আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার ::
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছেড়াকাঁথায় পরিনত হয়েছে। জাতীয়গুরুত্বপূর্ন উক্ত মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে খানা-খন্দক ছাড়াও দীর্ঘ দুই বছর ধরে ৯ টি পয়েন্টে ব্রীক সলিংয়ের ওপর দিয়েই চলছে যানবাহন। এর ফলে অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ ও ঝাঁকুনির ফলে যাত্রী-পর্যটকদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। কিন্তু এ নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ। সওজ কর্মকর্তারা বলেন, টেন্ডার আহ্বানের মধ্য দিয়ে উক্ত সড়কের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে, কিন্তু বাজেটের অভাবে উন্নয়ন বিলম্বিত হচ্ছে। গত বর্ষা মৌসুমে সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেবে যাওয়া থেকে শুরু করে পিচ ঢালাই উঠে যাবার কারণেই সড়কে খানাখন্দক সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সুত্র জানায়, সড়কের বেহাল দশার দীর্ঘ প্রায় দুইবছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ আদৌ কোন টেন্ডার আহ্বান করেনি সড়কের উন্নয়নে। সরকারকে এভাবে খরচের খাত দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে সওজের দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা। ঠিকাদার নির্বাচনেও প্রকৌশলীদের প্রত্যয়নের ওপর নির্ভরশীলতা থাকায় চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের উন্নয়ন বিলম্বিত হচ্ছে। এদিকে সড়ক দেবে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে প্রথম থেকেই সড়ক নির্মাণে প্রকৌশলীদের দায়িত্বহীনতা। ফলে সড়কের ভিত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন স্থানে দেবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। তবে ভুগতে হচ্ছে ওই এলাকার জনসাধারণসহ বিপুলসংখ্যক পর্যটককে। আরও অভিযোগ রয়েছে, দিনের পর দিন বিভিন্ন খাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ছোটখাটো বরাদ্দ নিলেও এক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের বরাদ্দ পেতে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। ফলে উন্নয়ন বিলম্বিত ও বিপর্যস্ত হচ্ছে পদক্ষেপ নেয়ার অভাবে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া – কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ -সহকারী প্রকৌশলী (এসও ) শহীদ উল্লাহ জানান, বর্ষায় রাস্তার বিভিন্ন স্থানে গর্ত হওয়ার কারণে ব্রীকসলিং করা হয়েছে। সড়কে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে পিচ ঢালাই করে সড়কের উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের ৯টি স্পটে রয়েছে ব্রীকসলিং। পঞ্চাশ ফুট থেকে ২শ’ ফুট দৈর্ঘ এসব ব্রীকসলিং করা সড়কে প্রতিনিয়ত হালকা-ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এ সড়কের দোহাজারী এলাকার একটি স্থানে, লোহাগাড়া এলাকার একটি স্থানে, আমিরাবাদ এলাকার তিনটি স্থানে, হারবাং এলাকার তিনটি স্থানে ও চকরিয়ার একটি স্থানে ১ থেকে ২শ’ ফুট দৈর্ঘের ইটসলিং সড়ক অতিক্রম করতে হয় যানবাহনের। ব্রীকসলিং এলাকাগুলো অতিক্রম করার সময় প্রবল ঝাঁকি খেতে হয় যাত্রীদের। বড় আকৃতির যানবাহনগুলোতে ঝাঁকি ততটা অনুভব করতে না পারলেও প্রাইভেট গাড়ির যাত্রী-পর্যটকরা নাকাল হয়ে বুঝতে পারেন সড়কের বেহালদশা।
এসব খানাখন্দকের ফলে যানবাহন ধীরগতি হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণও হচ্ছে। এসব কারণে কক্সবাজারমুখী পর্যটকদের মধ্যে চরম অনীহা ও বিরক্তি সৃষ্টি হচ্ছে বলে পরিবহন চালকরা জানিয়েছেন। খানা খন্দকে ভরা এ সড়কে ওভারটেকিংয়েও রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকি। উঁচুনীচু সড়কে দুটি গাড়ী ওভারটেকিংয়ের সময় সবাত্নক সতর্কতা অবলম্বন করলেও দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা অনেক বেশি। প্রতিদিনই বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট -বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে ছোট আকারের ফোর হুইলার যাত্রীবাহী গাড়িও বড় পরিবহনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। দোহাজারী ও কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হওয়াসহ দেবে গিয়েছিল। সাময়িক সময়ের জন্য এসব গর্ত ভরাট করে ব্রীকসলিংয়ের মাধ্যমে সড়কে যান চলাচল নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও অল্প কিছুদিনের মধ্যে সড়কের ওসব অংশ পিচ ঢালাইয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ ও সড়কের উন্নয়ন সম্পন্ন করা। তবে বর্ষা মৌসুমের আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুততার ভিত্তিতে সড়কের উন্নয়ন করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের নিয়মিত যাত্রী ও পরযটকর জানান, সড়কের প্রায় ৯টি পয়েন্টে ব্রীকসলিং থাকায় আড়াই ঘণ্টার গন্তব্যে পৌঁছাতে চারঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে। আর এতে নষ্ট হচ্ছে পর্যটক ও যাত্রীদের মুল্যবান কর্মঘন্টা। পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের সাথে সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংস্কার করা না হলে কক্সবাজারের পর্যটন অর্থনীতি হুমকির পড়তে পারে।
পাঠকের মতামত: