ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

করোনা আতংকে উখিয়ায় বাসর রাতের স্বপ্নও চুরমার

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া ::
সর্বত্র তছনছ করে দিচ্ছে করোনা ভাইরাস আতংক। কি সামাজিক কি পারিবারিক জীবন সবকিছইু যেন ওলট পালট করে দিচ্ছে করোনা। এমনকি করোনা আতংক বিয়ের পিঁড়িতে পর্যন্ত হানা দিচ্ছে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা উখিয়ায়। সেখানে বৃহষ্পতিবার মধ্যরাতে হানা দিয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিয়ের পিঁড়ি থেকেই বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন প্রবাসী বর ও নববধূ কে।
এলাকায় এমন ঘটনাটি নিয়ে করোনা ভাইরাসের ‘নির্মমতা’ যেমনি প্রকাশ পেয়েছে তেমনি আবার তোলপাড়েরও সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঘটনার বিবরণ দিয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নিকারুজ্জামান বলেন-‘ কিছুক্ষণ পরেই বর-বধূ ঘরে ফিরে বাসর রাতের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন আমাকে অত্যন্ত নির্মমতার সাথে চুরমার করে দিতে হয়েছে। এমন কাজটিতে আমিও মনে কষ্ট পেয়েছি। তা সত্বেও জাতির স্বার্থে করতে হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ডেইল পাড়া গ্রামের এক প্রবাসী যুবক ঘরে ফিরেই মাত্র কয়েকদিনের মাথায় বসেন বিয়ের আসরে। আগেই পাত্রী ঠিক করা ছিল। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর অন্তত ১৪ দিন তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও তা অমান্য করেই ধুমধাম বিয়ের আয়োজন করা হয়।
বিদেশ ফেরত পাত্রের বিয়ে বলে কথা। বিয়ে অনুষ্টানও ছিল বেশ জমকালো। এমন বিয়ে অনুষ্টানের খবর পেয়ে ইউএনও সাথে পুলিশ নিয়ে পৌঁছে যান অনুষ্টানস্থলে। তিনি গিয়ে দেখেন, অতিথিদের খাবার-দাবার পর্ব শেষ। এমনকি কাজী বিয়েও পড়িয়ে দিয়েছেন। এবার নববধূকে নিয়ে বরের ঘরে ফেরার পালা। বরের হাতেও সময় কম। মধ্য প্রাচ্যের করোনা আক্রান্ত একটি দেশে তিনি চাকরি করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই আবার ফিরে যাবেন। বাসর ঘরে বসার সুযোগ না দিয়েই ইউএনও তাদের থামালেন। এরপর গ্রামের সর্দ্দার ডেকে বসলেন বিষয়টি ফয়সালা করতে। শেষ পর্যন্ত কনে পক্ষ মুচলেখা দিয়ে নিশ্চিত করলেন তাদের কনেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের ঘরে রাখবেন। অপরদিকে বর পক্ষও অনুরুপ সিদ্ধান্ত জানালেন তাকে (বর) দুই সপ্তাহ যাবত ঘরে কোয়ারাইন্টানে রাখা হবে।
প্রসঙ্গত উখিয়া উপজেলায় গতকাল পর্যন্ত ২৯ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তি হোম কোয়ারাইন্টাইনে রয়েছেন বলে ইউএনও জানিয়েছেন। সেই সাথে রোহিঙ্গা শিবিরে একজন অষ্ট্রেলিয়া ফেরত রোহিঙ্গাও শিবিরের একটি হাসপাতালে কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন বলে জানান তিনি। তা ছাড়াও এমএসএফ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার বালুখালী ক্যাম্পের গাড়ি চালক নেপাল সেন ভারত থেকে এসেই তিনি যথারীতি গাড়ি চালানো শুরু করে দেন।
গত ১২ মার্চ নেপাল সেন ভারত থেকে এসে কোয়ারাইন্টানে না থেকে সোজা গাড়িতে উঠেন। বিষয়টি নিয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গতকালই নাকি সংস্থার লোকজন নেপালকে আপাতত অফিসে যেতে বারণ করে দিয়েছে-জানিয়েছেন নেপাল সেন।

পাঠকের মতামত: