ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বিজয় মেলার নামে চলছে জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য, নিরব প্রশাসন

ডুলাহাজারা প্রতিনিধি, চকরিয়া ::

চকরিয়া উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার নামে প্রকাশ্যে চলছে জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শন। এতে বিপথগামী হচ্ছে উপজেলার ছাত্রসহ তরুণ যুব সমাজ। জুয়ার টাকা জোগাড় করার জন্য বেড়েছে চুরি-ছিনতাই। উপজেলার ডুলাহাজারা, বরইতলী, কোনাখালীতে কয়েকদিন ধরেই চলছে বিজয় মেলার ব্যানারে এসব কর্মকাণ্ড। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিজয় মেলায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্মৃতিচারণ করার মতো কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা সংগঠক না এনে আয়োজকরা মেলাকে বাণিজ্যিকিকরণে পরিণত করেছে। এসব দেখার কেউ না থাকার কারণে এবং সহজে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বদরখালীসহ আরও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে এমন মেলার উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। এব্যাপারে প্রশাসনের রহস্যজনক নিরব ভুমিকা পালন করায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ডুলাহাজারা, বরইতলী ও কোনাখালীতে চলছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। মহান বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এই মেলার অনুমোদন নিলেও প্রকাশ্যে জুয়ার বোর্ড বসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আয়োজক ও জুয়ার বোর্ডের মালিকরা। জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ তরুণ যুব সমাজ। আর টাকা হারানোর পর তারা অপরাধে জড়াচ্ছে। আবার পেশাদার জুয়াডিরাও ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে বিজয় মেলার জুয়ার আসরে সামিল হচ্ছে। বিজয় মেলার মঞ্চে স্থানীয় নেতাদের দিয়ে নামমাত্র বক্তব্যের আয়োজন করা হলেও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সঠিক তথ্য নির্ভর স্মৃতিচারণ করার মতো কাউকে আনা হয়নি একটি মেলাতেও। এসব মেলায় উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করা হচ্ছে সীমিত আকারে। পক্ষান্তরে সার্কাসের ভেতরে আলাদা প্যান্ডেল করে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারীদের এনে রাতে তাদের দিয়ে প্রদর্শন করানো হচ্ছে অশ্লীল নৃত্য। পূর্ব ধারণা না থাকায় অনেক পরিবার মেলায় গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে ঘরে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারস্থ বঙ্গবন্দু সাফারী পার্কের পাশে বিজয় মেলার আয়োজন করে । এখানে প্রতিদিন লটারীর নামে পুরো চকরিয়ায় মাইকিং করে ২০টাকা টিকেট বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে নামে মাত্র পুরু¯কার দিচ্ছে বিজয়ীদের মাঝে।
এছাড়া রাত ৯টার পর থেকে সার্কাসের নামে রাত ব্যাপি চলে অখ্যাত শিল্পীদের উলঙ্গ নৃত্য। তবে জেলা প্রশাসনের দেয়া শর্তগুলো মানছেনা আয়োজকেরা। এরপরও স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখেও রহস্যজনক কারণে না দেখার ভান করে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আয়োজক দাবী করেছেন, শুধু বিজয় মেলা করলে এখানে কোন দর্শক আসবে না। তাই দর্শনার্থীদের বিনোদনের সার্থে টুকটাক নৃত্যের আয়োজন করতে হচ্ছে। এছাড়া বিজয় মেলার ব্যয় ও এসব মেলার কাছে ব্যয় করা পুজি উদ্ধার করতে র‌্যাফেল ড্রয়ের নামে জুয়ার আসর বসাতে হয়েছে। এ খ্যাতে আয়ের বিশাল একটি অংশ সকল স্থরের দায়িত্বশীলদের ঘাটে ঘাটে বিলি করতে হচ্ছে। এমনকি এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের খবর প্রচার ও প্রকাশ না করার জন্যে মিডিয়া কর্মীদেরকেও ম্যানেজ করা হচ্ছে। স্থানীয় অধিবাসীদের অভিয্গো কয়দিন পরেই এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার অনুষ্টিত হবে। বিজয় মেলা উপলক্ষ্যে আয়োজিত এসব অশ্লীল কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় চর্কিসহ চাক্কা পাঞ্জার জুয়ার পাশাপাশি অনুমোদন ছাড়াই চলছে লটারি। সাথে কয়েকজন তরুণ মিলে হারু খেলা, টিন টিকেট, এক/তিন তাসের জাদুসহ রকমারি জুয়ার আসর বসিয়েছে। মেলায় দিনে স্টল নির্ভর হলেও সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলে নগ্ন নৃত্য ও জুয়ার আসর। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় প্রশাসন বিজয় মেলার নামে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয় জেনেও না জানার ভান করছে। দুই একজন উপজেলা কর্মকর্তারা দিনের বেলা মেলা পরিদর্শনে গেলেও রাতের কর্মকাণ্ড দেখতে কেউ যাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক মেলার কয়েকজন আয়োজকদের দাবি, উপজেলার বিভিন্ন স্তরে চাঁদা দিয়ে মেলা চালানো হচ্ছে। তবে নগ্ন নৃত্য ও জুয়া খেলা চালানোর বিষয়টি সকল আয়োজক অস্বীকার করেছেন।

চকরিয়ায় বিজয় মেলার নামে নগ্ন নৃত্য এলাকার বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন ব্যক্তি জানান, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসে বিজয় মেলার নামে সেখানে অশ্লীলতা ও অপরাধ কার্যক্রম চলছে। তা বন্ধ করতে হবে। তা হলে দেশের বিজয় অর্জন ম্লান হবে। বদনাম হবে সূর্য সন্তানদের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘ইতিপূর্বে ডুলাহাজারার বিজয় মেলায় প্রকাশ্যে জুয়ার চলছে এমন সংবাদ পেয়ে আমি নিজেই পরির্দশন করে একটি জুয়ার আসর ভেঙে দিয়েছি। আয়োজকদের নির্দেশ দিয়েছি জুয়া ও অসামাজিক কোনো কার্যকালাপ না চালানোর জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘এরপরও অসামাজিক কোনো কার্যকলাপ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও চকরিয়া থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।’

পাঠকের মতামত: