ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ঘুম ভাঙলো পরিবেশ অধিদপ্তরের, চকরিয়ার ফুলছড়ি বিট কর্মকর্তা ক্লোজড

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

বন বিভাগের মালিকানাধীন সংরক্ষিত বনে একাধিক মিনি পিকআপ (ডাম্পার) লাগিয়ে বছরের পর বছর ধরে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির সেই স্পটে অবশেষে অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে অভিযানে পাহাড় কাটায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। একই সাথে গত শুক্রবার সেই স্পটে ঘটনা তদন্তে যান কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেন। অপরদিকে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে স্থানীয় বন বিট কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. জগলুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বন ও পাহাড় ধ্বংসে যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এমনকি বন ও পাহাড় রক্ষার দায়িত্বে অবহেলা করলে বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যেই ওই এলাকার বিট কর্মকর্তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।’ তবে বিট কর্মকর্তা ক্লোজড হলেও মূল হোতা রেঞ্জ অফিসার আব্দুল রাজ্জাক বহাল তবিয়তে রয়েছে। রেঞ্জ অফিসারের ছত্রছায়ায় এভাবে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে বলে অভিযোগও রয়েছে স্থানীয়ভাবে। ৬ জানুয়ারি চকরিয়া নিউজ পত্রিকায় “অবিরাম কাটাকাটি, বাঁচানো যাচ্ছে না পাহাড় বনভূমি, বন বিট, রেঞ্জ কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগ” শিরোনামে তথ্য ভিত্তিক সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরেই পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানে ছুটে যান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এখনও পাহাড় কাটার ঘটনাটির তদন্ত চলছে। এছাড়া পাহাড় কাটার ঘটনায় ইতিপূর্বে ৩ টি মামলা দেয়া হয়েছে।’ পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছি। সেখানে ভয়াবহ আকারে পাহাড় কাটার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে অভিযানের খবর পেয়ে জড়িতরা আগেই পালিয়ে গেছে। আমরা সেখানে গোপনে ও প্রকাশ্যে তদন্ত করে পাহাড় কাটায় জড়িত বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের চকরিয়া ফুলছড়ি রেঞ্জে’র ফুলছড়ি বন বিটের আওতায় থাকা পূর্ব নয়া পাড়া এলাকায় সংরক্ষিত বনে পাহাড় কাটা চলছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। ওই এলাকার মৃত ছাবের আহমদের পুত্র স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গিয়াস উদ্দিন (৪০), তার ভাই জসিম উদ্দিন (৪৫), নুরুচ্ছফার পুত্র আইয়ুব আলী প্রকাশ আয়া (৩৫), মৃত মোজাহের আহমদের পুত্র আবদুচ ছালাম (৪০), মৃত ইসহাকের পুত্র ছৈয়দ আলমসহ (৫০) ৭/৮ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র একাধিক ডাম্পার দিয়ে পাহাড়ের মাটি বিক্রির সাথে জড়িত। স্থানীয় ভাবে বন কর্মকর্তারা নেপথ্যে পাহাড় কাটায় সহায়তা করেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। যার কারণে বছরের পর বছর ধরে পাহাড় কাটা হলেও এ সব বন্ধ হচ্ছে না। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খুটাখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমার পরিবারের সব ভাইয়েরই একটি করে ডাম্পার গাড়ি রয়েছে। আমরা মূলত: ছরা থেকে বালি তোলে বিক্রি করি। আর যে পাহাড়ে মাটি কাটার কথা বলা হচ্ছে, সেখান থেকে মাঝে মধ্যে কয়েক গাড়ি মাটি নিয়েছি। এসব ধ্বসে পড়া মাটি।’ তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আরও বলেন, ‘পাহাড় থেকে ধসে পড়া এসব মাটি বন বিভাগের লোকজনকে কিছু খরচাপাতি দিয়েই আমরা নিয়েছি। আমরা পাহাড় কাটায় জড়িত নই।’ এদিকে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনে এভাবে পাহাড় কাটার ঘটনার নেপথ্য নায়ক বিট কর্মকর্তা ও রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদি সংগঠন সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ.ন.ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘প্রকাশ্যে কয়েক বছর ধরে খুটাখালিতে পাহাড় কাটা চলতে থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর। সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অপরাধ বন্ধ না করে শুধুমাত্র দায়সারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। যার কারণে বন-পাহাড় কিছুই থাকছে না।’ কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘ইতিমধ্যেই বিট কর্মকর্তাকে ক্লোজড করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে এসিএফকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। আর কোন কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পাঠকের মতামত: