ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

খুনিদের গ্রেফতারের দাবীতে এলাকায় বিক্ষোভ

চকরিয়ার চেয়ারম্যানগন হত্যা মামলা প্রত্যাহার চাওয়ায় বিপাকে পড়েছে আমির হোসেনের পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা ডুলাহাজারায় দিনমজুর আমির হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এঘটনায় নিহতের স্ত্রী ছকিনা ইয়াছমিন বাদী হয়ে ডুলাহাজারার ইউপি চেয়ারম্যান আদর সহ ১০জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। হত্যার ৬দিন পরও কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আমির হোসেনের পরিবার। আসামী গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরাও নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ নিয়ে নিহতের পরিবার ও স্বজনরা আতঙ্কে দিনযাপন করছেন। হত্যাকান্ডে জড়িতরা প্রভাবশালী ও অপরাধ জগতের মানুষ হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন নিহত আমির হোসেনের স্ত্রী ও মামলার বাদী ছকিনা ইয়াছমিন। হত্যা মামলার প্রধান আসামী ডুলাহাজারার ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর ও তার সহযোগিরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আমির হোসেনের স্ত্রী ছকিনা ইয়াছমিন। হত্যাকান্ডের ৬দিনের মধ্যে দশ ইউপি চেয়ারম্যান মামলা প্রত্যাহারের দাবী করায় আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
অন্যদিকে খুনিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবী জানিয়ে এলাকায় শতশত নারী পুরুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

এদিকে ২৯ মে. বিকাল তিনটায় পূর্বডুমখালীতে নিহত আমির হোসেনের পরিবার ও বাদী ছকিনা ইয়াছমিন স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করার এক ঘন্টা পর চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ১০ ইউপি চেয়ারম্যান মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে স্বারকলিপি দিয়েছেন। চেয়ারম্যানগণ হত্যা মামলার প্রধান আসামী হাসানুল ইসলাম আদরকে বাদ দিতে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে জানান বাদীর পরিবার।

এমনকী আদরকে বাঁচানোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাদী ছকিনা ইয়াছমিন। হত্যার ৬দিন পরও এখনো কোন আসামী গ্রেফতারের দুরের কথা উল্টো চেয়ারম্যানগণ মামলা প্রত্যাহারের দাবী করায় স্বামী হত্যার বিচার নিয়েও অজানা শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। বিপাকে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। নিহত আমির হোসেন হত্যার বিচার চাওয়ায় এলাকার প্রভাবশালী কর্তৃক কোনঠাসা পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যে কোনো সময় হত্যার আসামিরা বাদী ও স্বাক্ষীদের মিথ্যা মামলা বা খুন জখম ও হয়রানি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে।

২৯ মে বিকাল তিনটায় সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী নিহত আমির হোসেনের স্ত্রী ছকিনা ইয়াছমিন বলেন, সম্প্রতি ডুলাহাজারা ইউপি নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদরের পক্ষে কাজ করেনি স্বামী আমির হোসেন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। আদর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরও স্বামী আমির হোসেনের প্রতি ক্ষোভ থেকে যায় তার। বিভিন্ন বৈঠক বা স্থানে ক্ষোভের কথাও জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, গত ২৩ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য আবু ছালাম তার স্বামী আমির হোসেনকে তার মোবাইল ফোনে ডুমখালী খেলার মাঠে আসতে বলেন। সেখানে তারা আগে থেকে অবস্থান করছে। তার স্বামী পৌছামাত্র চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে খুনিরা। কোন কিছু বুঝার আগে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপাতে থাকে। একপর্যাায়ে তার স্বামী আমির হোসেন চিৎকার দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্ঠা করলে পেছন থেকে গুলি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা।

নিহত আমির হোসেনের বড় ভাই আহমদ হোসেন বলেন, তার ভাই আমির হোসেন হত্যার ৬দিন পার হলেও পার এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এতিম তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।

তিনি আরও বলেন, খুনিরা মামলা থেকে বাঁচতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে এবং সঠিক বিচারের জন্য সরকারের এবং প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন।

অপরদিকে ১০ ইউপি চেয়ারম্যান মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানগণ স্বারকলিপি দিতে পারে। তবে স্বারকলিপি দেওয়া এ হত্যাকান্ডে কোন ধরণের প্রভাব ফেলবে না। আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।

আমির হোসেন হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। আসামী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান ওসি চন্দন কুমার।

পাঠকের মতামত: