নিউজ ডেস্ক ::
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে শহরে বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার বৈধতা নেই। কিন্তু প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে চেক পোষ্ট অতিক্রম করে রোহিঙ্গারা ডুকে পড়ছে দেশের অভ্যন্তরে।
এমনই ৪ জন রোহিঙ্গা যুবকের সাথে দেখা মিলে গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে। তারা শহরের লিংক রোড় থেকে চট্টগ্রাম মুখি যাত্রীবাহি ইউনিক সার্ভিস উঠে। ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী এই যুবকদের মধ্যে ২ জন ছিল লুঙ্গি পরা আর ২ জন পেন্ট। তাদের দেখেই বুঝা যাচ্ছিল তারা স্থানীয় নয়। তাদের চোখে-মুখে ছিল আতংকের ছাপ। এছাড়া তারা যতটা সম্ভব চুপচাপ থাকার চেষ্টা করছিল। পরে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই ৪ জন’ই উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১৫ দিনের জন্য চট্টগ্রামের পটিয়া যাচ্ছেন ধান কাটার কাজ করতে। তাদের মধ্যে ২ জন হল উখিয়ার লম্বা সিয়া অন্য ২ জন বালু খালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।
তারা জানায়, শুধু ওই ৪ জন নয়। তাদের জানা মতে পটিয়ার ধানকাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছে ২ শতাধিক রোহিঙ্গা। তারা বিভিন্ন সময় নানা কৌশলে চেক পোষ্ট ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। তারা রীতিমত ভাড়াবাসা নিয়ে অস্থায়ীভাবে অবস্থান শুরু করেছে পটিয়ায়।
কিভাবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই পর্যন্ত যাচ্ছে এমন প্রশ্নে জানায়, তারা এসেছে টমটম (ইজি বাইক) চালকের সাথে চুক্তি করেই চেক পোষ্ট পার হয়েছে। মূল ভাড়ার বাহিরে জনপ্রতি অতিরিক্ত ৭ শ টাকা করে দিয়েছে টমটম চালককে। আর কৌশল অনুযায়ী চেকপোষ্টের আগে তারা টমটম থেকে নেমে যায় এবং হেটে চেক পোষ্ট পার হয়ে আবার টমটমে উঠে।
পটিয়া গিয়ে কাজ করার জন্য কে সহযোগিতা করছে এমন প্রশ্নে তারা জানায়, স্থানীয় কিছু দালাল এবং পুরাতন রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে তারা ওখানে গিয়ে কাজ করছে। এছাড়া শুধু পটিয়া নয় রোহিঙ্গারা এখন দখল করছে কক্সবাজার শহরের শ্রমবাজার।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, টেকনাফ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক এবং টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে ১০ টির মত চেপ পোষ্ট রয়েছে। ওসব চেক পোষ্টে মাদক ও চোরা চালান বন্ধ্যের পাশাপাশি অবৈধভাবে শহরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা রোহিঙ্গাদের আটকানো হয়। দৈনিক শতাধিক রোহিঙ্গাকে সনাক্ত করে পুনরায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাটানো হয়। এর পরেও রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ডুকে পড়ছে কক্সবাজার শহর সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এ বিষয়ে প্রশাসন নিশ্চিত না করলেও নানা সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ আগষ্ট থেকে ১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার শহর সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রবেশ করেছে। তাদের বেশিরভাগই পুরাতন রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় কিছু দালালদের মাধ্যেমে এ কাজ করেছে। এদিকে যতই দিন গড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা ততই দক্ষ হয়ে উঠছে স্থানীয় ভাষার উপরে। এছাড়া তাদের সাথে স্থানীয়দের ভাষা অনেকটা মিল রয়েছে। অবৈধভাবে যাতায়তের সুবিধার্থে অনেক রোহিঙ্গা কম্পিউটার থেকে ভূয়া জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরী করেছে।
ওই পরিচয় পত্র দেখিয়ে পার হচ্ছে চেক পোষ্ট। কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরী ভূয়া পরিচয় পত্র তাৎক্ষনিক প্রমান কারার সুযোগ না থাকাকে’ই কাজে লাগাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এছাড়া রোহিঙ্গা নারীরা খুব সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে স্থানীয় নারীদের মত পোষাক পরায়। উখিয়া-টেকনাফের বেশিরভাগ স্থানীয় নারীরা বোরকা ও নেকাপ পরে। এদিকে রোহিঙ্গা নারীরাও বোরকা ও নেকাপ পরে। এতে বুঝা যায়না কোনটা রোহিঙ্গা নারী কোনটি স্থানীয়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সরকারী কলেজের অধ্যাপক সাইফুর রহমান জানান, মানবিক কারনে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাই বলে বাংলাদেশের ক্ষতি হোক এটা মেনে নেওয়া যায়না। এসব রোহিঙ্গা দেশের ভিতরে ডুকে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে। এছাড়া রোহিঙ্গারা দখল করছে শ্রমবাজার। এই জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাদের আরো সচেতন হওয়া দরকার যাতে করে রোহিঙ্গা অবৈধভাবে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে।
কক্সবাজার আদালতের এডভোকেট মহিউদ্দিন জানান, দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ঠেকানো জরুরী হয়ে পড়েছে। এসব রোহিঙ্গারা মাদক পাচার থেকে শুরু করে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে। ফলে আইন-শৃংখলা নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় ভয়াবহ আকার ধারন করবে। তখন আর কিছুই করার থাকবেনা।
এ ব্যাপারে টেকনাফ ২ বিজিবি’র অধিনায়ক আসাদুজ জামান চৌধুরী জানান, টেকনাফ থেকে কক্সবাজার শহরের ২ টি সড়কে বেশকিছু চেক পোষ্ট’এর মধ্যে বিজিরি’র রয়েছে ৫ টি চেক পোষ্ট। বাকীগুলো সেনাবাহিনী ও পুলিশের। এই চেক পোষ্ট গুলো মাদক ও চোরা চালান বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বরাবরেই সচেতন রয়েছে অবৈধ যাতায়ত ঠেকাতে। জোর দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পের বাহিরে যেতে না পারে। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার
পাঠকের মতামত: