ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

খরুলিয়ায় সিঁদুরের রঙ আর ধানের কুঁড়া মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে গুঁড়া হলুদ-মরিচ!

শাহীন মাহমুদ রাসেল :: সিঁদুর ও কাপড়ে মেশানোর রং, ঘাসের বীজ আর কিছু পঁচা কাঁচা মরিচ শুকিয়ে মিশিয়ে তৈরি হচ্ছিল মরিচের গুঁড়া। হলুদের গুঁড়ায়ও মেশানো হচ্ছিল ধানের কুঁড়া ও ঘাসের বীজ। এসব ভেজাল মরিচ ও হলুদের গুঁড়া দীর্ঘদিন ধরে বাজারজাত করে আসছিল একটি চক্র।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া বাজারের ফয়েজ অটো রাইস মিলে এমন চিত্র দেখে স্থানীয়রা। পরে উপজেলা প্রশাসনকে খবর দিলে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমাইয়া আক্তার সুইটি অভিযান চালায়। প্রশাসন আসার এমন খবরে মিলের স্বত্বাধিকারী এনাম এবং ব্যবসায়ী শাকের পালিয়ে যান। পরে ওই রাইস মিলটি সীলগালা করে দেন প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাল রঙের সাথে কিছু পচা মরিচ শুকিয়ে দিলে ভেজাল মরিচের গুড়ায় হালকা ঝালও হয়। আর হলুদ রঙের সাথে কিছু আসল হলুদ মিশিয়ে দিলে ভেজাল মসলা হিসেবে কেউ ধরতেও পারবেনা। এক বস্তা (৫০ কেজি) মরিচ ও ১০ বস্তা ধানের কুঁড়া, সঙ্গে সাড়ে ৫ কেজি রাসায়নিক পদার্থ (অরেঞ্জ কালার) মেশিনে গুঁড়া করার পর তা হয়ে উঠছে ৫৫ কেজি গুঁড়া মরিচ। একইভাবে তৈরি করা হচ্ছে হলুদের গুঁড়া।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- আমরা প্রতিনিয়তই মরিচের আসল স্বাদ, রং ও গন্ধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি এবং মরিচের সাথে বোঁটার গুড়াও খাচ্ছি। কাঁচা মরিচ যেহেতু রান্নায় পরিমাণে অল্প লাগে, তাই এটি দামেও সাশ্রয়। যেমনি করে বাজারের বিভিন্ন হলুদ, মরিচ ও ধনিয়া ভাঙ্গানোর কারখানায় চলছে ভেজাল মসলা তৈরি। জেলার প্রায় সব বাজারে অর্ধডজনাধিক গুড়া মেশানোর ভেজাল মসলার কারখানা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক মিলের কর্মচারী জানান, এসব কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে গরু, ছাগল ও হাঁস মুরগির খাবার ধানের কুড়া ও কাঠের কুড়ার সাথে রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে বানানো হচ্ছে হলুদ, মরিচ ও ধনিয়া। নিত্য প্রয়োজনীয় হলুদ, মরিচ ও ধনিয়া অগ্নিমূল্যে হওয়ায় তার পরিবর্তে কাঠের গুরা, কুড়া মিশানো হয় বলে জানিয়েছেন। ৪০ কেজির বস্তায় ৫শ গ্রাম কেমিকেল মিশিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যায় একমন হলুদ বা মরিচ।

তবে বিভিন্ন মসলার মিল ঘুরে দেখা যায়, বিএসটিআই, ট্রেড লাইন্সেস, মেডিকেল সার্টিফিকেট ও রাজস্ব নবায়ন ছাড়পত্র ছাড়াই তৈরি করা হচ্ছে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় মসলা।

ভোক্তারা বলেন, প্রশাসনের তদারকি না থাকায় যে যেভাবে খুশি তৈরি করে যাছে নিত্য প্রয়োজনীয় মসলা। এসুযোগে কারখানা মালিকরা শুধু মানুষের সাথে নয় পুরো জাতীর সাথে প্রতারণা করছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

পাঠকের মতামত: