ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

বন্য হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে গড়ে তোলা

চকরিয়ার সেই অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

চকরিয়া (কক্সবাজা) প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর উচিতারবিলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বন্য হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংসসহ অর্ধ শতাধিক পাহাড় সাবাড় করে গড়ে তোলা অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয় পরিবেশ সচেতন হাজারো নারী-পুরুষ। এর আগে তারা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচীও পালন করে। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী রাস্তার মাথায় এই কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামেন তারা। এতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় প্রায় আধঘন্টা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল।

কর্মসূচী চলাকালে এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ানের এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে এবং তাঁর নির্দেশে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালীর হস্তক্ষেপে পরিবেশ সচেতন ক্ষুদ্ধ জনতা প্রায় আধঘন্টা পর অবরোধ তুলে নেয়। এতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে মহাসড়কের উভয়দিকে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে অবরোধের কারণে।

মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করে স্থানীয় পরিবেশ সচেতন লোকজন বক্তব্য দেন। তারা হলেন উপজেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক এখলাস উদ্দিন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান লিটন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিদুয়ানুল হক মজিদী, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সাকিবসহ অনেকে।

বক্তারা বলেন, ‘আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের পর ফাঁসিয়াখালীর সংরক্ষিত বনের উচিতারবিলের বন্য হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে এই ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছিল। এতে হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খাবার সংকটে পড়ে বন্য হাতি প্রতিনিয়ত লোকালয়ে হানা দিয়ে আসছিল। এই ভাটার কারণে অসংখ্য সামাজিক বনায়ন প্রকল্প উজাড় হয়ে গেছে। শত শত পাহাড় সাবাড় করে সেই মাটি বাইরে বিক্রিসহ ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ভাটার কারণে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই অনতিবিলম্বে এই ভাটা সমূলে বন্ধ করে বন্য হাতির চারণভূমি ফিরিয়ে দেওয়াসহ পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে প্রশাসনকে। তা না হলে ফাঁসিয়াখালীর পরিবেশ সচেতন জনগণ আইন হাতে তুলে নিয়ে সেই অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেবে।

মানববন্ধনে উপস্থিত একাধিক নারী বলেন, আজকে আমরা বাধ্য হয়েই এই মানববন্ধন কর্মসূচীতে নেমেছি। কারণ এই ইটভাটা পরিবেশ ধ্বংস করায় পরিবেশ অধিদপ্তর বন্ধ করে দিয়েছিল। এর পরও কোন ক্ষমতাবলে এটি আবার চালু করা হলো সেই প্রশ্ন আমাদের।

তারা বলেন, এই ভাটার ইট, পাহাড় সাবাড় করা মাটি পরিবহনের কারণে বিগত একযুগ ধরে ফাঁসিয়াখালীর মানুষ নানাভাবে দুষণের শিকার। প্রতিনিয়ত ধুলো-বালির যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ট। এসবের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতেও কষ্ট হচ্ছে ছোট ছোট বাচ্চাদের। তাই আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এই ভাটা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী বলেন, বন্য হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে গড়ে তোলা অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবি নিয়ে ইউনিয়নের পরিবেশ সচেতন শত শত নারী-পুরুষ বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করার বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। পরে তিনি আশ্বাস দেন যে, এই ভাটা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সেই আশ্বাসের বার্তাটি আমার মাধ্যমে ক্ষুদ্ধ জনগণের কাছে পৌঁছানোর পর তারা মহাসড়ক থেকে কর্মসূচী প্রত্যাহার করেন।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান-নির্দেশের পর ফের ভাটাটি চালু করাটা দুঃখজনক। তাই ক্ষুদ্ধ জনতাকে আশ্বস্ত করেছি যে, এটি একেবারে বন্ধের ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে। তারা এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

বিষয়টি প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘ফাঁসিয়াখালীর পরিবেশ সচেতন লোকজন সেই ভাটাটি বন্ধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করার বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। সেই ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 

 

পাঠকের মতামত: