নিজস্ব প্রতিবেদক :: চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ‘লাইফ লাইন’ নামে পরিচিত বগাছড়ি খালের প্রশস্ততা সরকারি রেকর্ডে ১০৩ ফুট, কিন্তু দখলের ফলে সংকীর্ণ হতে হতে এর প্রশস্ততা কোন কোন অংশে এখন অর্ধেকের চেয়েও কমে গেছে। তবুও দখলবাজদের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মোগল ঐতিহ্যবাহী এই খালটি। এখন নতুন করে খালের জমি জবর দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা গড়ে তুলছে বিরাট বহুতল মার্কেট।
গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ডুলাহাজারার বগাছড়ি খালটিই ইউনিয়নের প্রধান প্রাকৃতিক প্রস্রবণ বলে মনে করা হয়। খালটি পার্বত্য এলাকা থেকে উৎপন্ন হয়ে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগর চ্যানেলের সাথে মিশেছে। এক সময়কার স্রোতস্বিনী ও চওড়া খালটি এখন দখল ও দূষণের কবলে ধুঁকছে অস্তিত্ব সংকটে। আর তা কেবল কক্সবাজার- চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডুলাহাজারা ব্রিজ পয়েন্টের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়। এখানে ব্রিজের অর্ধেকের বেশি খাল ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট-বহুতল মার্কেট । প্রথমে বাজারের ময়লা ফেলে খাল ভরাট করা হয়, এরপর সেখানে গড়ে তোলা হয় ভবন। শুধু ব্রিজ পয়েন্ট নয়, পুরো বাজার জুড়েই খালের দক্ষিণ অংশেই চলছে এ দখলবাজি।
সম্প্রতি বাজারের পশ্চিম অংশে নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে মাছের আড়তের নামে বহুতল মার্কেট ভবন। ওইদিন বিকালে ওই মার্কেটে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিককে দোতালার ছাদের কাজ করতে দেখা যায়। প্রায় ১৭০ ফুট বাই ৫০ ফুট আয়তনের এ মার্কেটটি নির্মাণে স্থানীয় বাজার কমিটির সভাপতি মফিজউদ্দিন ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি কায়ছারউদ্দিন চৌধুরী নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
ডুলাহাজারার স্থানীয় বাসিন্দা ও কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ মিরাজুল হক চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন- খালের জমির সাম্প্রতিক দখল বন্ধে এলাকাবাসী প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তা রোধ করতে পারছেন না।
তিনি জানান, মাসখানেক আগে একবার এসি(ল্যান্ড) এসে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আবারো তারা নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। ফলে আসন্ন বর্ষায় খালের ওপারে ভাঙনের কবলের পড়ে কয়েকশত বাড়িঘর খালের গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। একই আশংকা প্রকাশ করেন খালের উত্তরপাড়ের বাসিন্দা মিনহাজউদ্দিন, নজিবুল হোসাইন, মো. হোছন, মাস্টার ছগির আহমদ ও মো. কামাল।
তাঁরা বলেন, খালের দক্ষিণ অংশ দখল হয়ে যাওয়ায় উত্তর অংশ প্রতিবছর ভাঙনের কবলে পড়ছে। এতে বহু মানুষের বসতবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ডুলাহাজারা খাল উত্তরপাড়ের বাসিন্দাদের বাপ-দাদার খতিয়ানভূক্ত জমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডুলাহাজারা বাজার কমিটির সভাপতি মফিজউদ্দিন খালের জমিতে মার্কেট নির্মাণের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমরা স্থানীয় কায়ছারুল হক চৌধুরী, বাহারুল হক চৌধুরী ও আবু নাছের চৌধুরীর কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে সেখানে মাছের আড়ৎ নির্মাণ করছি। ওই জমি তাদের খতিয়ানভূক্ত দাবি করে তারা আমাদের সাথে চুক্তিও করেছেন।
ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি কায়ছার উদ্দিন চৌধুরীও খালের জমিতে কোন মার্কেট হচ্ছে না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ওই জমি আমাদের এবং তা এসি(ল্যান্ড) এসে পরিমাপ করে চিহ্নিতও করে দিয়ে যান।
তবে ঘটনার ব্যাপারে চকরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ তানভীর হোসেন চকরিয়া নিউজকে বলেন, খালের তীর দখল করে খালের রেকর্ডভূক্ত জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা প্রতিহত করে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। নতুন করে আবার চেষ্টা করলে তাও উচ্ছেদ করা হবে। তিনি কাউকে মার্কেট নির্মাণের জন্য জমি চিহ্নিত করে দেয়ার দাবি অমূলক বলে মন্তব্য করেন।
পাঠকের মতামত: