কক্সবাজার সরকারী কলেজের ম্যানেজমেন্ট (অনার্স) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী হাসিনা আকতা হত্যাকান্ড ধামাচাপা দিতে শক্তিশালী মহল ওঠেপড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। ৫ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন নিহত হাসিনার পরিবার।
তারা অভিযোগ করেন, পরিকল্পিত হত্যার পর ঘটনাটি ‘আতœহত্যা’ প্রমাণ করতে ঘাতকচক্র ওঠেপড়ে লেগেছে। ঘাতক ইয়াছিন নিজেকে একটি রাজনৈতিকদলের নেতা পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটের চেষ্টা করছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করতে জোর তদবির শুরু করেছে।
তাদের টার্গেট একটাই, যে কোনমূল্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুকূলে নেয়া। আর ঘাতকচক্রের বাঁচানোর নেপথ্যে শক্তিশালী একটিচক্র কাজ করছে বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
পরিবারের পক্ষে হাসিনার ভাই দেলোয়ার বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারী ইয়াসিনের সাথে হাসিনার বিয়ে হয়। ইয়াসিন আরাফাত শহরের বিলকিস মার্কেটস্থ সালমা এন্টারপ্রাইজ এর মালিক ও চৌফলদন্ডির মধ্যম মাইজপাড়ার মোস্তাক আহমদের ছেলে। বিয়ের ক’দিন যেতে না যেতেই দোকানের প্রয়োজনের কথা বলে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে স্বামী ইয়াসিন। আমাদের আর্থিক দৈন্যতায় দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় হাসিনাকে বেশ কয়েকবার মারধরও করে ইয়াসিন।
দোকানে আসা-যাওয়ার সুবাদে বিভিন্ন নারীর সাথে ইয়াসিনের অবৈধ সম্পর্ক হয়। বিয়ের পর হাসিনা এসব ঘটনা জেনে তার স্বামীকে ভুল পথ থেকে সরিয়ে আনতে অনেকবার চেষ্টা করে। কিন্তু স্বামী তাতে পাত্তা দেয়নি।
২৪ মার্চ বাংলাদেশ বনাম ভারতের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দিনও মেঝ ভাবির (স্বামী প্রবাসী) রুমে গিয়ে খেলা দেখে ইয়াছিন। সারারাত নিজ শয়নকক্ষে না আসায় ডাকতে গিয়ে তাকে (ঘাতক স্বামী ইয়াসিন) মেঝ ভাবির সাথে অপত্তিকর অবস্থায় দেখে হাসিনা। স্বামীর এমন পরকিয়ায় বাঁধা দেয়ায় হাসিনাকে অনেকবারই মারধর করে। যেসব ঘটনা খোদ শ্বশুরালয়ের সবাই জানেন।
সর্বশেষ ২৯ মার্চ একই ঘটনা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া বাঁধে। হত্যাকান্ডের দুই দিন আগেও বাড়ীর অন্যান্য সস্যদের সাথে ইয়াসিনের ঝগড়া হয়। ওই ঝগড়ার সুত্র ধরে নিজের কূকর্ম লুকাতে ২৯ মার্চ হাসিনাকে পরিকল্পিতভাকে হত্যা করে স্বামীসহ শ্বশুরালয়ের লোকজন।
পরিকল্পিত হত্যার পর ঘটনাটি ‘আতœহত্যা’ প্রমাণ করতে ঘরের চালের সাথে ঝুলিয়ে রাখে হাসিনার মৃতদেহ। ওই অবস্থা থেকেই উদ্ধার করে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে পুলিশ।
নিহত হাসিনার পরিবার দাবী করেন, পর্দানশীল, আদর্শ চরিত্রবান, মেধাবী ছাত্রী হাসিনাকে শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্রছাত্রী, বন্ধুমহল, এলাকার লোকজন ভাল হিসাবে সার্টিফাই করলেও ঘাতক স্বামীসহ শ্বশুরালয়ের লোকজন মৃত্যুর পর তার চরিত্রে কালিমা লেপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশের তালিকায় ‘পলাতক’ আসামীরা গত ১ এপ্রিল কথিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিয়সি নারী হাসিনার চরিত্র হননের চেষ্টা করেছে। ঘটনার সাত দিন পার হলেও কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি। পুলিশের তদন্ত নিয়েও সন্দেহ নিহতের পরিবারের।
নিহত হাসিনা কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল সংলগ্ন পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড নাপ্পাঞ্জাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল মোনাফের মেয়ে। যৌতুকের দাবী পূরণ না করা এবং স্বামীর লাম্পট্যের প্রতিবাদ করায় হত্যার শিকার হলো সরকারী কলেজের মেধাবী ছাত্রী হাসিনা।
এ ঘটনায় স্বামী ইয়াসিন আরাফাতকে প্রধান আসামী করে নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৩০ মার্চ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা নং-জিআর-৮৩/২০১৬। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলো- দেবর জাহেদুল ইসলাম, শ্বশুর মোস্তাক আহমদ, শ্বাশুড়ী হোসনে আরা বেগম ও জা রেবেকা বেগম। সংবাদ সম্মেলনে হাসিনার মা জুহুরা বেগম, ভাই জাকির হোসেন, জামাল হোসেন, পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহনেওয়াজ চৌধুরী প্রমুখ।
একই দাবীতে মঙ্গলবার বিকালে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছে নিহত কলেজ ছাত্রী হাসিনার পরিবার। জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন স্মারকলিপি আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেন এবং এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন বলে নিহতের স্বজনদের আশ্বস্ত করেন। এ সময় স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ওমর ছিদ্দিক লালু, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহনেওয়াজ চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেলিম সরওয়ার চৌধুরী, বদরুল কবির, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আবু আহমদ, রশিদ আনসারী, মো. ইয়াছিন, আরমান, হাফেজ আহমদসহ নিহতের পরিবারের স্বজনেরা।
পাঠকের মতামত: