ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

কুতুবদিয়ায় ভাঙা বেড়িবাঁধের সংস্কারকাজে ধীরগতি

a89b5cd73c4563af7590622c14338b3b-9নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :::

গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র আঘাতে কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার প্রায় ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়। সরকার জরুরি ভিত্তিতে ওই ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু এ পর্যন্ত গত ৯ মাসে ভাঙা বাঁধের অর্ধেক কাজ হয়নি। এ কারণে উপকূলের প্রায় ২ লাখ মানুষ আতঙ্কে আছে।
স্থানীয় লোকজনের ধারণা, আগামী ৩০ এপ্রিলের আগে ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কার না হলে বরাদ্দের পুরো টাকাই জলে যাবে।
গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার সমুদ্র উপকূলের কাহারপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় আধা কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে সৈকতে মিশে গেছে। বিলীন বাঁধের ওপর দিয়ে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে পাশের গ্রামের ১০-১২টি ঘরবাড়ি।
কাহারপাড়ার বৃদ্ধ সৈয়দ নুর (৮০) ও নুর আলম (৭৫) বলেন, গত বছরের ২৫ মের ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে এই গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি সাগরে বিলীন হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ) ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কার না হলে আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের হাজারো ঘরবাড়ি সাগরে তলিয়ে যাবে। কারণ, এপ্রিল থেকেই টানা কয়েক মাস উপকূলে ঝড়–জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়।
এই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজের ঠিকাদার খুরশেদ আলম বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য আশপাশে কোথাও মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। দূর থেকে মাটি কিনে আনার বরাদ্দও প্রকল্পে রাখা হয়নি। তাই কাজে বিলম্ব হচ্ছে।
তিনি বলেন, গ্রামের লোকজনের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন মাটি কেনার জন্য আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। টাকা পেলে বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ শুরু হবে।
এই কাহারপাড়ার উত্তর ও পশ্চিম পাশের গ্রাম সাইটপাড়া ও কিরণপাড়ারও দেখা গেছে একই দুরবস্থা।
সাইটপাড়ার জেলে আবুল হোসেন বলেন, রোয়ানুর আঘাতে এই গ্রামের ৮২টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। এখন আরও ৩০টি ঘর ঝুঁকিতে পড়েছে। অথচ বেড়িবাঁধ সংস্কারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
কিরণপাড়ার ব্যবসায়ী জাফর আলম বলেন, রোয়ানুর জলোচ্ছ্বাসে একটি মৎস্যখামার বিলীন হয়ে তাঁর ১৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গিয়েছিল। এখন বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় তিনি মৎস্যখামারটি নির্মাণ করতে পারছেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার উত্তর ধুরুং, কৈয়ারবিল ও আলীআকবরডেইল ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কার ছাড়া পড়ে আছে। কিছু কাজে কাদামাটির পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে বালু। বাঁধের উচ্চতাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম রাখা হচ্ছে।
উত্তর ধুরুং ইউপি চেয়ারম্যান আ স ম শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, এপ্রিলের আগে পুরোপুরিভাবে বেড়িবাঁধ সংস্কার না হলে নতুন করে তৈরি বাঁধগুলোও সাগরে তলিয়ে যাবে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে এই উপজেলায় অন্তত ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, উপজেলার প্রধান সমস্যা এখন ভাঙা বেড়িবাঁধ। এপ্রিলের আগে যে কোনোভাবে ভাঙা বাঁধের সংস্কার কাজ শেষ করার জন্য পাউবো ও ঠিকাদারদের তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্ব পালনকারী পাউবো বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত এই উপজেলার প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পৃথক সাতটি প্যাকেজে বেড়িবাঁধের সংস্কারকাজ চলছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা আছে। তিনি আরও জানান, মাটি–সংকটের কারণে কয়েকটি অংশে বেড়িবাঁধের সংস্কারকাজ শুরু করা যাচ্ছে না। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক সরেজমিনে এই পরিস্থিতি দেখেছেন। মাটি কেনার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় টাকাও বরাদ্দ দিয়েছেন। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে কাজ শেষ হবে।

পাঠকের মতামত: