ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

খরুলিয়ায় জমির বিরোধে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক :: কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধার বসত বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করেছে প্রতিপক্ষরা। বাধা দিতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজনের হামলায় নারীসহ ৩ জন আহত হন।

মুক্তিযোদ্ধার বসতঘরের সকল মালামাল শুধু লুটপাট, ভাংচুর ও মারপিট করে ক্ষান্ত হয়নি, দুটি বসত ঘরের উপরে উঠে চালের টিন কেটে টুকরো টুকরো করে দেয় দূর্বিত্তরা। গত শুক্রবার (১৫ মে) দুপুরে প্রকাশ্যে মকবুল সওদাগর পাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সাবেক মেম্বার মৃত নুরুল হকের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

লুটপাট ও ভাঙচুর করে ওই দুটি বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, পাঁচটি মোবাইলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক মালামাল লুট করে নিয়ে যায় দূর্বিত্তরা।  ঘটনার দু’দিন অতিবাহিত হলেও থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানা গেছে।

মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মোহছেন আরা হক জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে গত ২০০৮ সালে ফেন্সিডিলসহ যাত্রাবাড়ী থানায় আটক হয়ে কারাভোগী এবং বর্তমানে নিজেকে মানবাধিকার নেতা পরিচয় দানকারী দেলোয়ার এবং তার সহযোগী মাদক সন্ত্রাসী বাবুল জোড়পূর্বক বিভিন্নজনের জমিতে স্কেবেটার (খননযন্ত্র) দিয়ে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে আসছে।

সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের চাষকৃত জমির উপর দিয়ে মাটি ভর্তি ট্রাক চলাচলে জমির ফসল নষ্ট হওয়ার ফলে বাঁধা দেন পরিবারটি। তখন তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত শুক্রবার দুপুরে সবাই জুমার নামাজ পড়তে গেলে হঠাৎ করে মাদক মামলায় কারাভোগী বর্তমানে নিজেকে মানবাধিকর নেতা পরিচয় দানকারী একই এলাকার দেলোয়ারের নেতৃত্বে সদর থানার ওসির আপনা মানুষ পরিচয় দানকারী চিহ্নিত থানার দালাল সরওয়ার আলম, স্থানীয় সন্ত্রাসী জসিম উদ্দিন বাবুল, শেখ মোরশেদ, শামিম, আব্দুল আজিজ, রফিকসহ ১৫-২০ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো কিরিচ-রাম দা ও লোহার রড়সহ মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে প্রবেশ করে।

বাড়িতে থাকা সকলকে এলোপাথাড়ি মারপিট শুরু করে। তারা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে সবকিছু ভাঙচুর শুরু করে। এসময় চিৎকার শুরু করলে বাড়ীতে থাকা মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে নাহিদা আক্তার জিসান (৪৪) কে মেরে মাথা–মুখ থেঁতলে দেয়।  এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মোহছেন আরা হকের গলায়ও ছুরি ধরে বলে, চিৎকার করলে মেরে ফেলব।

শুধু তা নয়, ঘরের উপরে উঠে চালের টিন পর্যন্ত কেটে টুকরো টুকরো করে দেয়। খবর পেয়ে মা-বোনকে রক্ষায় এগিয়ে এলে মুক্তিযোদ্ধার দুই সন্তান ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী নাজমুল হক জুসেফ (৪০) ও সাজেদুল হক জিপু (৩০) কে বেদড়ক পেটান এবং এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। প্রায় দুই ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে তারা লোহার সিন্দুকে রাখা ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৫টি মোবাইল, নগদ টাকাসহ সব কিছু নিয়ে চলে যায়।

মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে আহত নাহিদা আক্তার জিসান বলেন, হঠাৎ করে অনেক লোকজন ঢুকে আমাদের মারপিট শুরু করে। আমার মা ও আমি প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। আমাদের দুটি ঘরে ভাঙচুর চালায়। সন্ত্রাসীরা আমাদের ঘরের ফ্রিজ, টেলিভিশন, আলমিরা, খাট, রান্নাঘর, সবকিছু ভাঙচুর করে। ঘরের মধ্য থেকে জামাকাপড় নিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। তাদের তাণ্ডব দেখে আমরা ভয়ে চুপ করেছিলাম।

তিনি আরোও বলেন, এমনভাবে হামলা করা হয়েছে যা বর্ণনাতীত। এই বাড়িতে এখন রান্না করে খাওয়ারও ব্যবস্থা নেই। থাকার খাটও ভাঙ্গা। প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাড়ির লোকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, দেলোয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ব্যাক্তিগত সহকারী পরিচয় বহনকারি। সে পেশায় একজন দালাল। কখনো কখনো সাংবাদিক পরিচয়ে দেদারছে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া হরেকরকম ওজুহাতে সমাজের বিত্তবান ও নানা অপকর্মকারিদের থানায় ধরে এনে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করে যাচ্ছে দালাল সরওয়ার। বলতে গেলে তাদের ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে এলাকার অহরহ বিচারপ্রার্থী ও নানা পেশার মানুষ। নানা বিরোধপূর্ণ জমিসংক্রান্ত বিষয়ে আটক ও মাদক কিংবা ইয়াবা ব্যবসায়ীর অপবাদ দিয়ে গ্রেপ্তার করে তা মোটা অংকে ছাড়ানোসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এই দুই দালাল চক্র।

এবিষয়ে জানতে সদর থানার ওসি শাহাজান কবিরের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন না ধরায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী সদর থানার এস আই কাঞ্চন বলেন, জমি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। আমি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হই। তখন আহতদের উদ্ধার করে হাসপালে পাঠিয়ে দিই।

তিনি আরোও বলেন, ওসি স্যার সব জানে, শুনেছি ওটা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। তারা কাগজপত্র জমা দিলে মামলা দায়ের করা হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: