ মে চকরিয়া সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে ৩৪৪১ নম্বর রেজিষ্ট্রাট কবলামুলে তার স্বামী বিন্দু চন্দ্র দাশ দিগরপানখালী মৌজার ২৬৪ নম্বর বিএস খতিয়ান থেকে সৃজিত ৪৫১নম্বর বিএস খতিয়ানের মালিক মানিক বরণ দে’র কাছ থেকে বিএস ৯২৮, ৯২৯ ও ৮৮১ আন্দর দাগাদির ৯২৮ দাগ থেকে ৫ দশমিক ৬৭ শতক জায়গা ক্রয় করেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের গৃহকত্রী জানান, ক্রয়কৃত ওই জায়গায় চকরিয়া পৌরসভার মেয়রের অনুমতিক্রমে তাঁরা বসতবাড়ি নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে শান্তিপুর্ণভাবে বসবাস করছেন। কিন্তু কিছুদিন ধরে তাদের বসতভিটার জায়গা দুর্লোভের বশবর্তী হয়ে অভিযুক্তরা জবরদখলের অপচেষ্টা শুরু করে। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে গত ২৯ নভেম্বর চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী রুজু করেন।
পারবতি বালা দাশ দাবি করেন, তিনি জিডি করার পর উল্টো অভিযুক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে নামে থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। দুইপক্ষের বিষয়টি নিয়ে আগামী শুক্রবার (৯ডিসেম্বর) বৈঠকের সিদ্বান্ত নিয়েছে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা।
থানায় বৈঠক করার কথা থাকলেও তা অগ্রাহ্য করে অভিযুক্তরা দলবদ্ধ হয়ে সর্বশেষ মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১২টার দিকে (আমার বাড়িভিটা দখলের জন্য হামলা চালায়। ওইসময় তাঁরা বসতবাড়ির ঘেরাবেড়া কেটে ও ভেঙ্গে তছনছ করে। ঘটনার সময় বাধা দিতে গেলে অভিযুক্তরা তাকে ও ছেলে সুমন দাশকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এমনকি ঘটনার সময় তাকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা।
অভিযুক্তরা এসময় তাদেরকে কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল সেট লুট ও বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে বলে থানায় দায়ের করা এজাহারে দাবি করেন বাদি পারবতি বালা দাশ।
অপর পক্ষের ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, দিগরপান খালী এলাকায় গোপাল কান্তি দাশ, তাঁর বাবা ও ভাইয়ের দখলীয় ৩৯ শতক জায়গা ও জমি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চিরিংগা হিন্দুপাড়া এলাকার সুনীল কান্তি দাশ ওরফে মামলাবাজ সুনীল, দিগরপান খালী এলাকার মিন্টু দে, নির্মল দাশ, বিন্দু চন্দ্র দাশ, সুমন দাশ সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে দখল করার চেষ্টা করছে। কয়েকবার সেখানে হামলা চালিয়ে বসতঘরে ভাঙচুরও চালিয়েছে। এঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা ও অভিযোগ বিচারাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সুনীলের নেতৃত্বে মিন্টু, নির্মল, বিন্দু ও সুমনের নেতৃত্বে অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা বসতঘরে হামলা করে। একপর্যায়ে বসতঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গোপাল কান্তি দাশের ভাগিনা বিবেকানন্দ দাশকে গুলি করতে উদ্যত হয় সন্ত্রাসীরা। তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করে টেলিভিশন, সিডি, স্যামসাং মোবাইল ফোন, বিভিন্ন আসবাবপত্র ও কাপড়চোপড় লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া বসতঘরের চারপাশের ঘেরাবেড়া ভেঙে দেয় সন্ত্রাসীরা। এসব জিনিসপত্রের আনুমানিক মূল্য দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা। ভাঙচুর শেষে জায়গা ছেড়ে দিতে সন্ত্রাসীরা হুংকার ছেড়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
গোপাল কান্তি দাশ অভিযোগ করেন, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের খরিদা ও দখলীয় জমি দখলে নিতে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এরই জের ধরে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এঘটনায় আমি থানায় এজাহার দায়ের করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি ও আমার পরিবার এব্যাপারে প্রশাসনের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম খাঁন বলেন, বসতবাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারটির গৃহকর্ত্রী পারবতি বালা দাশ বাদি হয়ে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, অপর পক্ষের কোন ধরণের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

পাঠকের মতামত: