ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার এক ব্যাংক ম্যানেজার অঢেল সম্পদের মালিক

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া ।।Chakaria-Picture-18-06-2017

মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার ও ভূয়া ঋণের অনুমোদন দিয়ে গাড়ি-বাড়িসহ অঢেল সম্পদ বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেছেন সাউথ ইস্ট ব্যাংক চকরিয়া শাখার ব্যবস্থাপক বশিরুচছামাদ সুজন। তিনি প্রতারণা, অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি এ প্রতিষ্ঠানে চাকরী করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নামে ভূয়া ঋণের অনুমোদন দিয়ে তাদের কাছ থেকে কমিশন আদায় করে অল্প দিনে মফস্বল এলাকার একটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এতে ব্যাংকের হাজার হাজার গ্রাহক তাদের আমানত নিয়ে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। এ সম্পদের উৎস নিয়ে এলাকার সচেতন মহলের জিজ্ঞাসা? দুদক কি এখন ঘুমিয়ে রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের রুস্তম আলী চৌধুরীপাড়ার ওবাইদুর রহমান চৌধুরীর পুত্র বশিরুচছামাদ সুজন। তিনি সাউথইস্ট ব্যাংক চকরিয়া শাখায় ব্যবস্থাপক হিসাবে যোগদানের পর থেকে গ্রাহকদের সাথে বিভিন্ন প্রতারণা, অনিয়ম ও দূর্নীতি করে আসছেন। তিনি ৩-৪ বছরে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তিনি স্ব-নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।  ক্রয় করেছেন বিপুল পরিমান জমি।

সূত্র জানায়, ব্যবস্থাপক সুজন বড় ধরণের দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন একটি চারতলা ভবন ক্রয় নিয়ে। এক অসহায় ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে ভবনটি ক্রয় করেছেন তিনি। চকরিয়া সরকারি হাসপাতালের পশ্চিম পাশে জহির আহমদের কাছ থেকে নোটারি কবলামুলে কিনে নিয়েছেন কোটি টাকা দামের একটি চারতলা ভবন। তিনি ওই ভবনের দলিল কক্সবাজার ট্রাষ্ট ব্যাংকে দাখিল করে মোটা অংকের ঋণ উত্তোলন করেছেন।  ভবনের মালিক জহিরের কাছ থেকে কৌশলে ভবনটি পানির দরে কিনে নিয়েছেন। মূলত সুজন সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য নোটারিতে নাল জমি দেখিয়ে সেখানে ১৫লাখ ২০হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। অথচ ১২কড়া জমির উপর একটি চারতলা ভবন থাকলেও তিনি নাল জমি দেখিয়ে রেজ্রিট্রি নিয়েছেন। সেখানে বড় ধরণের সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন।

ভবনের মালিক জহির আহমদের স্ত্রী জনোয়ারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বশিরুচছামাদ সুজন তার সহজ সরল স্বামীর সাথে প্রতারণা করে অল্প দামে চারতলা ভবনটি কিনে নিয়েছেন। স্বামী জহিরকে একধরণের জিম্মি করে ওই ভবনটি তিনি কিনে নিয়েছেন। বাকী টাকার জন্য তার অফিসে আসলে বিভিন্ন অজুহাত ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, স্বামী জহির আহমদকে অল্প টাকা দিয়ে জমি সহ চারতলা ভবনটি ক্রয় করলেও তাদেরকে একটি টাকাও দেয়নি। বর্তমানে আর্থিক সমস্যা নিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাড়িতে রয়েছেন জনোয়ারা বেগম। তিনি এব্যাপারে সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন প্রশাসনের কাছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মোবাইল ব্যবসায়ি সমির দাশ চকরিয়া সাউথ ইস্ট ব্যাংক থেকে ২০লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। অথচ তার দোকানে এক লাখ টাকার মোবাইল নেই তার দোকানে। ব্যবস্থাপক ঋণ সুবিধা দিয়ে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একইভাবে বদরখালীর জকরিয়া ৩০লাখ টাকা, হাজিয়ানের শাহজাহান ১৫লাখ টাকা, মেঘনা হার্টওয়ারের রেজাউল করিম ১৫লাখ টাকা, রামপুরের নজরুলকে ৩০লাখ টাকা, ঢেমুশিয়ার আনোয়ারকে ৪০লাখ টাকা ঋণ পাইয়ে দেন। মূলত যাদেরকে লাখ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছেন অথচ তাদের কাছে সেই রকম কোন সম্পদ নেই। এভাতে তিনি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ সুবিধা দিয়ে তাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা কমিশন আদায় করেছেন। এমন কী অনেক প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছেন যাদের কোন ধরণের অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই।

অভিযোগে রয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সিকিউরিটি নেই, সে সব ব্যবসায়ীকে হাত করে তিনি অঢেল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। এভাবে তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

এদিকে সুজন নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ জায়গা জমি ক্রয় করেছেন। এমনকি একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকও হয়েছেন তিনি। তার নামে চিরিঙ্গা এশিয়ান হাসপাতালের উত্তর পার্শ্বে নিজ নামে ৩০লাখ টাকা দিয়ে ৬কড়া জমি, হাজিয়ানের হেলালউদ্দিনের কাছ থেকে তার ভাই ওয়াসিমের নামে ৬লাখ টাকা দিয়ে ১০শতক জমি, লোটনীতে জহির আহমদের কাছ থেকে ৫লাখ টাকা দিয়ে ১০শতক জমি, চিরিংগা ষ্টেশনপাড়ায় ৪০লাখ টাকা দিয়ে ১০কড়া জমি এবং ফাইতং এলাকায় ১৫একর জায়গা একই এলাকায় এক হেক্টর জমি ক্রয় করে সেখানে বনায়ন করেছেন।

তাছাড়া চিরিংগা পৌরশহরে রয়েছে মোটর সাইকেলের শোরুম, থানা রাস্তার মাথায় ইষ্টার্ন মোটর সাইকেল, মাতামুহুরী ব্রিজের উত্তর পার্শ্বে ইষ্টার্ন মোটর সাইকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ, ছিকলঘাট এলাকায় ওষুধ ফার্মেসীর দোকান সহ একটি মার্কেট গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি একটি ল্যান্ডক্রজার গাড়িও ক্রয় করেছেন। এভাবে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।

এব্যাপারে সাউথ ইস্ট ব্যাংক চকরিয়া শাখার ব্যবস্থাপক বশিরুচছামাদ সুজন বলেন, জহির আহমদ নামের একব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ভবন সহ ১২কড়া জমি ক্রয় করেছেন। সেখানে মালিকের তার কোন সমস্যা নেই। তবে তার স্ত্রী জনোয়ারা কী বলছে তা জানার দরকার নেই।

সাউথইস্ট ব্যাংক চকরিয়া শাখা থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নামে নেওয়া ঋণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নামের ঋণ দেওয়া হয়েছে তা ঢাকা অফিসের কর্মকর্তারা যাচাই বাচাই করে দিয়েছেন। সেখানে কারও কাছ থেকে কমিশন নেননি বলে তিনি জানান।

তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে অল্প সময়ে এতো সম্পদের কিভাবে মালিক হলেন তা তদন্তের জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতনমহল।

পাঠকের মতামত: