ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::
কক্সবাজার চকরিয়ার ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে এবার আনা হয়েছে তিন জোড়া আফ্রিকান জেব্রা। ১৯৯৯ সালে পার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে কর্তৃপক্ষের অনেক চেষ্টা ছিল আফ্রিকান প্রজাতির জেব্রা আনার। কিন্তু নানা কারণে সেই আশা অপূর্ণই থেকেছে। তবে দীর্ঘদিন পর সফল হয়েছে তারা। এ নিয়ে দর্শনার্থী, পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আনন্দে উদ্বেলিত।
পার্কের তিন একর জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে জেব্রা বেষ্টনী। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের প্রচুর ঘাস, লতাগুল্মের সমাহার। পার্ক কর্মকর্তারা বলছেন, এটিই জেব্রার আদর্শ আবাসস্থল। এর আগে বাইরে থেকে ঘাস কিনে নিয়ে জেব্রাকে খেতে দেওয়া হতো। এখন আর তা করতে হবে না।
পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পার্কে নতুন অতিথি হিসেবে ঠাঁই পাওয়া ছয়টি জেব্রার মধ্যে একটি শারীরিকভাবে দুর্বল। তবে বর্তমান পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটালেই একেবারে সুস্থ হয়ে উঠবে।’
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অপ্রাপ্তবয়স্ক এসব জেব্রার মধ্যে তিনটি করেই রয়েছে বিপরীত লিঙ্গের। তাই এখানে যে আবাসস্থল তারা পেয়েছে প্রজননের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পার্কের নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে অবমুক্ত করা হয়েছে জেব্রাগুলোকে। তারা বেষ্টনীর এপাশ থেকে ওপাশ চক্কর দিচ্ছে। কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, ‘পার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতিপূর্বে অসংখ্যবার পার্ক ভ্রমণ করেছি। কিন্তু বিদেশি বন্য প্রাণীর মধ্যে ওয়াইল্ড বিস্ট ছাড়া কোনো প্রাণীর দেখা পাইনি। আজ আফ্রিকান জেব্রা দেখে বেশ খুশি লাগছে।’
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আফ্রিকান প্রজাতির এসব জেব্রা একেবারেই শান্ত স্বভাবের। তারা দলবদ্ধ হয়ে বাস করে। কোথাও গেলে দলবদ্ধভাবে যেতেই পছন্দ করে। এরা তৃণভোজী বন্য প্রাণী। তাদের প্রধান খাবার হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস, ভুসি।’
সহকারী তত্ত্বাবধায়ক আরো বলেন, ‘পার্কের নতুন অতিথি হিসেবে এসব জেব্রাকে পেয়ে আমরা এখন মহাখুশি। আমাদের চেষ্টা থাকবে এসব জেব্রা থেকে প্রজননের মাধ্যমে সংখ্যা বাড়ানো। আমরা সেভাবেই অগ্রসর হব। কারণ এই পার্কটির পরিবেশ একেবারেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট। তাই এসব জেব্রা পুরো পার্ককে সুশোভিত করবে, দর্শনার্থীদের মনের খোরাক মেটাবে।’
পার্কের তত্ত্বাবধায়ক কে এম মোর্শেদুল আলম বলেন, ‘একটি সাফারি পার্কে বিদেশি বন্য প্রাণী না থাকলে সেই পার্ক পরিপূর্ণতা পায় না। পার্ক প্রতিষ্ঠার অনেক বছর পরে হলেও দর্শনীয় এসব জেব্রা আনতে পারায় নিজেকে ধন্য মনে করছি। তবে এসব জেব্রা এখানে প্রেরণ করার পেছনে নির্দেশনা ছিল প্রধান বন সংরক্ষক মো. সফিউল আলম চৌধুরী স্যারের।’
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এস এম গোলাম মওলা বলেন, ‘দায়িত্ব যখন কাঁধের ওপর তখন চেষ্টা করে যাচ্ছি এই পার্ককে আরো বেশি সুশোভিত করতে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার পার্কে আনা হয়েছে ছয়টি জেব্রা। আগামীতে আরো বিভিন্ন প্রজাজির বন্য প্রাণীর আগমন ঘটবে।’
পাঠকের মতামত: