নিউজ ডেস্ক :: পর্যটন নগরী কক্সবাজারের গুরুত্বপূর্ন সড়ক গুলোতে ভালো মানুষ চলাচল করলেও এমনিতে রোগী হয়ে যাবে। সড়কজুড়ে অসংখ্য খানা-খন্দক-গর্ত। গাড়ি চলে চন্দে চন্দে হেলেদুলে। কিছু স্থানে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে হয় যাত্রীদের। এর মধ্যে যদি একটু বৃষ্টি হয় তাহলে তো দুর্ভোগের সীমাই থাকে না। এমন দুরাবস্থা যেন দেখারও কেউ নেই।’
কথাগুলো আক্ষেপের সঙ্গে জানালেন কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীর বাসিন্দা মোতাহেরা হক মিতু। কক্সবাজারের বাসটার্মিনাল থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত একমাত্র সড়কের এ দুরাবস্থা। এই গুরুত্বপূর্ন ব্যস্ততম সড়কের সংস্কার না হওয়ায় বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। এর মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের। আবার সেখানে আসছে এই পর্যটন মৌসুমে হাজার হাজার পর্যটক। শহরের এই সড়ক দিয়ে যে পর্যটক একবার আসবে সেই পর্যটক আর কখনো কক্সবাজার আসবেনা বলেও ইচ্ছে পোষন করছে।
বাজারঘাটার ব্যবসায়ী জিয়া, কলেজ ছাত্র নাহিয়ান ও নয়ন জানান, সড়কটি নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। যত ভোগান্তি শিক্ষার্থী ও আমজনতার। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে টমটমে সময় যেমন বেশি লাগে তেমনি বাড়তি ভাড়াও গুনতে হয়।
শহরের বার্মিজ মার্কেটে আসা পর্যটক মেহেদী জানান, এই অভিশপ্ত কক্সবাজারে আর কোনদিন আসব না। প্রয়োজনে এই টাকায় দেশের বাহিরে যাব। কি কারন জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, টমটমের এই শহরে ভাঙ্গা-রাস্তায় বউ বাচ্ছাদের নিয়ে এসে চরম হয়রানী আর লজ্জিত হয়েছি। কক্সবাজারে আসার আগে বউ-বাচ্ছাদের বলেছিলাম কক্সবাজার শহর অনেক সুন্দর এবং দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী। আমার কথানুযায়ী তারা রাজি হয়ে কক্সবাজার এসেছি। কিন্তু আসার পর দেখি আমাকে বকাবকি। এই কি হাল কক্সবাজারের ?
এ সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘সড়কটি দিয়ে লিংকরোড, বাসটার্মিনাল, আলিরজাহাল, ছনখোলা-এসএমপাড়া, খুরুশকুল, পিএমখালীর প্রতিদিন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ উপজেলা শহরে চলাচল করে। অথচ সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক।’ তিনি আরো বলেন, এই ভাঙ্গা সড়ক সংস্কারের জন্য ইতিপূর্বে অনেক লেখালেখি আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবার দ্রুত সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করব। সমস্ত দপ্তরে জানিয়ে দেব কক্সবাজার শহরের সড়কের ব্যাপারে। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যাব। এভাবে তো চলতে পারেনা একটা জনগুরুত্বপূর্ন শহর।
জানা গেছে, বাসটার্মিনাল থেকে হলিডেমোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক বেহাল। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু কাজ করে গর্ত ভরাট করে পৌরসভা, কউক আর সড়ক বিভাগ। কিন্তু এই সড়কের কাজ করার দায়িত্ব কার সেই প্রশ্ন এখন সবার। মানুষের একটাই প্রশ্ন রাস্তা কার আর সংস্কার করার কেউ নেই ? আর কতদিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে শহরবাসীকে।
বিভিন্ন যানবাহন মালিক-চালকরা জানিয়েছেন, কক্সবাজারের শহর ও শহরতলীর প্রধান সড়ক ও উপ-সড়কের বেহাল দশা বিরাজ করছে। এতে করে একপ্রকার সড়কে গাড়ির কান্নায় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর প্রতিনিয়ত জনদুর্ভোগ তো আছেই। পৌর এলাকার প্রধান সড়কের কিছু কিছু অংশ ঠিক থাকলেও পুরো পৌরসভার অলি-গলি সড়ক উপসড়ক এখন খানাখন্দকে ভরপুর।
সচেতন মহলের দাবি-কক্সবাজার শহর বিশ্বের কাছে একটি পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত। তাই এখানকার সড়কের এমন অবস্থা হয়েছে তা-নিজেদের লজ্জিত মনে হচ্ছে। কোন কোন সড়ক দিয়ে চলাচল একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শহরের প্রধান সড়ক ও উপ-সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়তই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাসপাতালে আসা রোগি, রোগির স্বজন-সহ দূ-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো জনসাধারণ। পাশাপাশি চরম ভোগান্তির শিকারও হচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা, পৌরসভা, উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ ও সড়ক বিভাগ রশি টানাটানির কারনে এই বেহাল অবস্থা হয়েছে বলে ধারনা করছেন। তবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি সুত্রে জানা গেছে, আগামী মার্চে ভাঙ্গা সড়কের কাজ পুরোদমে করা হবে।
বর্তমানে পিচ-খোয়া উঠে তৈরি হয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য গর্ত ও খানা-খন্দক। প্রতিদিন এই সড়কে হেলেদোলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। সড়কে নিত্যদিন যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাস্তার বেহাল দশা ও ভোগান্তির যন্ত্রণায় ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে ক্ষোভের অনুভূতির প্রকাশ।
এমনকি কক্সবাজারের সিনিয়র-জুনিয়র অধিকাংশ সাংবাদিক লেখালেখি করছেন এবং আমরা কক্সবাজারবাসীর ব্যানারে আন্দোলন করারও হুশিয়ারী দেয়া হয়েছে।
বলাচলে কক্সবাজার শহর ও শহরতলীর প্রায়ই সড়ক উপসড়ক খানা-খন্দকে ভরপুর। বিশেষ করে উপজেলা গেইটে, বাসটার্মিনাল, আলির জাহাঁল প্রধান সড়কে, চৌধুরী ভবনের সামনে প্রধান সড়কে, বিভিন্ন অলিগলি-সহ প্রায়ই সড়ক ও উপ-সড়কের ছোট ছোট গর্ত ও খানা খন্দক। এমনকি কোন কোন জায়গায় একেবারেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর ফলে যানজট নিত্য দিনের সঙ্গীতে পরিণত।
জায়গায় শুধু পিচই নয় খোয়াও উঠে গেছে। শুধু যানবাহন নয়, পথচারীদের চলাফেরায়ও অসুবিধা হচ্ছে। প্রায় একই অবস্থা পুরো পৌর শহরজুড়ে। এমনকি পর্যটন স্পট কলাতলীর অলিগলিতে সড়কে অসময়ে জলাবদ্ধতা ও চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে।
আবার সাধারণ মানুষ অভিমত প্রকাশ করেছেন, নির্বাচনের আগে কাউন্সিলর ও মেয়ররা সড়ক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের কথায় ছিড়া কখনো ভিজতে দেখা যায়নি।
কক্সবাজারের এক শিক্ষানবীশ আইনজীবি সরওয়ার আলম মুন্না জানান, রাস্তা ঘাটের বেহাল অবস্থা দেখে অতটুকু ভালো লাগছেনা। ফলে অনেক ক্ষেত্রে চরম দূর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অথচ দেখার কেউ নাই। কাকে কি বলবো।
এমন পরিস্থিতি শুধু কক্সবাজার শহর নই জেলার সবকটি উপজেলার দৃশ্য এরকমই। সড়কের বেহাল দশায় একধরনের মানুষের বোবাকান্না চলছে। এভাবে চলতে থাকলে সমস্ত রাস্তা ভেঙ্গে চলাচল অনুপযোগি হয়ে যাবে।
পাঠকের মতামত: