ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার বনাঞ্চলের জমি নষ্ট করে চলছে শতাধিক অবৈধ ইটভাটা

জেলায় পরিবেশ অধিদরের জরিপ তালিকায় ১৩৩ ইটভাটার…

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার–টেকনাফ সড়ক ঘেঁষে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের মধ্যম খুনিয়াপালং এলাকায় অবস্থিত ইটভাটা মেসার্স এসএসবি ব্রিক। এটি স্থাপন করতে গিয়ে নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি। নিয়ম না থাকা সত্বেও গড়ে তোলা হয়েছে বনের পাশে।

মেসার্স এসএসবি ব্রিকের মত কক্সবাজার জেলায় শতাধিক পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে বনের কাঠ।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলায় সম্প্রতি জরিপ চালিয়ে ১৩৩ টি ইটভাটার তালিকা তৈরি করে পরিবেশ অধিদপ্তর। তালিকার বাইরেও অন্তত ৫০ টি ইটভাটা রয়েছে। ১৩৩ টি ইটভাটার মধ্যে প্রায় ১০০টি ইটভাটারই কোন ধরণের পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। আবার অনেক গুলোর বছরের পর বছর নবায়ন করা হয়নি। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চলছে এসব ইটভাটা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইটভাটায় কয়লা পুড়ানোর কথা বললেও মূলত রাতের অন্ধকারে গোপনে চুল্লিতে কাঠ ঢুকানো হয়। এসব কাঠ সংগ্রহ করা হয় পাশর্^বর্তী পাহাড়ি এলাকা থেকে। কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে উজাড় হয়ে যাচ্ছে সামাজিক বনায়নও। এসএসবি ইটভাটার ব্যবস্থাপক মো. আবু তাহেরের সাথে কথা হ

লে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে সকল দপ্তরের ছাড়পত্র ও নিবন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেন ইটভাটার ব্যবস্থাপক আবু তাহের। কিন্তু কোন ধরণের বৈধ কাগজ তিনি এ প্রতিবেদককে দেখাতে পারেননি।
এসএসবি ইটভাটার মালিক মোস্তাক আহমদের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বৈধ কি অবৈধ সেটা আপনি দেখার কে?
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রমতে, সম্প্রতি পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন সাতটি ইটভাটার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এছাড়াও রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ১০টি ইটভাটার বিরুদ্ধে উচ্চআদালতে রীট মামলা করে পরিবেশ আইনবিদ সংগঠন (বেলা)। এই ১০টিসহ পরিবেশ অধিদপ্তর ১১টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের যে দশটি ইটভাটায় ইট উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়, সেগুলোতে নির্দেশনা অমান্য করে ইট উৎপাদন চালু রয়েছে। এছাড়াও পরিবেশগত ছাড়পত্র বিহীন যত্রতত্র বিদ্যালয়, এলজিইডি সড়ক, ফসলী জমি ও বনের পাশে ইটভাটা গড়ে উঠায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আর বনের কাঠ ধ্বংসের পাশাপাশি সামাজিক বনায়নও উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, ইটভাটার কারণে বিশেষ করে বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কিছু ইটভাটা কয়লা পোড়ানোর কথা বললেও তারাও গোপনে কাঠ পুড়াচ্ছে। ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, সম্প্রতি মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে অবৈধ ইটভাটাগুলো তালিকা করা হয়। বর্তমানেও চলমান। এখন পর্যায়ক্রমে ইটভাটা গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, অবৈধ ইটভাটা গুলোর মালিককে নোটিশ করা হচ্ছে। এবং চট্টগ্রাম কার্যালয়ে জরিমানার জন্য পাঠানো হচ্ছে। কোন ইটভাটা পরিবেশগতভাবে ছাড়পত্র পাওয়ার যোগ্য না হলে সেগুলো ধ্বংস করে দেয়া হবে। পরে অবৈধ ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশের ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে।
এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনও সম্প্রতি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করেছে। গত বুধবার টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নে তিনটি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় অনুমতি ও ছাত্রপত্র না থাকায় তিনটি ইটভাটার মালিক পক্ষ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অভিযান পরিচালনা করেন টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রণয় কুমার চাকমা। তিনি বলেন, অনুমোদনবিহীন এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পাঠকের মতামত: