অনলাইন ডেস্ক ::
কক্সবাজার সরকারি কলেজের বিরোধপূর্ণ জমিতে রাস্তা নির্মাণ নিয়ে জেলা প্রশাসকের আয়োজিত বৈঠকে কলেজ অধ্যক্ষ এবং কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) সাইমুম সরওয়ার কমল।
কলেজের অপ্রীতিকর ঘটনার সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসন আয়োজিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী এবং সদর ইউএনও মো. নোমান হোসেন প্রিন্সের কথাকাটাকাটি হয়। কমল এসময় দু’জনকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের বিরোধপূর্ণ জমিতে রাস্তা নির্মাণ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছিল। এতে বিতর্কিত এই রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
এই সমস্যার সমাধান নিয়ে শনিবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা, কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষকমণ্ডলী।
সভার শুরুতে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে সবার মতামত গ্রহণ করেন।
এসময় কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, কলেজের উন্নয়নকাজ হলে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। কাজ যেই করুক না কেন কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
তিনি বলেন, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য গত ১১ মার্চ কলেজ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে কলেজের বিরোধপূর্ণ জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের জন্য মাটি ভরাট শুরু করা হয়। রাস্তা হোক সেটা কলেজ কর্তৃপক্ষও চায়। কিন্তু তা হতে হবে পরিকল্পিত।
কলেজ অধ্যক্ষ জানান, সেই লক্ষ্যে কলেজের শিক্ষক- কর্মচারীর ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি পরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণের নকশা তৈরি করা হয়েছে যা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের মাস্টার প্ল্যানে রয়েছে।
এই নকশা অনুযায়ী রাস্তা নির্মাণ করার পক্ষে তিনি জোর দিয়ে বলেন, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী রাস্তা হলে যেমন সৌন্দর্যমণ্ডিত হবে, তেমনি কলেজের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে।
অধ্যক্ষের বক্তব্যের পরপরই কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, বাংলাদেশের কোথাও এমপির দেয়া প্রকল্প বন্ধ করা হয়না। এই প্রকল্পের কাজটি বন্ধ করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা হয়েছে। নিরীহ লোকদের আটক করা হয়েছে। কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ভেবে প্রকল্পটি দেয়া হয়। রাস্তাটি নির্মাণ করা হলে কলেজের বেহাত হওয়া জমি উদ্ধার সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, জনৈক এফাজ উল্লাহর জমির কিছু অংশ এই রাস্তায় নেয়া হয়েছে। এতে এফাজ উল্লাহর কিছু সুবিধা হলেও কলেজের সুবিধা বেশি হবে। যদি নির্মাণাধীন রাস্তাটি করা হতো তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা সেই দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতো।
কমল বলেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষের সব তথ্য জানা আছে। আর কলেজের কিছু শিক্ষক আগে যারা ছাত্রশিবির করতেন তারা এই রাস্তাটির বিরোধিতা করছেন। তারা ছাত্রলীগকে ভূমি সন্ত্রাসী বলছে। কলেজের দুই শিক্ষক আমার ছোট বোন কাবেরীকে কলেজে নিয়ে আসেন যাতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাধা দেয়া হয়। আর আমার এই বোন কিভাবে রাজনীতিতে এসেছে এবং রাজনীতি করছে তা আমার জানা আছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কলেজের শিক্ষকরা সাংবাদিকদের আমার বিরুদ্ধে তথ্য দিয়েছেন। অধ্যক্ষের কথামতো সাংবাদিকরা ছাত্রলীগকে ঘায়েল করেছে, তাদের সন্ত্রাসী বলা হয়েছে।
এই জন্য অধ্যক্ষ একেএম ফজলুল করিম চৌধুরীকে ভুগতে হবে বলে হুমকি দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য।
তিনি আরো বলেন, ‘সদর ইউএনও নোমান হোসেন প্রিন্স কলেজের রাস্তার প্রকল্প বন্ধ করে দিয়ে জামায়াত-বিএনপির পক্ষ থেকে বাহাবা নিচ্ছেন। তার ফেসবুকে সব বন্ধু বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। আর তারাই ছাত্রলীগকে হেয় করে স্ট্যাটাস দেয়।’
এসময় সদর ইউএনও নোমান হোসেন প্রিন্সকে জামায়াত-বিএনপির লবিস্ট বলে হুমকি দেন কমল।
প্রতিবাদ করে ইউএনও বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য আপনি আমাকে প্রত্যেক্ষকভাবে অনেকবার হুমকি দিয়েছেন। জামায়াত-বিএনপির অজুহাত দিয়ে যে হুমকি দিয়েছেন তা প্রত্যাহার করুন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের নীতি-নৈতিকতা মেনে চাকুরি করছি। সরকারের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে আমাদের কাজ। কলেজের যে রাস্তার প্রকল্প এতে কোনো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম প্রকল্প কমিটিতে নেই। তাই ছাত্রলীগকে এখানে জড়ানো উচিত নয়।’
ইউএনও বলেন, কলেজের এই জায়গাটি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। তাই বিরোধপূর্ণ জমিতে নির্মাণাধীন রাস্তার প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়েছে যা সরকারের বিধি-নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, যা করা হোক কলেজের স্বার্থ বিবেচনায় করতে হবে। কলেজে পরিকল্পিত রাস্তা হলে সুবিধা হবে। তা না হলে অন্যরা প্রশ্রয় পাবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, এমপি, কলেজ কর্তৃপক্ষ, ইউএনও এবং প্রকল্প কর্মকর্তা সমন্বয় করে কাজ করলে এমন সমস্যা হতো না। আগামীতে সমন্বয় করে কাজ করলে এমন সমস্যা হবে না।
সরকারি প্রকৌশলী জিপি মোহাম্মদ ইসহাক জানান, আদালতের স্থিতাবস্থা থাকার নির্দেশ উপেক্ষা করে রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না।
এসময় কমল জেলা প্রশাসককে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আটক শ্রমিকদের ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আর শেখ রাসেল নামে সড়ডের কাজ যাতে বন্ধ না হয়।
জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, এটি শ্রমিকদের ছেড়ে দেয়ার বৈঠক নয়। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কোনো সদস্যের নামে সড়ক বা কোনো স্থাপনা হলে পূর্ব অনুমতি লাগে। যেহেতু এই সড়ক শেখ রাসেলের নামে অনুমতি নেয়া হয়নি, সেহেতু অনুমতি না নেয়ার আগে শেখ রাসেল সড়ক বলা উচিত হবে না।
বৈঠকে রাস্তা করার পক্ষে একমাত্র মতামত প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য কমল। আর বাকি সবাই এই রাস্তাটি করার পক্ষে মতামত দেননি। শেষ পর্যন্ত সভায় ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাস্তা নির্মাণের কাজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সুত্র: পরিবর্তন
পাঠকের মতামত: