এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের ১নং খাস খতিয়ানের কোটি টাকার জমিতে রাতারাতি প্লট বাণিজ্য মেতে উঠেছে চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদের বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতি। বদরখালী বাজারের পশ্চিমে পাউবোর বেড়িবাঁধ লাগোয়া ওই জমিতে মঙ্গলবার ও বুধবার দুইদিনে সমিতির কর্মকর্তারা শতাধিক শ্রমিক দিয়ে দিবারাত্রি নির্মাণ কাজ করে ইতোমধ্যে ৭০টির মতো প্লট তৈরী করে নিয়েছে। এতে বেহাত হয়ে পড়েছে সরকারের বিপুল টাকার ভুসম্পদ।
অবশ্য ওই জমিতে প্লট নির্মাণের বিষয়টি আগে-ভাগে আঁচ করতে পেরে স্থানীয় রিদুয়ানুল হক নামের সচেতন নাগরিক লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে। তারপরও কী ভাবে সরকারি খাস জমিতে এভাবে অবৈধ প্লট গড়ে উঠেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
অপরদিকে প্লট তৈরী করা উল্লেখিত জায়গায় আগের জলাধার ভরাটের মাধ্যমে শ্রেণী পরিবর্তনের ঘটনায় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারী পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জম হোসেন বদরখালী সমিতিকে ৬ লাখ টাকা অর্থ জরিমানা করেন। আদেশে বলা হয়, জলাধার ভরাট করা পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী শাস্তি যোগ্য অপরাধ করেছেন। জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে অভিযুক্ত করা হয় সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদার, সেই সময়ের সম্পাদক একেএম ইকবাল বদরী ও বালু উত্তোলনকারী একে ভুট্টো সিকদারকে।
ওইসময় পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরবর্তীতে আদেশে বলেন, এক দশমিক ৪৮ একর জায়গায় ৬০ হাজার বর্গফুট জলাধার ভরাটের মাধ্যমে বদরখালী সমিতি পরিবেশ আইনের আলোকে ৩৮ লাখ ৭১ হাজার ৬৮৩টাকার পরিবেশের ক্ষতিসাধন করেছে। সেইজন্য সমিতিকে ৬ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ভরাট করা বালু অপসারণপুর্বক জলাধারটি আগের অবস্থানে ফিরে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো।
অভিযোগ উঠেছে, জলাধার ভরাটের ঘটনায় জরিমানা এবং পরিবেশের ক্ষতিবাবত সমুদয় টাকা না দেয়ার কৌশল হিসেবে সেসময় বদরখালী সমিতি উল্লেখিত আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট মামলা করেন। পাশাপাশি ভরাট করা বালুও সেই জায়গা থেকে অপসারণ করা হয়নি। এরপর প্রায় দুইবছর চুপ থাকার পর ফের উল্লেখিত জায়গায় নতুন করে প্লট বাণিজ্যে মেতেছে সমিতির বর্তমান কর্মকর্তারা।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগে স্থানীয় নাগরিক রিদুয়ানুল হক দাবি করেন, দুইবছর আগে জলাধার ভরাটের অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর জড়িতদের জরিমানা করে উল্লেখিত জায়গা থেকে বালু অপসারণপুর্বক আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু গেল দুইবছরে তা কেউ পালন করেনি। অন্যদিকে জরিমানা ও ক্ষতিপুরণের টাকা পরিশোধ না করতে অভিযুক্তদের দায়ের করা রিট মামলাও ২০১৯ সালের ২৬ জুন হাইর্কোট খারিজ করে দেন।
বিষয়টি প্রসঙ্গে বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক মো.নুরুল আমিন জনি দাবি করেন, জলাধার ভরাট করা জায়গাটি জেলা প্রশাসনের খাস খতিয়ানের সম্পত্তি এটা সত্যি। কিন্তু সেই জায়গা আমরা (সমিতি) অনেক আগে বন্দোবস্তি নিয়েছি। সমিতির আগের পরিষদ উল্লেখিত জায়গায় ৬৭ জন সভ্যের শেয়ার হিসেবে একটি করে দোকানঘর বরাদ্দ দিয়েছে। এখন আমরা সেখানে প্লট ভিত্তিক শেয়ার গুলোকে বরাদ্দ বুঝিয়ে দিচ্ছি।
পরিবেশ অধিদপ্তর ওই জায়গায় আগের জলাধার ভরাটের কারণে সমিতিকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছে, এবং ভরাট করা বালু অপসারণে নির্দেশও দিয়েছিলেন, সেখানে কী ভাবে আবার প্লট দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। সে মামলায় কী আপনাদেরকে প্লট নির্মাণের জন্য কোন নির্দেশনা দিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। বলেন, আমি এখন এসিল্যান্ড অফিসে আছি। পরে কথা বলবো।
জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, বদরখালীতে জেলা প্রশাসনের খাস খতিয়ানের জমিতে প্লট নির্মাণের ঘটনাটি মৌখিকভাবে আমাকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করেছেন। এরই আলোকে সেখানে ইউনিয়ন ভুমি তহসিলদার ও পুলিশ ফোর্স পাঠিয়ে প্লট নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছি। সর্বশেষ বুধবার বিকালে উল্লেখিত জায়গা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্পত্তি লিখে সেখানে সাইনর্বোড টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্মাণ করা প্লটের অবকাঠামোগুলো দুইদিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। তারপরও সেগুলো সরানো না হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। আর ওই জায়গায় সমিতির লোকজন ও ইউপি চেয়ারম্যানকে কোনধরণের স্থাপনা না করতে নির্দেশ দিয়েছি।
এদিকে সরকারি খাস জমিতে প্লট নির্মাণের ঘটনায় এসব প্লটের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় জনসাধারণ। এ ঘটনায় বুধবার (২মার্চ) বিকালে বদরখালী বাজারে প্রতিবাদ সভা করেছে বিক্ষুদ্ধ জনসাধারণ ও সমিতির সভ্যরা। তাদের দাবি, বৈধ জমিতে আমাদের প্লট বরাদ্দ দিন। সরকারি জমিতে প্লট দিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করবেন না। সেখানে বক্তব্য দেন বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে হোছাইন আরিফ ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পাঠকের মতামত: