শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ২৪ আগস্ট ॥
অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়। একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা ঘটে আসলেও এসব বন্ধের যেন কেউ নেই। এ অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাশিয়ারসহ তিনটি পদে একই সাথে দায়িত্বপালনকারী কর্মচারী আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্ণীতির তদন্ত চলছে।
কম্পিউটার অপারেটর আসাদুজ্জামান একাধারে কম্পিউটার অপারেটরের পাশাপাশি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অফিসে ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। সরকারী জনগুরুত্বপূর্ণ অফিসের তিনটি পদে একজন ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি সরকারী কর্মচারী হয়ে গোপনে রাজনীতি ও ঠিকাদারি কাজে জড়িত রয়েছেন তিনি। বছরের পর বছর ধরে এধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নিরবতায় জনমনে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।
অভিযোগ উঠেছে,চাকুরীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ওই কর্মচারী বেশ কয়েকজন স্থানীয় ঠিকাদারের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে ঠিকাদারী করে প্রতি বছর সরকারী কয়েক কোটি লোপাট করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ নিয়ে শহরের টেকপাড়া এলাকার মোঃ সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে প্রধান প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকাসহ বিভিন্ন দপ্তরে গত ২ জানুয়ারী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সুত্রে জানা গেছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সার্কেল কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম ইব্রাহীম একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়। তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী প্রকৌশলী আবু ফয়সাল বিষয়টি সরজমিন তদন্ত করছেন। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার অভিযাগও উঠেছে।
আরো জানা যায়, কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ২০০৩ সালের দিকে মোঃ আসাদুজ্জামান কম্পিউটার অপারেটর পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে এ অফিসের ক্যাশিয়ার বদলি জনিত কারণে পদটি শুন্য হয়ে পড়ায় লুপে নেন ক্যাশিয়ারের পদটিও। এরপর থেকে নিয়মিত অফিস না করেই সরকারী কর্মচারীর চাকুরীবিধি লঙ্গন করে অঘোষিত ঠিকাদারী ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
এই অফিসের বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে যৌথভাবে গভীর নলকুপ, স্যানিটেশন প্রকল্প ও বর্তমানে পিইডিপি প্রকল্পের আওতায় ওয়াশ ব্লক (সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সবুজ টয়লেট নির্মাণ) প্রকল্পের কাজ করেন। এছাড়াও অফিস কর্মচারীদের অবৈধভাবে বাসা বরাদ্দ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
অভিযোগে আরো প্রকাশ, কক্সবাজার জেলা অফিস, উপজেলা অফিসে নলকুপ মেকানিক ও কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ভাতার ভুঁয়া বিল ভাউচার তৈরি করে এবং কতিপয় ঠিকাদারের সাথে গোপন আতাঁতের মাধ্যমে সরকারী বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের সহযোগীতা দিচ্ছেন। এমনকি দু’জেলা অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকটা জিম্মি করে রেখেছেন তিনি।
একটি সুত্র জানান, ঢাকা প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) পদে রয়েছেন তার চাচা জামাল উদ্দিন মিয়া নামের এক ব্যক্তি। এই চাচার দাপট দেখিয়ে ওই দুইটি অফিসের কর্মচারীদের জিম্মি করে রেখেছে। তার চাচার কথাটি অত্যন্ত গৌরবের সাথে জনসম্মুখে প্রচার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে আসাদুজ্জামান।
অভিযুক্ত কম্পিউটার অপারেটর আসাদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এব্যাপারে কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই কর্মচারী আসাদুজ্জামানের পক্ষে সাফাই গেয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেন।
চট্টগ্রাম সার্কেল কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম ইব্রাহীম বলেন, হাইকোর্টের একটি রীট পিটিশনে আদেশে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় কম্পিউটার অপারেটর আসাদুজ্জামান তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে তদন্ত কমিটির গঠনের সত্যতা স্বীকার করেন তিনি।
পাঠকের মতামত: